পর্ন বাংলাদেশকে কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে?

পর্ন বাংলাদেশকে কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে?


রাহাত ঢাকার এক সুখ্যাতি-সম্পন্ন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর একজন ছাত্র। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে হওয়ায় পরিবার থেকে নানানভাবে সে অ্যাডভান্টেজ পেয়ে থাকে। প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস গিফট পায়। কখনো চাচা অ্যামেরিকা থেকে ট্যাব, খালা বার্থডে তে স্মার্টফোন, আর বাবা-মার দেওয়া ল্যাপটপ-নেট তো আছেই। তাই বর্তমান সমাজের অবস্থা অনুযায়ী রিয়েল ওয়ার্ড এর চেয়ে রাহাত ভার্চুয়াল ওয়ার্ড এ বেশী অ্যাক্টিভ। অবসর সময়গুলোতে যখন গেম খেলতে ইচ্ছা করেনা তখন সে হারিয়ে যায় পর্নের দুনিয়ায়। একদিন- দুদিন, ধীরে ধীরে হয়ে যায় পর্ন অ্যাডিক্ট। এখন গেম এর চেয়ে বেশী সময় সে পর্নের পেছনে ব্যয় করে। তার বাবামার কোন আইডিয়া নেই যে সে প্রতিদিন কতটা পর্নের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে।

.

এমন অসংখ্য রাহাত আছে আমাদের দেশে। আপনি যদি ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়া কোন বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করেন তার কতগুলো ফ্রেন্ড নিজের ট্যাব বা স্মার্টফোন ইউজ করে। তারা বলবে দুই-একজন ছাড়া কেউ বাদ নেই। বাংলাদেশে এ সম্পর্কিত রিসার্চ তেমন একটা হয়নি। এর মধ্যে ২০১২ সালে কয়েকটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর কিছু ছাত্রছাত্রীর উপর চালানো একটি সার্ভেতে দেখা যায় শতকরা ৭৬ জন শিক্ষার্থীর নিজের ফোন আছে। বাকিরা বাবামার ফোন ব্যবহার করে। এদের মধ্যে-

  •  ৮২ শতাংশ সুযোগ পেলে মোবাইলে পর্ন দেখে।
  •  ক্লাসে বসে পর্ন দেখে ৬২ শতাংশ।
  •  ৭৮ শতাংশ গড়ে ৮ ঘণ্টা মোবাইলে ব্যয় করে।
  •  ৪৩ শতাংশ প্রেম করার উদ্দেশ্যে মোবাইল ব্যবহার করে।

সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে, বেসরকারি এক হিসাবে দেখা যায়, গান/রিংটোন/ফটোকপির দোকানগুলোর মাধ্যমে দেশে দৈনিক ২.৫ কোটি টাকার পর্ন বিক্রি হচ্ছে[১]।

এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে এক মাসে গুগলে ‘পর্ন’ ওয়ার্ড টা সার্চ করা হয়েছে ০.৮ মিলিয়ন বার এরও বেশী। বিশ্বব্যাপী এ সংখ্যা হচ্ছে ৬১১ মিলিয়ন বার। সেক্স টার্ম টা সার্চ করা হয়েছে ২.২ মিলিয়ন বার। বিশ্বব্যাপী এটা করা হয়েছে ৫০০ মিলিয়ন বার[২]। অন্যান্য পর্নোগ্রাফিক ওয়ার্ড এর অবস্থাও অনেকটা এমন।

৩০ জুলাই ২০১৩, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা(BSS) পর্নোগ্রাফির উপর একটি রিপোর্ট পাবলিশ করে। এতে প্রকাশিত হয়, ঢাকার সাইবার ক্যাফেগুলো থেকে প্রতি মাসে বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা যে পরিমাণ পর্ন ডাউনলোড করে তার মূল্য ৩ কোটি টাকার মতো[৩]।

প্রতি বছর এ সমস্যা বেড়েই চলেছে। যতই নেটের স্পিড বাড়ছে ততোই পর্ন অ্যাডিক্টদের সংখ্যা বাড়ছে। পুরো সমাজটাই হয়ে যাচ্ছে সেক্সচুয়ালাইজড।সম্প্রতি আমাদের দেশের এক উদীয়মান মেইনস্ট্রিম অ্যাকট্রেস কোন এক টকশোতে স্বীকার করেছেন তিনি পর্ন দেখেন। বলার ভঙ্গীটা এমন ছিল যেন ব্যাপারটা খুবই মজার এবং দুধ-ভাত। শো এর যে হোস্ট ছিলেন তিনিও কিছুক্ষণ মজা নিলেন। ঐ পার্টে পর্ন দেখাটাকে ইন্ডিরেক্টলি প্রমোট করা হয়েছে। তার এই স্বীকারোক্তি আজ অসংখ্য মেয়েদের পর্ন দেখায় প্ররোচিত করবে।

স্কুল-কলেজ পড়ুয়া বেশীরভাগ ছেলেমেয়েরা এখনকার ইয়াং স্টারদের ফ্যান। এই বাচ্চাগুলো দুই-একজন সাহাবীর নামও ঠিকমতো বলতে পারেনা। অথচ তাদের প্রিয় স্টারের কয়টা এক্স গার্লফ্রেন্ড ছিল, তাদের পছন্দ কি সব বলে দিতে পারবে। সোশাল মিডিয়ায় তোলপাড় করা এই ইয়াং স্টাররা প্রতিনিয়ত সেক্সচুয়ালিটি কে উস্কে দিচ্ছে। দেখাচ্ছে পর্ন দেখা কোন ব্যাপার না, এটা এখন মৌলিক চাহিদা। এরা ঠিকমতোই জানে যে পর্নের ইফেক্ট কি! কিন্তু তারা চায়না আপনাকে সচেতন করতে। তারা চায় আপনাকে এন্টারটেইন করতে। এতে আপনি যদি পর্ন দেখার প্ররোচনা পান, এটা আপনার ব্যাপার। They don’t care if your brain changes or distroyes, they just care about the money.

রেফারেন্সঃ

[১] An investigative tv report by Farabi Hafiz ( https://m.youtube.com/watch?v=jUxXQB8PW7s)
[২] http://bartabangla.com/english/internet-porn-affinity-increasing-into-bangladeshi-youth/
[৩] http://archive.dhakatribune.com/long-form/2013/oct/28/let%E2%80%99s-talk-about-porn