সকল ব্লগ

Blog Image
প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ ০১

কোন একটি ভালো বা খারাপ কাজের মূলে থাকে একটি উদ্দেশ্য। আমরা যা করি কেন করি, ব্যাপারটা নিয়ে আপনি যদি ভাবেন তাহলে দেখবেন, এর পেছনে একটি উদ্দেশ্য ছিল, সেই উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে জন্ম নিয়েছিল কিছু চিন্তা এবং সেই চিন্তাগুলোই পরবর্তীতে পরিণত হয়েছিল কাজে। সুতরাং, আমরা যদি আমাদের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যের দিকে বেশি মনোযোগ দেই, তাহলে আমরা আমাদের কাজ সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হব। দেখেন, আপনি যখন কোন ব্যক্তির দিকে মনোযোগ দেন, তার সাথে আপনি তৎক্ষণাৎ একটি সম্পর্ক স্থাপন করেন। একইভাবে, আপনি যদি নিজের ওজন কমাতে চান, সেক্ষেত্রে খাবার বাছাই এবং গ্রহণের ক্ষেত্রে আপনি আরও সচেতন হবেন, যা আপনাকে একটি সুস্থ জীবন ধারণে সহায়তা করবে। অর্থাৎ আমাদের জীবনের যদি কোন লক্ষ্য না থাকে, অনিচ্ছাসত্ত্বেও, আমরা খুব সহজেই আগের আসক্তিতে ফিরে যেতে পারি।

এককথায়, লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যই হচ্ছে একটি কাজের প্রথম ধাপ। কিন্তু একটি উদ্দেশ্যকে কাজে রূপান্তর করার জন্য প্রয়োজন, -সেই উদ্দেশ্যের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া।

তাই আপনি নিজের উদ্দেশ্যগুলো লিখে এমন জায়গায় রেখে দিতে পারেন যা প্রতিদিন আপনার নজরে পড়বে। এতে করে পর্ন আসক্তি থেকে মুক্তির এ যাত্রা যদি কখনো কঠিনও হয়ে যায় সেক্ষেত্রে সেই লেখাগুলো আপনাকে গন্তব্যে পৌছাতে সাহায্য করবে।

নিচের প্রশ্নগুলো আপনাকে উদ্দেশ্য ঠিক করতে সাহায্য করবে:

১) আমি যে পরিবর্তনটা আমার জীবনে চাচ্ছি তা কি আমার জীবনে সুখ বা প্রশান্তি এনে দিবে?

২) আমি কি আমার নিজের, পরিবার, ক্যারিয়ার, বা বিশ্বাসের ভালোর জন্য যা করা প্রয়োজন তা করছি?

৩) আমি এই অ্যাডিকশন নিয়ে আরও সামনে আগাতে থাকলে এর পরিণতি কি হতে পারে?

সততার সাথে উপরের প্রশ্নগুলোর উওর দিন এবং জীবনে নেতিবাচক পরিবর্তনের পেছনে আপনার উদ্দেশ্য কি, তা ঠিক করুন। আপনার উদ্দেশ্যই আপনাকে আসক্তি থেকে মুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

Blog Image
প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ ০২

প্রতিদিনের একই রুটিনে জীবন যাপন করতে করতে একটা সময় আমরা হতাশ হয়ে যাই। সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো লাগে। একটা কাজকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা ভুলে যাই। এমন অবস্থা আমাদের মনে পর্ন দেখার এক অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফলে দেখা যায়, অনেকে সারাদিনের কাজ সেরে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে কার সাথে কথা না বলে সোজা রুমে ঢুকে দরজা আটকে দেয়। ধবল থেকে মুক্তির জন্য বেছে নেয় পর্নকে, যা তার অবসন্নতার সাথে যুক্ত করে হতাশা, বাড়িয়ে দেয় আসক্তির ঝোঁক।

এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের প্রয়োজন নিজেকে সময় দেওয়া। একটা নির্জন জায়গায়, যেখানে সচরাচর আপনি যান না, এমন কোথাও গিয়ে বসুন। অন্য সব চিন্তা বাদ দিয়ে ভাবুন, আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, মানুষ, যাদের আপনার সময় দেওয়া উচিত, তাদের নাম লিখুন। কারণ আপনার আসক্তি আপনাকে সেই মানুষগুলো থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে কিংবা আপনার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে ফেলছে। বেশিরভাগ সৈন্যরা যুদ্ধে যাবার সময় প্রিয়জনদের ছবি নিয়ে যায়। এই ছবিগুলো তাদের মনে করিয়ে দেয় যে তারা বাড়িতে ভালোবাসার মানুষগুলোকে রেখে এসেছে। তাদের কাছে আবার ফিরে যেতে হবে।

নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করেই আপনাকে পর্ন আসক্তি থেকে ফিরে আসতে হবে। পর্ন আসক্তি প্রতিনিয়ত পরিবার ধ্বংস করে দিচ্ছে। অ্যামেরিকায় প্রতি বছর যে পরিমাণ বিবাহবিচ্ছেদ হয় তার শতকরা ৫৬টির পেছনে পর্ন অ্যাডিকশন দায়ী। এখন চিন্তা করুন, কি হবে, যেদিন আপনার স্ত্রী জানতে পারবে যে আপনি অ্যাডিক্টেড।

পর্নোগ্রাফি থেকে পুরোপুরি মুক্তি লাভের জন্য এই ব্যাপারগুলো আপনাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিবে। তাই ব্যক্তিগত ডায়েরীতে এ পয়েন্টগুলো লিখে রাখাটা জরুরী। এছাড়াও অন্যান্য কিছু ভাল কাজের লিস্ট করতে পারেন।

লিস্ট করা এ কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমেও আপনি নিজেকে এ আসক্তি থেকে মুক্তির জন্য প্রস্তুত করতে পারেন।

Blog Image
প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ ০৩

পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্তির এ যাত্রার বিভিন্ন সময়ে আপনার অনুপ্রেরণা প্রয়োজন হবে, যদিও জীবনে সফল হওয়ার জন্য সবসময় অনুপ্রাণিত হওয়া জরুরী নয়। তাছাড়া জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে কেউই অনুপ্রেরণা অনুভব করে না। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য, জীবনের সকল উত্থান পতনের মধ্যেও আপনাকে সঠিক পথের উপর দণ্ডায়মান থাকতে হবে। চলার পথে স্পৃহা কাজ না করলেও দাঁতে উপর দাঁত চেপে ধরে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে। শুধুমাত্র অনুপ্রেরণার উপর নির্ভর করে জীবনের প্রতিটা কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুবই বিপদজনক, কারণ আপনার অন্তরে কোন প্রেরণার উৎস দ্বারা যে স্পৃহার প্রদীপটি প্রজ্বলিত হয়েছিল তা কখনো নিভু নিভু হয়ে জ্বলতে পারে, আবার কখনো হাওয়ায় সে প্রদীপ নিভেও যেতে পারে।

তারপরও, কি আপনাকে বেশি অনুপ্রেরণা দেয় তা নির্ধারণ করা দরকার, কারণ সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই আপনাকে সঠিক কাজ করতে সাহায্য করবে। তাই অনুপ্রেরণা দায়ক এমন উক্তি (হতে পারে কোন ব্যক্তির কথা বা বইয়ের শিরনাম), কাগজে মার্কার দিয়ে লিখে বা পিসি থেকে প্রিন্টআউট করে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন (নিজের ঘরে, গাড়িতে বা অফিসে), যাতে আপনার মাথায় কোন অশুভ চিন্তা ভর করার সাথে সাথেই সেখানে চোখ বুলাতে পারেন।

এ কাজটা করতে পারলে আশা করি অনেক উপকৃত হবেন।

(আমরা প্রায়ই এমন অনুপ্রেরণা দায়ক উক্তি বা সর্ট রিমাইন্ডার, ইমেজ আকারে পোস্ট করব, যাতে আপনারা প্রিন্ট করে ঘরে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন অথবা পিসি, মোবাইল বা ট্যাবে ওয়ালপেপার হিসেবেও সেট করে রাখতে পারেন।)

Blog Image
প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ ০৪

পর্নোগ্রাফি আসক্তি নিঃসন্দেহে একটি সমস্যা। আর এই সমস্যা জন্ম দেয় আরও নানান সমস্যার। প্রতিটা সমস্যা একসময় একত্রিত হয়ে এক বিরাট আকার ধারণ করতে পারে।

আপনি অবশ্যই চান না আপনার জীবনে এমনটা হোক। তাই পর্ন আসক্তি আপনার জীবনের লাগাম তার হাতে তুলে নেবার আগেই আপনাকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। চিনতে হবে এই সমস্যাকে এবং জানতে হবে এর ফলাফল কী?

পর্ন দ্বারা ঘটিত সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করার পর সেগুলোর নাম দিতে হবে এবং লিখে রাখতে হবে। ফলে আপনার অন্তরে এ ধারণা বদ্ধমূল হবে যে, সমস্যাগুলো আমাকে সমাধান করতেই হবে। কাজেই পর্ন থেকে মুক্তির এ যাত্রায় আপনি বারবার সমস্যাগুলো নিয়ে ভাববেন,- কী হবে যদি আমি আবার আগের সেই অভ্যাসে আবার ফিরে যাই? এই পদক্ষেপটি আপনার জন্য একটি প্রেরণার উৎস হিসেবেও কাজ করবে, কারণ একটা আসক্তির পরিণাম নিয়ে ভাবনা আপনার অন্তরে ভয় সঞ্চার করবে এবং চোখের সামনে তুলে ধরবে বাস্তবতা।

কেউ আপনার লেখা এ গোপন নোটগুলো খুঁজে পেতে পারে, এ চিন্তা মনে আনা যাবে না। আপনাকে একটা কথা মনে করিয়ে দেই, আপনি কিন্তু খুব ভালভাবেই জানেন যে কীভাবে একটা ব্যাপার গোপন রাখতে হয়। তা না হলে এতদিন ধরে পর্নোগ্রাফি আসক্তিতে জর্জরিত হওয়ার মত একটি বিষয়কে আপনি গোপন রাখতে পারতেন না। তাই ভয়ের কারণে কখনো সঠিক কাজটা করা থেকে বিরত থাকবেন না। এই ধাপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটা বাদ দেয়া যাবে না। আমাদের লেখা আর্টিকেল পড়ে আপনি যে জ্ঞান অর্জন করছেন তা ব্যক্তিগত জীবনে কাজে না লাগালে এ থেকে কোন ফায়দা আপনি পাবেন না।

দিনের পর দিনের পর্নে বুদ হয়ে থাকার ফলে আপনার জীবনে অবশ্যই কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ প্রভাবগুলো লিখে রাখা দরকার। হতে পারে আপনার যৌন চিন্তাধারা পরিবর্তন হয়ে গেছে, স্বাস্থ্য ,সম্পদ, সম্পর্ক, কাজ, সময় সবকিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব নিয়ে আপনি যখন ভাববেন আপনার পর্ন ছাড়ার ইচ্ছা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য আপনি দ্রুত কোন পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবেন।

এটাও মাথায় রাখবেন যে, এই আসক্তিতে ডুবে থাকতে থাকতে কোন বিব্রতকর অবস্থায় আপনার মৃত্যুর হতে পারে। এক বালক পর্ন আসক্ত ছিল। সে যেদিন মারা যায় তাকে একটি হোটেলের কামরায় নগ্ন অবস্থায় পাওয়া যায়, তার গার্লফ্রেন্ড হোটেলের রিসেপশনে একটি নোট রেখে যায়, সেখানে লেখা ছিল,-“আমার বয়ফ্রেন্ড পর্ন দেখা অবস্থায় জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে।”

আপনি অবশ্যই চান না আপনার বৌ, বাচ্চা, পরিবারের অন্যান্য সদস্য কিংবা বন্ধুরা আপনাকে এমন কোন বিব্রতকর অবস্থায় পাক। জীবনে এমনভাবে চলার চেষ্টা করুন যাতে আপনি মারা গেলেও মানুষ আপনার সম্পর্কে ভাল কথাগুলোই বলে।

Blog Image
প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ ০৫

লিখে রাখা পরিকল্পনা আসলেই কাজ করে। প্রতিদিন কিছু সময় এই পরিকল্পনা করার পেছনে ব্যয় করা উচিত। ধরুন, আজকের দিনে আপনার ৩ ঘণ্টা অবসর সময় আছে। এ সময়গুলোতে আপনি কি করবেন তার পরিকল্পনা করুন। নিজেকে কি কখনো প্রশ্ন করেছেন? আমি নিজের পছন্দের কোন বিষয়ে কেন দক্ষতা অর্জন করতে পারছি না? কেন আমি এতো আগে থেকে একটা কাজ শুরু করার পরও অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে আছি?

এর্ল নাইটিংগ্যাল বলেছেন,
“যদি কেউ টানা ৫ বছর একই বিষয়ে প্রতিদিন ১ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে, সে ঐ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করবে।”

চিন্তা করুন, প্রতিদিন ১ ঘণ্টা সময় কোন বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যয় করাটা আপনার জীবনে কতোটা পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। প্রতিনিয়ত আত্ম উন্নয়নের মাধ্যমে আপনি হয়ে উঠবেন আত্মবিশ্বাসী, যা আপনাকে যে কোন আসক্তি থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করবে। এমনকি জীবনের একটা সময় আপনি নিজের উন্নতি দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাবেন।

তাই জীবনের কোন ক্ষেত্রগুলোতে আপনি উন্নতি করতে চান তা ঠিক করুন। এ ক্ষেত্রগুলোর উপর নির্ভর করেই আপনাকে প্রতিটি দিনের পরিকল্পনা করতে হবে। আপনি হয়তো পরিবারের সদস্যদের সাথে মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান, একজন ভাল মুসলিম হতে চান কিংবা ক্যারিয়ারে সফল হতে চান বা অন্য কিছু। যে বিষয়গুলোতে আপনি দক্ষ হতে চাচ্ছেন সে সম্পর্কিত উপকরণ, যেমন: বই, ভিডিও লেকচার, ওয়েবসাইট কিংবা আর্টিকেল যা যা লাগে খুঁজে বের করুন। এরপরই আপনি শুরু করে দিতে পারেন জীবনে সফল হবার যাত্রা।

১) কিছু বইয়ের লিস্ট করুন। প্রতিদিন অন্তত ১ ঘণ্টা একটি বই পড়ার পেছনে সময় দিন।
২) প্রতিদিন অন্তত একটি ভিডিও লেকচার দেখুন।
৩) বই বা লেকচার থেকে জানা প্রয়োজনীয় কথা নোট করে রাখুন।
৪) নিজের স্ত্রী, বাবা-মা এবং প্রতিবেশীর সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য তাদের উপহার দিন।
৫) আত্মিক উন্নয়নের জন্য মসজিদে জামাতের সাথে নামায পড়ুন, ইসলামিক বই পড়ার অভ্যাস করুন, মসজিদের ইমাম এবং অন্যান্য ধার্মিক ব্যক্তিদের সাথে থাকার চেষ্টা করুন।

একটা বই পড়তে বা লেকচার দেখে শেষ করতে কত সময় লাগছে এটা বড় বিষয় না। বরং কাজগুলো প্রতিদিন সময়মত করতে পারাটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি অবশ্যই চান আপনার আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে। তাই বছরের পর বছর ধরে মানসিক যন্ত্রণা অনুভব করার চেয়ে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সঠিক পরিকল্পনা করার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়াই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়!

Blog Image
প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ ০৬

এই যাত্রায় সামনে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে, নিজের উন্নতির দিকেও খেয়াল রাখুন। আপনার অর্জিত প্রতিটি জ্ঞান জীবনে প্রয়োগ করুন। শুধু কথা বলা বা নিজের মনকে আশা দেওয়ার বদলে জ্ঞানকে এবার কাজে লাগাতে শিখুন। প্রতিদিন অনুশীলন করুন। সে সকল মানুষদের মত হবেন না যারা ক্ষণিকের জন্য অনুপ্রাণিত হয়, কোন কাজ না করে শুধু বলতে থাকে, ‘একদিন আমি কিছু একটা করে দেখাব’, কিন্তু সেই ‘একদিন’ এর দেখা কখনও পাওয়া যায় না। মার্ক টয়েন বলেন,

ব্যর্থতার পেছনে অনেক অজুহাত থাকে, কিন্তু ভাল কোন কারণ থাকতে পারে না।

এই ‘একদিন’ শব্দটা শুধুমাত্র কষ্টে ভারাক্রান্ত অন্তরে শান্তির পরশ বুলানোর জন্যই বার বার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আপনি চান এই আসক্তি থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে। তাই সেই লক্ষ্যে পৌঁছোবার জন্য আপনি আসক্তি থেকে যত দূরে সরে আসতে থাকবেন আপনার যৌন ক্ষুধা তত বৃদ্ধি পেতে থাকবে, কিন্তু নিজেকে আপনারই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর জ্ঞানকে যদি কাজে না লাগান, তবে প্রস্তুতি গ্রহণের এ সময়ে আপনি নিজের মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখতে পাবেন না।

Blog Image
প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ ০৭

‘করার চেয়ে বলাটা সহজ’ বলেই মনে হয়। আমিও আপনার সাথে কিছুটা একমত। ব্রায়ান ট্রেসি বলেছিলেন,

খারাপ অভ্যাস গঠন করা সহজ কিন্তু তা নিয়ে জীবন অতিবাহিত করা কঠিন।
ভালো অভ্যাস গঠন করা কঠিন কিন্তু তা নিয়ে জীবন অতিবাহিত করা সহজ।

আমরা সবাই ভাল অভ্যাস গড়তে চাই। একটি ভাল অভ্যাস গঠনের জন্য প্রথম প্রথম কিছুদিন কঠিন সময় পার করতে হলেও পরে তা একসময় আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়। তাছাড়া ভাল গড়ার অনেক উপকারিতা আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল- নিজের অন্তরে ভাল অনুভূতি জাগ্রত হয় এবং যে কোন কাজের ক্ষেত্রে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে।

এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল: কীভাবে ভাল অভ্যাস গড়া যায়? সহজ। যেভাবে দিনের পর দিন একই কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর মাধ্যমে খারাপ অভ্যাস গড়েছিলেন, সেভাবেই। আসুন, এবার ভাল অভ্যাস গড়ার কিছু উপায় শেখা যাক:

১) একবারে একটি করে ভাল অভ্যাস গড়তে হবে।

২) একবারে সব উজাড় করে ফেলতে হবে এমন না। ছোটখাটো কিছু দিয়ে শুরু করুন, যা সহজেই করা যায়; যেমন: প্রতিদিন সকালে নিজের বিছানা গোছান বা পড়ার টেবিলটা সাজিয়ে রাখা।

৩) জীবন পরিবর্তনকারী একটি সিদ্ধান্ত নিন।

৪) সিদ্ধান্তটি লিখে রাখুন এবং তা নিয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করুন। নতুন অভ্যাস গড়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব কাজে দেয়।

৫) কিছু রিমাইন্ডার সেট করুন এবং সেগুলো লিখে রাখুন।

৬) নতুন অভ্যাস সম্পর্কে বার বার মনে করিয়ে দেবার জন্য কাজে লাগতে পারে- ফোনের এলার্ম, দায়িত্ববান বন্ধুর কল, স্টিকি নোট বা ডায়েরি।

৭) খারাপ অভ্যাসের জায়গায় একটি ভাল অভ্যাস গড়ে ফেলতে পারলে ব্যাপারটা কতোটা আনন্দদায়ক হবে তা ভাবতে থাকুন।

৮) অনেক মানুষের ক্ষেত্রেই কল্পনাশক্তি একটি সমর্থক হিসেবে কাজ করে। আপনি যদি নিজেকে প্রবৃত্তির উপর ক্ষমতাবান একজন সফল ব্যক্তি হিসেবে কল্পনা করতে পারেন, তখন পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করাটা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে।

তাহলে এখন নতুন অভ্যাস গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ আপনার কাছে আছে। আপনি এখন চাইলেই সহজে আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন। মনে রাখবেন, সঠিক গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য আপনাকে এ যাত্রায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেতে হবে। বিমান যখন নিরাপদে, কোন সমস্যা ছাড়া উড্ডয়নের জন্য ভূমি ত্যাগ করে, বাকি যাত্রাটা তার জন্য সহজ হয়ে যায়।

সময়ের কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী বলেছিলেন,

চ্যাম্পিয়নরা জিমে তৈরি হয় না। চ্যাম্পিয়নরা তৈরি হয় তাদের অন্তরের একটি ইচ্ছা, একটি স্বপ্ন বা একটি কল্পনা থেকে। তাদের মধ্যে দক্ষতা এবং ইচ্ছা দুটোই থাকা উচিত। তবে ইচ্ছাটা দক্ষতার চেয়ে শক্তিশালী হতে হবে।

Blog Image
প্রস্তুতিমূলক ৭টি পদক্ষেপ

কে না চায় জীবনকে উপভোগ করতে,
আসক্তির কারাগার ভেঙে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে,
মুক্ত বাতাসে স্বচ্ছন্দে নিঃশ্বাস নিতে।

অথচ, কিছু মানুষ তাদের সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয় শুধু জীবনকে উপভোগ করা শুরু করবে এই ভেবে।

আপনি কি চান তাদের মতো হতে? যে পর্ন অ্যাডিকশন আপনার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে সেই অ্যাডিকশনের কাছে হার মেনে আপনি কি সারা জীবন অন্ধকারে ডুবে থাকতে চান?

অবশ্যই চান না। তাই পর্ন অ্যাডিকশন থেকে মুক্তির যাত্রা শুরু করতে হবে। আর এই যাত্রা শুরু করার আগে আপনাকে নিতে হবে কিছু প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ, যা পর্ন অ্যাডিকশন থেকে মুক্তির পথকে আরও প্রসারিত করবে।

এমন প্রস্তুতিমূলক ৭টি পদক্ষেপ হলঃ


  • ১) আপনার উদ্দেশ্যের দিকে মনোযোগ দিন।
  • ২) সঠিক কাজকে অগ্রাধিকার দিন।
  • ৩) প্রেরণার উৎসগুলোর একটি লিস্ট করুন।
  • ৪) জীবনে যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সেগুলোর নাম এবং প্রভাব লিখে রাখুন।
  • ৫) প্রতিটি দিনের পরিকল্পনা করুন।
  • ৬) জানুন এবং প্রয়োগ করুন।
  • ৭) নতুন অভ্যাস গড়ে তুলুন।

এই ৭টি প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ আপনি কীভাবে নিবেন এ নিয়ে ৭টি পোস্ট করা হবে। প্রতিটি পোস্টে এক একটি পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তখন ব্যাপারগুলো আরও স্পষ্ট হবে।

পর্ন অ্যাডিকশন একটি ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। অনেকে মারাত্মকভাবে আসক্ত হওয়ার পরও ভয় ও লজ্জার কারণে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা যে উপদেশগুলো দিব তা দ্বারা অনেক পর্ন অ্যাডিক্টরা উপকৃত হয়েছেন। আশা করি আপনারাও উপকৃত হবেন। ইনশা আল্লাহ। 

Blog Image
আমি পর্নকে ক্ষতিকর মনে করি না

আচ্ছা, আপনারা যারা প্রতিদিন অনেকটা সময় পর্ন দেখার পেছনে ব্যয় করেন, কিন্তু একে কোনো খারাপ কাজ মনে করেন না, নিজের ক্ষতি হচ্ছে এমনটাও বিশ্বাস করেন না, তাদের বলব,-

ধরুন, আপনি আপনার পরিবারের সাথে খুব সুন্দর একটা রিসোর্টে বেড়াতে গিয়েছেন। হোটেলে অন্যান্য সব সুবিধার সাথে হাই স্পিড ইন্টারনেটও আছে। বাহিরে অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ। নীল সাগর, আকাশ, নানান রঙের পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশে, সমুদ্রের পাড়ে মজার মজার সব খাবারের সমাহার। সবাই বাহিরের প্রকৃতি উপভোগ করছে। কিন্তু আপনি হোটেলে স্মার্টফোন হাতে নিয়ে বসে আছেন। বাসায় যে ইন্টারনেট স্পিডে পর্ন দেখতেন এখানকার স্পিড তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি।

এমন এক মুহূর্তে আপনার পরিবারের সবাই বাহিরের প্রকৃতি উপভোগ করার জন্য ডাক দিলে আপনি কি করবেন?

১) বাহিরে না গিয়ে হোটেলে একা থাকবেন, যাতে পর্ন দেখা যায়।
২) সবার সাথে বাহিরের প্রকৃতি উপভোগ করতে যাবেন।

পর্ন আসক্তদের নিয়ে আমাদের গত ৩ বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, আপনি ১ নং কাজটা করার সম্ভাবনাই বেশি। অর্থাৎ, বাহিরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার চেয়ে স্ক্রিনের কৃত্রিম সৌন্দর্য উপভোগ করাই আপনার কাছে তখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। (পর্ন আসক্তদের এমন আচরণের একটা কারণ হল- তারা সোশ্যাল অ্যানজায়েটিতে (social anxiety) ভুগে।)

একটু চিন্তা করে দেখুন, পর্নের কারণে সুন্দর এই রিসোর্টের মতো আপনি কি নিজের জীবনকে উপভোগ করা ভুলে যাচ্ছেন না? যে সময়টা আপনি বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলতেন বা পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারতেন পর্ন কি আপনার কাছ থেকে সেই সময়টা কেড়ে নিচ্ছে না?

আপনি কি জানেন, বিবাহিত পর্ন আসক্তদের অনেকেই স্ত্রীর সাথে যৌন মিলনের সময় উত্তেজনা অনুভব করে না। যদি জেনে থাকেন, তাহলে যে জিনিস পরিবার ও সমাজ থেকে আপনাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে, সে জিনিসটাকে আপনি কীভাবে নিরাপদ বলেন। এখনই সময়, আরেকবার ভেবে দেখুন।

#teamFAD

Blog Image
পর্ন আমাদের চরিত্র ধ্বংস করে

আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তাম তখন ইন্টারনেট কী জিনিস তা-ই ভালোভাবে বুঝতাম না। আর পর্ন তো বহুত দূরের কথা। তবে ক্লাসে মাঝেমাঝে কিছু ছেলেকে ফিসফিস করতে শুনতাম। কেমন যেন অশ্লীল সব আলাপে মেতে উঠতো তারা। পরিবারের নারী সদস্যদের নিয়ে সেক্সচুয়াল ফ্যান্টাসি। এর চেয়ে জঘন্য আর কী হতে পারে!

আমার মনে প্রায়ই প্রশ্ন জাগত- এসব গল্প ওরা বানায় কীভাবে? পরে একদিন তাদেরই কারও কাছে একটা চটি বই দেখেছিলাম। আচ্ছা, তাহলে এখান থেকেই অশ্লীল সব গল্পের সূত্রপাত। এই সেক্সচুয়াল ফ্যান্টাসি থেকে মায়ের বয়সী ক্লাসের ম্যাডাম পর্যন্ত রেহাই পায়নি।

কিছুদিন পর এক বন্ধু ক্লাসে ধরা খেল। এই, কী হয়েছে? কী হয়েছে? আরে কিছু না… অমুকে তমুক নায়িকার একটা নগ্ন ছবি এনেছিল। বইয়ের ভেতরে ছিল ছবিটা। ব্যাগের ভেতর থেকে বই বের করতেই টুপুস করে ছবিটা বেরিয়ে ফ্যানের বাতাসে উঠে ম্যাডামের পায়ের সামনে গিয়ে পড়ল। এরপর যা হবার তা-ই হলো। অভিভাবক ডাকা হয়েছিলো। সেদিন মনের ভেতরটা কেমন যেন করছিল। মেয়েদের নগ্ন ছবি পাওয়া যেতে পারে এমনটা আমি ভুলেও কখনো চিন্তা করিনি। নিজের অজান্তেই ঘটনাগুলো আমার অন্তরে রেখাপাত করতে থাকে। অবসরে নানান বাজে চিন্তা ভর করত। আমি ভুলে যেতাম আমার ক্রিকেট খেলার কথা। আড্ডা দিতে ভালো লাগত না। ছোটো ভাইয়ের সাথে দুস্টোমিও আর করা হতো না। আগে বৃষ্টি হলেই বাসা থেকে বেরিয়ে যেতাম, দুহাত মেলে বৃষ্টিতে ভিজতাম। সেই আমি বৃষ্টিও উপভোগ করা ভুগে গিয়েছিলাম। হারিয়ে গিয়েছিলাম অশ্লীল দুনিয়ায়। কল্পনার লাল-নীল অন্ধকারে।

যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি আমাদের দেশে তখন কেবল এমপি ফাইভ এলো। ক্লাসের শেষ বেঞ্চে টিফিন পিরিয়ডে জটলা পাকিয়ে থাকত ছেলেরা। কী যেন দেখত? একদিন আমিও উকি দিলাম। এ তো দেখি চটি গল্পেরই বাস্তব ভিডিও। অশ্লীল গল্প আর বইয়ে সীমাবদ্ধ নেই; গল্পের নায়ক নায়িকারা এখন নীল পর্দায়। ভিডিওর প্রতিটা সিন আমার অন্তরে দাগ ফেলে দিচ্ছিল। আমি অনুভব করতে পারছিলাম, আমার সুস্থ অন্তরটা কীভাবে অসুস্থতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। আসলে যখন কিছু পবিত্র থাকে তখন সেখানে হালকা অপবিত্রতার ছোঁয়াও শেলের মতো বিঁধে। আর আমরা তো দেখছিলাম পর্ন, দুনিয়ার চোখে দেখা যায় এমন সবচেয়ে জঘন্য জিনিস। অন্তরে এর প্রভাব কতোটা খারাপ হতে পারে তা বলে বোঝাবার মতো নয়। কারণ, যে একবার পর্ন আসক্ত হয়েছে সে পবিত্র অন্তর কী জিনিস তা আর সহজে অনুভব করতে পারে না। আর সুন্দর চরিত্র…

এর কথা আর না-ই বললাম।

(এক আসক্ত ভাইয়ের গল্প অবলম্বনে লেখা

Blog Image
পাপে অনুশোচনা

১) কিছুদিন আগে এক পর্নস্টারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এক ছেলে পোষ্ট দেয়। পোষ্টের সেই পর্নস্টারকে ফটোশপের কল্যাণে হিজাব পরানো হয়। আর টিপিকাল ক্যাপশন তো আছেই (যা এখানে লিখতে আমার রুচিতে বাধছে)।

এ ছেলে শুধু ছবিটা শেয়ার করেই ক্ষান্ত থাকেনি; বরং লিখেছে “তুমি মরে গিয়েছ তো কী হয়েছে? তোমার শত শত জিবি কালেকশন আছে আমার কাছে। আরও অনেক কিছু…” যারা এমন পোষ্ট প্রচার করে বেড়ায় তারা সুযোগ পেলে ধর্ষণ করেও ফেসবুকে গর্ববোধ করবে। এরা পর্নের পক্ষে ভুয়া সব রিসার্চ দেখায়। আজ পর্নের ইফেক্ট নিয়ে কথা বলা ট্যাবু হবার পেছনে এদের বিশাল ভূমিকা রয়েছে।

২) ঢাকার কোনো এক জায়গায় এক বিশেষ পর্ন ওয়েবসাইটের নামে রেস্ট্রুরেন্ট খোলা হয়েছে। লোগোটা পর্যন্ত বদলায়নি, এতোটাই নিমকহারাম এরা। একই ওয়েবসাইটের লোগোতে বানানো টি-শার্ট পর্যন্ত পড়ে এ প্রজন্মের কিছু ছেলেপেলেরা। এরা শুধু পাপ করে না। পাপের এজেন্ডা হিসেবে কাজ করে। অনুশোচনা নামক কোনো শব্দের সাথে এদের সম্পর্ক নেই।

এক ভাই সেই রেস্ট্রুরেন্টে গিয়েছিলেন শুধু সেখানকার ক্যাশিয়ার বা মালিককে কিছু কথা বলার জন্য। কিন্তু কী আর বলবে। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে সে তাজ্জব হয়ে গেছে। মানুষ এত লজ্জাহীন হয় কীভাবে!

৩) গত দুবছর আগে এক বাংলাদেশী ইউটিউবারকে দেখেছিলাম হাসি ঠাট্টার আড়ালে পর্নকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে। উদীয়মান এক মডেলকে দেখেছিলাম নিজের পর্ন দেখার কথা স্বীকার করতে। এখন তাদের অবস্থা কেমন আল্লাহই ভালো জানেন। আর এরাই কিনা আমাদের ছোটো ভাইবোনদের রোল মডেল।

এ ছাড়াও ফেসবুকে বিভিন্ন সময় আমরা নামকরা কিছু পর্নস্টারদের নিয়ে ট্রল বানাতে দেখি। এখানে কি নিশ্চুপে এদের প্রমোট করা হচ্ছে না? যারা পর্ন আসক্তি থেকে মুক্ত হতে চায়, পাপ নিয়ে অনুশোচনা বোধ করে তাদের জন্য কি এ ছবিগুলো ট্রিগার হিসেবে কাজ করছে না? আপনারা একটা ব্যাপার চিন্তা করে দেখুন, শয়তানের অনুসারীরা কিন্তু তাদের কাজকে ট্যাবু বানিয়ে রাখেনি। তারা তাদের দাওয়াত চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমরাই মানুষকে সৎ কাজের উপদেশ দিতে লজ্জা পাই। পরিবার ধ্বংসকারী এক আসক্তির ইফেক্ট নিয়ে কথা বলাকে ট্যাবু বানিয়ে রেখেছি। আফসোস! সত্যিই আফসোস!

Blog Image
সেক্স যখন স্ক্রিনেই উপভোগ্য…

সেক্স যখন স্ক্রিনেই উপভোগ্য, ভালবাসা নামক শব্দটাই তখন দুর্বোধ্য।

পর্ন দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের কাছে এর ভয়াবহতা বর্ণনা করার কোন প্রয়োজন হয় না। কারণ, তারা নিজেরাই এক একজন উদাহরণ হয়ে বসে আছেন। এখন মুক্তির পথ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু যে ক্ষতি তারা নিজেদের জীবনে করে ফেলেছে তা কাটিয়ে উঠতে হয়ত অনেক সময় লেগে যাবে।

যে ছেলেটি এখন পর্ন আসক্তি থেকে মুক্তির জন্য হাহাকার করছে সে-ই হয়ত কোনো এক সময় বলেছিল, বিয়ে করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। অথচ মুক্তির জন্য কোন সিদ্ধান্ত সে গ্রহণ করেনি। গায়ে হাওয়া লাগিয়ে পর্নের ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড এ ঘুরেছিল। আজ সে চাইলেও তার স্ত্রীকে মন থেকে ভালবাসতে পারে না। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে হারিয়ে যায় মোবাইলে। স্ত্রীর অসহায় মুখটা দেখার সময় তার নেই।

রাতের পর রাত তার স্ত্রী বিছানায় এপাশ ওপাশ করে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দেয়। কেঁদে বালিশ ভেজায়। কিন্তু স্বামী যে আজ বন্দী এক নির্দয় কারাগারে। স্ত্রীর চোখে আর সে ভালোবাসা খুঁজে পায় না। সে ভালোবাসা হাতড়ে বেড়ায় চার কোনা স্ক্রিনে, যা দিন শেষে কারণ হয়ে দাঁড়ায় সব হতাশা, দুশ্চিন্তা, অবসাদ আর স্ত্রীর সাথে আর ঝগড়ার।

আমি কোন গল্প বলছি না। এটা বাস্তব কাহিনী। অনেক দম্পতির জীবনেই এমনটা ঘটছে। অ্যামেরিকায় প্রতি বছর শতকরা ৫৬টি ডিভোর্সের একটি কারণ পর্ন। আমাদের দেশেও, বিশেষ করে ঢাকায় ডিভোর্সের হার ভয়াবহভাবে বাড়ছে। এখানে কি পর্নের প্রভাব থাকতে পারে না? অবশ্যই আছে, তবে পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই।

আপনারা নিজেরাই চিন্তা করুন, একজন ব্যক্তি বলছেন, তিনি বিয়ে করলেই পর্ন ছেড়ে দেবেন। অথচ বিয়ের আগে তিনি আসক্তি মোকাবেলার কোন পদক্ষেপই নেননি। আসক্তির তুঙ্গে থাকা অবস্থায় বিয়ে করলে সে দুই এক মাস পর আবার খালি ঘর পেয়ে পর্ন দেখা শুরু করা কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার হবে না। আমরা এমন বেশ কিছু বিবাহিত কেস পেয়েছি।

আসক্তি এত সহজ জিনিস নয়, ভাই। বিয়ে অবশ্যই আমাদের দৃষ্টির হেফাজত করে। এটি অবশ্যই পর্ন থেকে মুক্তির সবচেয়ে কার্যকরী উপায়গুলোর একটি। কিন্তু শুধুমাত্র তাদের জন্য, যারা নিজেরা এ আসক্তি থেকে মুক্ত হতে চায়। যারা শুধু বিয়ের উপর নির্ভর করে বসে থাকে না। বরং নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে প্রকৃত ভালোবাসা দিতে তারা আগে থেকেই এই আসক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরে আসার চেষ্টা করে। আসক্তিতে ডুবে থাকা ব্রেইন নিয়ে তারা বাসর ঘরে প্রবেশ করে না। কোন প্রকৃত পুরুষ এটা করতে পারে না।

উপরের কথাগুলো অনেকের জীবনের সাথেই মিলে যাবে। তারা প্লিজ আশাহত হবেন না। বড় মন নিয়ে শুধু এতটুকুই ভাবুন যে, আপনাদের ঘটনা অন্যদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখতে পারে। মুক্তির পথ অবশ্যই আছে। কথাগুলো আমরা তাদের জন্য শেয়ার করছি, যারা এখনও সচেতন হচ্ছে না, যারা গবেষণা থেকে প্রাপ্ত পর্নের ব্রেইন ইফেক্ট এর কথা শুনে, পর্ন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত SPECT স্ক্যান করা ব্রেইনের ছবি দেখে হাসির ইমোটিকন চাপে। মারাত্মক কোন ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আগেই যেন তারা ফিরে আসে, তাদের শেষ পরিণতি যেন ডিভোর্স না হয় এর জন্যই আমাদের এ প্রচেষ্টা।

Blog Image
আসক্তি নিয়ন্ত্রণ করুন
২০১৫ সালে ক্যানবেরা টাইমস্‌ এ একটি ঘটনা এসেছিল[১]। ২০ বছর বয়সী এক ছেলে তার অনলাইনের মেয়ে বন্ধুকে নিজের বাসায় আসার আমন্ত্রণ জানায়। বাসায় আসার পর এক মুহূর্তে সে মেয়েটিকে অমানবিকভাবে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে মেয়েটি এ মর্মান্তিক ঘটনার কথা বাসায় জানায়। ঘটনার দুই দিন পর ছেলেটিকে গ্রেফতার করা হয়। কোর্টে সে জাজকে নিজের ‘সেক্স আসক্তি’ বিবেচনায় নিয়ে বিচার করার আবেদন জানায়। কিন্তু এ অজুহাত প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে ৩ বছর জেল খাটতে হয়। কী হত যদি সে নিজেকে আসক্ত বলে প্রমাণ করতে পারত? যদি প্রমাণ করতে পারত যে তার যৌন বাসনা নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়, তবে কী তাকে ছেড়ে দেওয়া হত? একটি অসহায় মেয়েকে ধর্ষণ করার জন্য কী সে দায়ী থাকত না? অনেক মানুষ আছে যারা রাগলে অস্বাভাবিক আচরণ করে, গায়ে হাত তোলে; রাগের বসে সে যদি কাউকে খুন করে তাকে কী ক্ষমা করে দেওয়া হবে?
.
এখানে শেখার বিষয় হল- আপনি আসক্ত, এ ব্যাপারটার উপর নির্ভর করা যাবে না। আসক্তিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, যাতে আপনার দ্বারা এ ধরণের ঘটনা না ঘটে।
.
আবারও বলছি, পর্ণ ও মাস্টারবেশন আসক্তি খুব ভয়াবহ হতে পারে, তাই বলে যৌন অপরাধে জড়িত হয়ে নিজেকে আসক্ত প্রমাণ করার চেষ্টা করা বড় বোকামি হবে। এ প্রবণতা আপনাকে আরও জঘন্য অপরাধের দিকে ধাবিত করবে। হ্যাঁ, আমি জানি অনেকের জন্য এ ধরণের কাজ থেকে বিরত থাকা বেশ কষ্টকর। বিশেষজ্ঞদের মতে এ ধরণের আসক্তি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে[২]। তারপরও, আপনার কাজের জন্য আপনিই দায়ী। আপনি হয়তো অনুশোচনায় ভুগবেন, কাঁদবেন বা নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা করবেন এমন কাজ না করার, কিন্তু যার ক্ষতি আপনি করে ফেলেছেন তাকে তো আর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন না। তাই আসক্তি আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার আগেই আপনি আসক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
.
অনুবাদঃ #teamFAD
.
রেফাসেন্সঃ
[১] ] Inman, M., 2015, ‘Man blamed ‘sex addiction’ for rape of woman’, The Canberra Times, .
[২] Furedi, F., 2011, ‘Abandon all responsibility ye who are hooked on sex addiction’, The Australian, .
Blog Image
মুভি দেখলে কী সমস্যা?

দ্বীনের ছায়াতলে আসার আগে অনেক হলিউড মুভি দেখা হত। কখনো কমেডি, কখনো অ্যাকশন, রোমান্স, সাই-ফাই, আরও কত কি। এ মুভিগুলো থেকে ভাল জিনিস খুব কমই শেখা যায়। খানিকের বিনোদন আর সময় কাটানো ছাড়া তেমন কোন ফায়দা নেই। বরং বেশিরভাগ মুভিতেই থাকে পর্নের ডজন ডজন ট্রিগার। যেখানে নায়ক-নায়িকার অন্তরঙ্গ মূহুর্ত দেখানোর কোন প্রয়োজন নেই, সেখানেও অতিরঞ্জনের সাথে তা প্রদর্শিত হবে।

সফটকোর পর্নে ভরে গেছে এই ইন্ডাস্ট্রি। অশ্লীল গল্পের কোন বই বের হলে তো কথাই নেই, সেই বইয়ের গল্পকে স্ক্রিপ্ট বানিয়ে তাকে সচল আলোকচিত্রের রূপ না দেওয়া পর্যন্ত এই ইন্ডাস্ট্রির ডিরেক্টরদের যেন ঘুম নেই।

শুধু সফটকোর পর্ন বানিয়েই এরা ক্ষান্ত নেই। এদের আসল টার্গেট আপনাকে হার্ড-কোর পর্নের দিকে ধাবিত করা, যা আপনাকে মাস্টারবেট করতে বাধ্য করবে। যারা এখনো পর্ন অ্যাডিকশন নিয়ে স্ট্রাগল করছেন, কিন্তু মুভি দেখা ছাড়েননি, তারা একটু চিন্তা করলেই ব্যাপারটা বুঝেতে পারবেন।

জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর দিকে তাকান, এই মুভিগুলো কতবার আপনার জন্য পর্নের ট্রিগার হিসেবে কাজ করেছে? কত রাত আপনি মুভি দেখতে গিয়ে এমন সিনের মুখোমুখি হয়েছেন, যা আপনাকে পর্ন দেখতে বাধ্য করেছে, নষ্ট হয়েছে সেই রাতের ঘুম, পরের দিনের সকাল এবং সারাদিনের কাজের স্পৃহা।

একবার (তাদের মতে) এক সফল ব্যবসায়ীর জীবনী নিয়ে বানানো একটি মুভি দেখছিলাম। মুভিতে জর্ডান নামক এক লোক অ্যামেরিকার বাকি আট-দশটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের মতোই জীবন যাপন করত। কিন্তু তার অন্তরে জীবনে সফল হওয়ার চরম স্পৃহা কাজ করত। তাই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সে কোন এক ব্রোকারেজ ফার্মে জয়েন করে। সেখানে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের খেলা দেখে তার চোখ কপালে উঠে যায়। ফার্মের মালিক কীভাবে এতকিছু ম্যানেজ করেন? তার জীবনে এতো বড় সাফল্যের পেছনে রহস্যই বা কী? এসব প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। একদিন ফার্মের মালিকের সাথে বাহিরে লাঞ্চ করতে যায় সে। এ সুযোগে জিজ্ঞাস করে বসে,
স্যার! আপনার এ সফলতার পেছনে গোপন রহস্য কী?
মালিক: দেখ! ব্রোকার বিজনেসে সাকসেসফুল হওয়ার জন্য তোমার দুটো জিনিস লাগবে। প্রথমত, তোমাকে রিল্যাক্সড থাকতে হবে।
-আচ্ছা তুমি কি মাস্টারবেট কর? মালিক জিজ্ঞাস করলেন।
জর্ডান,- জি স্যার।
-সপ্তাহে কয়বার?
-এই… ৩-৪ বার।
-আমি কয়বার করি, জান?
-কয়বার?
-আমি প্রতিদিন ২ বার মাস্টারবেট করি। একবার সকালে ব্যায়াম করার পর, আরেকবার দুপুরের দিকে। একারণেই আমি এতো রিল্যাক্সড থাকি। আর দ্বিতীয় জিনিসটা হচ্ছে কোকেন। এটা আমাকে দ্রুত কাজ করতে সহায়তা করে। এছাড়াও তাকে অধিক অর্থ উপার্যনের কিছু শয়তানী বুদ্ধি শিখিয়ে দেয়া হয়।

জর্ডান খুব ভালোভাবেই এই ফালতু উপদেশগুলো তার মাথায় ভরে নেয় এবং মুভির পরবর্তী সিনগুলোতে উপদেশগুলো কাজে লাগিয়ে তাকে একসময় বিলিয়নিয়ার হয়ে যেতে দেখা যায়।

অথচ যারা পর্ন এবং মাস্টারবেশন আসক্তিতে ভুগছেন তারা সবাই জানেন যে মাস্টারবেশন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজের ক্ষেত্রে কত বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, কত ছেলেরা এ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ করে, কত সংসার ভেঙ্গে যায়। আর এসব মুভিতে মাস্টারবেশনকে জীবনে সফল হওয়ার টিপস হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এছাড়াও পর্নকে তারা কীভাবে স্বাভাবিক করে তুলছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। হলিউড এবং এর মত অন্যান্য মুভি ইন্ডাস্ট্রি এভাবেই প্রতিনিয়ত মিথ্যা দিয়ে আমাদের ইয়াং জেনারেশনের মগজ ধোলাই করে চলছে।

তাই যারা পর্ন আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছেন তাদের উচিত এসব মুভি থেকে নিজেদের বিরত রাখা। যারা আপাতত পর্ন দেখছেন না, কিন্তু নিয়মিত মুভি, টিভি সিরিজ দেখেন তাদেরও উচিত এসব মুভি বয়কট করা। কারণ আজ যারা পর্ন অ্যাডিক্টেড তারাও একসময় পর্ন দেখত না। কোন এক আইটেম সং কিংবা মুভির সফটকোর দৃশ্য তাদের ধীরেধীরে এ পথে নিয়ে এসেছে, পর্নোগ্রাফি নামক পিচ্ছিল পাথরে একদিন তারা পা রেখেছিল, সেখান থেকেই পিছলে অনেকে এমন এক গহ্বরে গিয়ে পৌঁছেছে যেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোন পথ আজ খুঁজে পাচ্ছে না।

Blog Image
সেক্স ট্রাফিকিং

স্ক্রিনে দেখা পর্নের সাথে বাস্তবতার অবিশ্বাস্য পার্থক্য রয়েছে। নীল পর্দার ছবিগুলোর পেছনে লুকিয়ে আছে ড্রাগ অ্যাডিকশন, শারীরিক নির্যাতন, অস্বাভাবিক যৌন ক্রিয়ার মতো আরও অনেক ন্যক্কারজনক কাজ।

প্রসটিটিউশন এবং সেক্স-ট্রাফিকিং না থাকলে আজ পর্নের কোনো অস্তিত্বই থাকতো না। ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লোইটেড চিলড্রেন এর প্রেসিডেন্ট আর্নি এলেন বলেন, প্রতি বছর অন্তত ১০০,০০০ অপ্রাপ্তবয়স্ক অ্যামেরিকানদের কমার্শিয়াল সেক্সচুয়াল এক্সপ্লোইটেশন এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

সেক্স ট্রাফিকিং হচ্ছে মডার্ন দাসপ্রথা, যা ইউনাইটেড স্টেট সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও বিরাজ করছে। শারীরিক নির্যাতন, হুমকি এবং বিভিন্ন ধরনের মিথ্যার মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা ব্যবসা করার লক্ষ্যে যৌন ক্রিয়া করতে বাধ্য করাই হচ্ছে সেক্স ট্রাফিকিং। যেমনঃ অ্যামেরিকায় রাতের বেলা রাস্তা ঘাটে একা কোন মেয়েকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে চলাফেরা করতে দেখলেই পিম্প বা দালালরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। সুযোগ পেলে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। অনাগ্রহী মেয়েদের ক্ষেত্রে রেইপ করার ভিডিওর মাধ্যমে ব্লেকমেইল করা হয়। এদের বানানো পর্ন দেখেই আমরা মজা নিচ্ছি। হয়তো যে মেয়েটিকে আপনি দেখছেন তাকে প্রতিটা কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

আর্নি এলেন এর মতে অ্যামেরিকায় এমন কোন সিটি নেই যেখানে সেক্স ট্রাফিকিং হয়না। আর এরাই কিনা আমাদের মুসলিমদের নারী স্বাধীনতা শেখাতে আসে। আফসোস।

কিভাবে আমরা এমন জঘন্য একটা কাজকে সাপোর্ট করি। আমাদের ইয়াং জেনারেশনের অনেক সুপারস্টাররা আজ গর্বের সাথে স্বীকার করে তারা পর্ন দেখে। আমাদের ছোট ভাইবোনেরা তাদের দ্বারা প্ররোচিত হচ্ছে। তাই সময় থাকতে আমাদের উচিত সবাইকে এই সত্যগুলো জানানো।

নীল পর্দার পেছনের সাদাকালো জগতটাকে দেখা।

Blog Image
পর্ন পরিবার ধ্বংসকারী

২০০৪ সালে ডঃ জিল ম্যানিং এর এক রিসার্চে পর্ন সম্পর্কিত কিছু ভয়ানক তথ্য পাওয়া যায়। তিনি বলেন,

“অ্যামেরিকায় ৫৬ শতাংশ ডিভোর্স এর ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্বামী বা স্ত্রীর যে কোন একজন অত্যধিক মাত্রায় পর্নে আসক্ত”[১]।

অ্যামেরিকান একাডেমী অফ ম্যাটরিমনি লইয়ার্স নামক আরেকটি সোর্স থেকে জানা যায়,

“ডিভোর্সের ক্ষেত্রে পর্নের ইফেক্ট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে, ৩৫০ জন ডিভোর্স অ্যাটোর্নির দুই-তৃতীয়াংশই বলেছেন ডিভোর্সের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণ হচ্ছে পর্ন আসক্তি”[২]।

অ্যামেরিকায় গত শতাব্দীতে প্রতি বছর ১ মিলিয়ন করে ডিভোর্স হয়েছে। যদি কমপক্ষে অর্ধেক ডিভোর্সের কারণ হিসেবে পর্নকে ধরা হয় তারপরও প্রতিবছর ৫০০,০০০ টি ডিভোর্সের কারণ হচ্ছে পর্ন অ্যাডিকশন।

এভাবে পর্নের কারণে একটি সম্পূর্ণ পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একজন সন্তান যখন তার বাবার ল্যাপটপে পর্ন পায় তখন ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায়? কি শিখবে এই ছেলে/মেয়েটি তাদের বাবার কাছ থেকে। একজন স্ত্রী যখন তার স্বামীর পর্ন অ্যাডিকশন সম্পর্কে জানবে কোথায় যাবে তার সম্মান।

অনেকেই ভাবেন যে বিয়ের পর সব অ্যাডিকশন দূর হয়ে যাবে। তদের জন্য এই স্ট্যাটিসটিক্সগুলো জানা খুব জরুরী। একজন মানুষ হঠাৎ কোন অ্যাডিকশন থেকে মুক্তি পায়না। তাছাড়া পর্নের স্যাটিসফ্যাকশন শুধুই পর্নে, নরমাল সেক্সচুয়াল লাইফ সবার ক্ষেত্রে এর সলিউশন দিতে পারে না। তাই এখন থেকেই পর্ন ছাড়ার প্রেক্টিস করুণ। তা না হলে আপনার জন্য কষ্ট পেতে হবে আপনার স্ত্রী এবং সন্তানদের।
#porn_destroyes_families

রেফারেন্সঃ

[১] Manning J., Senate Testimony 2004, referencing: Dedmon, J., “Is the Internet bad for your marriage? Online affairs, pornographic sites playing greater role in divorces,” 2002, press release from The Dilenschneider Group, Inc.

[২] https://www.psychologytoday.com/…/is-porn-really…

Blog Image
নিরাশ হবেন না

“হে আমার বান্দারা, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছো, তারা আল্লাহ্ তায়ালার রহমত হেকে (কখনো) নিরাশ হয়ো না; অবশ্যই আল্লাহ্ তায়ালা (মানুষের) সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন, তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” [সুরা আঝ ঝুমারঃ ৫৩]

চিন্তা করুন। যদি কুরআনে এই আয়াতটা না থাকতো তাহলে কতো মানুষ নিজেদের কৃতকর্মের জন্য হতাশ হতো।

যখন আপনি পর্ন দেখার পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, কিন্তু পরবর্তীতে আবার দেখেন, এরপর আবার ক্ষমা চান এবং আবার দেখেন, এভাবে চলতে থাকে। এই চক্রের মধ্যে বছরের পর অবস্থান করছেন, নিজের এবং আল্লাহর সাথে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে আপনি এসব ছেড়ে দিবেন, তবুও ছাড়বো ছাড়বো করে আর ছাড়তে পারছেন না। যার ফলে, আপনি হতাশ হয়ে যান এবং পর্নগ্রাফি থেকে মুক্তির লড়াইয়ে হার মানেন।

আপনার ভেতরে যে অপরাধবোধ জন্ম নেয় তা আপনাকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া থেকে বিরত রাখে। ফলে আপনি ভাবতে শুরু করেন যে আল্লাহ্‌ আপনাকে অনেক শাস্তি দিবেন। কিন্তু আপনি যদি বার বার ক্ষমা চাইতে থাকেন এবং এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যান তাহলে আল্লাহ্‌ আপনাকে শাস্তি দিবেন না।

“আল্লাহ্‌ কি (খামাখা) তোমাদের শাস্তি দেবেন- যদি তোমরা (তাঁর প্রতি) কৃতজ্ঞতা আদায় করো এবং তাঁর ওপর ঈমান আনো; (বস্তুত) আল্লাহ্‌ তায়ালা হচ্ছেন (সর্বোচ্চ) পুরস্কারদাতা, সম্যক ওয়াকেফহাল”
[সুরা নিসাঃ ১৪৭]

তাই এই শুকরিয়া আদায় করুন, যে তিনি এখনো পর্ন দেখা অবস্থায় আপনার জান তুলে নেননি। বরং আপনাকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন, যাতে আপনি তাঁর সাথে সম্পর্কটা ঠিক করতে পারেন। আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখুন এবং কখনো তাঁর দয়া ও রহমত হতে নিরাশ হবেন না। যদি নিরাশ হন তাহলে আরো বিপথে চলে যাবেন।

“পথভ্রষ্ট ব্যক্তি ছাড়া আল্লাহর রহমত থেকে কে নিরাশ হতে পারে?”
[সুরা আল হিজরঃ ৫৬]

দৃঢ়সংকল্প করুনঃ
———————-
আমি আমার পাপের জন্য অনুতপ্ত হব। যতবার পাপ করব আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবো, যেন তিনি আমার গুনাহ মাফ করে দেন এবং পর্ন অ্যাডিকশন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাঁর সাহায্য কামনা করব।

ইনশা আল্লাহ্‌ সহজ হয়ে যাবে।

Blog Image
আলো আঁধারে

রাহিদ হঠাৎ খুব ঘামাচ্ছে। ক্লাসের এসিতেও কোন কাজ হচ্ছেনা। পাশের মেয়েটার দিকে যতবারই চোখ পড়ছে ততোই তার হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে। কি করলাম আমি? এতদিন আল্লাহর ভয়ে দৃষ্টি নত রেখেছিলাম। আর আজ আমি…

এই ভেবে তার প্রতিটা মুহূর্তে মনে হচ্ছিলো সে জাহান্নামের পথে পা বাড়িয়েছে। সে ভাবল,- এখন যদি আমি মারা যাই, নিশ্চিত জাহান্নামে যাব। না.. এ হতে পারেনা। আমি এ কাজ করিনি..

পাশের যে মেয়েটা তার হার্ট বিট বাড়িয়ে দিচ্ছিল সে মেয়েটার সাথে রাহিদ জিনা (fornication) করে ফেলেছে। সে নিজেও বুঝতে পারছেনা, কিভাবে তার দ্বারা এ কাজ সম্ভব হল। গত এক বছর যাবত সে কোন মেয়েকে ছোঁয়াত দূরের কথা, কার সাথে কথাও বলেনি। ফেসবুকে যত মেয়ে ফ্রেন্ড ছিল সবাইকে ছাটাই করেছিল, মিউজিক-মুভি সব দেখা বাদ দিয়েছিল শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়। আর আজ কিনা সে জিনার মতো ইসলামের একটা মেজর পাপ করে বসে আছে। যতবারই সেই ক্ষণ নিয়ে চিন্তা করছে তার মন বিষণ্ণতায় ছেয়ে যাচ্ছে।

কাছের কিছু বন্ধু তার এই অবনতি সম্পর্কে জেনে গেছে। নামাযের সময় মসজিদে যাওয়ার পথে সাগরের সাথে দেখা। লজ্জায় রাহিদ তার দিকে তাকাতে পারছিলনা।
সাগর বলল,- বন্ধু! তুই না একদিন রসূল (সাঃ) এর এক হাদীস শুনিয়েছিলি যে “জিনাকারির (fornicator) দোয়া কবুল হয়না।” মসজিদে গিয়ে আর কি হবে? এ বলে সাগর ধিক্কার দিতে দিতে চলে গেল। রাহিদ আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেনা। রাস্তার পাশে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নামাজের সময় চলে যাচ্ছে। সে জানে আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন। এরপর যদি সে হারাম রিলেশনে না জড়ায় তাহলে আল্লাহ তার দোয়াও কবুল করবেন। তবুও সে কেন জানি মসজিদে যাবে কি যাবেনা এ নিয়ে দ্বিধান্বিত। এর মধ্যে হঠাৎ একটা কুকুর এসে তার হাত কামড়ে ধরল।

সেদিন আর তার মসজিদে যাওয়া হয়নি।

১ সপ্তাহ পর..
সে নিজেকে আবিষ্কার করলো এক ডিজে পার্টিতে। মিউজিক, রঙবেরঙের আলো, আশেপাশে সবাই অশ্লীলতায় ভরপুর। সে ভাবছে,- আমি এখানে কি করছি, কি হচ্ছে এসব?
পার্টির আলোআঁধারি পরিবেশে একটা মেয়ে তার কাছে এসে বসলো। মেয়েটা তার পূর্ব পরিচিত। কলেজে ভালো ফ্রেন্ড ছিল। সে তার হাত ধরে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,- ওয়েলকাম টু দ্যা পার্টি, সুইটহার্ট!

রাহিদের আর বুঝতে বাকী রইলনা যে সে হেদায়েতের পথ থেকে অনেক দূরে সরে এসেছে। আগের সব বন্ধুদের সাথে হ্যাংআউট, ফ্রি মিক্সিং সব নরমাল হয়ে যাচ্ছে। তবুও সে প্রবৃত্তির খাঁচায় বন্ধী থেকে দূরের সেই রাহিদকে দেখতে পায়। সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে থাকাকালে কতো সুন্দর ছিল তার জীবনটা। কতো শান্ত ছিল তার হৃদয়।

এই হতাশার চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে তার ঘুম ভাঙল। এতক্ষণে ঘেমে গোসল হয়ে গিয়েছে। বুক ছিঁড়ে মনে হচ্ছিলো কলিজাটা বেরিয়ে আসবে। পুরো ঘটনাটাই ছিল স্বপ্ন, ব্যাপারটা নিশ্চিত হবার পর সে শস্তির নিশ্বাস ফেললো। হাজার শুকরিয়া আদায় করলো আল্লাহ সুবাহানাহু তা’আলার কাছে।

যদিও সে সব হারাম কাজ ছেড়ে দিয়েছিল, একটা জায়গায় সে বার বার আটকে যাচ্ছিল। তা হল চোখের জিনা। মাঝেমাঝে ফেসবুকে রেকমেন্ডেড মডেলদের পেইজ বা ইউটিউবে কোন অশ্লীল ভিডিওর লিঙ্ক তার জন্য পর্নের ট্রিগার হিসেবে কাজ করতো।

আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ” তোমরা জিনার নিকটবর্তী হয়ো না, এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। ”
[সূরা বানী ইসরাইলঃ ৩২]

পর্ন দেখা চোখের জিনা। সপ্তাহে হোক বা সেটা মাসে একবার কোন বৃষ্টিস্নাত রাতে হোক এই পর্ন আপনাকে নিয়ে যেতে পারে আসল জিনার দিকে।

রাহিদের স্বপ্ন এমনই ইংগিত প্রদান করে। সে বুঝতে পারলো এই স্বপ্ন আল্লাহ তা’আলার দেওয়া একটা ওয়ার্নিং। তাই সে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় চোখের জিনা থেকে দূরে থাকার জন্য সব ধরনের স্টেপ নিয়েছে। কারণ দিনের শেষে আল্লাহ তা’আলাই আমাদের হেদায়েতের পথে থাকতে সাহায্য করবেন।

Blog Image
স্ক্রীনের বিকৃত সৌন্দর্য

ডেভিড এক্সট্রিমলি পর্ন আসক্ত। তার এই আসক্তিকে ঘিরেই বাসা বেঁধেছে আরও অনেক পারিবারিক সমস্যা। দিনের পর দিন তার স্ত্রী সারিনা তার জন্য সেজেগুজে বসে থাকে। কিন্তু ডেভিড তাকে আর আগের মত সুন্দর বলে না। কি হয়েছে ওর? ও কি অন্য কোন মহিলার প্রেমে পড়েছে? না, এমন তো হবার কথা না, সময় মতই সে প্রতিদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরে। এমন নানা প্রশ্ন সারাক্ষণ ঘিরে রাখে তাকে। ইতিমধ্যে ডেভিডের আচরণেও ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছে সারিনা। অল্পতেই রেগে যায় সে, তার যৌন চাহিদা যখন জাগ্রত হয় তখন অবস্থা না থাকলেও সে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হতে চায়।

একদিন সারিনা তার স্বামীকে পর্ন দেখা অবস্থায় দেখে ফেলল। কিন্তু তাকে বুঝতে দেয়নি যে সে দেখেছে। ডেভিড অফিসে যাওয়ার পর তার ল্যাপটপ খুলে বসল সারিনা। অবিষ্কার করল শত শত জিবি পর্নের কালেকশন। এক্সট্রিম সব পর্নে ভরা সেই ল্যাপটপ।
সারিনার মাথা ঘুরছে। এই আসক্তিই তাহলে ওকে এতোটা পরিবর্তন করে ফেলেছে। এখন সে বুঝতে পারছে কেন ডেভিড রাতের বেলা হঠাৎ বিছানা ছেড়ে অন্য ঘরে চলে যেত, কেন বাথরুমে অনেক সময় থাকত, সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। চোখ জলে ভিজে উঠল তার। চিৎকার করে কান্না শুরু করল।

কিছুদিন বুকের মধ্যে পাথর বেঁধে রাখার পর সারিনা সিদ্ধান্ত নিলো ব্যাপারটা নিয়ে ডেভিডের সাথে কথা বলার। প্রতিদিনের মতো সারিনার কাছ থেকে বিদায় না নিয়ে ডেভিড অফিসে চলে যাচ্ছিল। এমন সময় সারিনা বলে উঠল, তোমার স্ক্রিনের সেই মেয়েদের সাথে আমি পারব না, এ বলে অঝরে কাঁদতে লাগল সে। কিছুই বলার থাকল না ডেভিডের। নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

ডেভিড নিজেও জানে যে, পর্ন একটা ফ্যান্টাসি। বাস্তবতার সাথে এর মিল খুব কমই আছে। এমনকি যে মেয়েগুলোকে দেখে সে যৌন চাহিদা মেটাচ্ছে, তারাই স্বাভাবিক বেশে সামনে আসলে, তেমন ভাল লাগবে না তার। কিন্তু যখন সে আরামে পর্ন দেখছিল তখন ব্রেইন তার যৌন অনুভূতিকে জুড়ে দিয়েছে স্ক্রিনের বিকৃত সেই সৌন্দর্যের সাথে। সময়ের সাথে দৃঢ় হয়েছে সেই বন্ধন, যা স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়ার অনুভূতিকেও হার মানিয়ে গেছে। তাই এখন সেই সুন্দর স্ত্রীকে আর সুন্দর মনে হয় না। পর্নের বিকৃত সব চিন্তা আর অনুভূতির রিওয়ার্ড প্যাথওয়ে এর মাঝে হারিয়ে গেছে তাকে ভালোবাসার সেই অনুভূতি।

Blog Image
কীভাবে পর্ন আসক্তি আমার চাকরি, স্ত্রী এবং সামাজিক খ্যাতি হারানোর কারণ হয়েছে

আমার বয়স তখন তের। দিনটি এখনও আমার স্পষ্ট মনে আছে। কারণ, সেই দিনটি আমার পুরো জীবনটাই তছনছ করে দেয়।
.
আমার একজন বড় ভাই আছে। তখন তার বয়স ছিল পনের বছর। একদিন সে আমার রুমে এসে একটা পর্ন ভিডিও দেখিয়েছিল। আমি কৌতূহলী থাকলেও দেখার সময় আমার কেমন জানি অদ্ভুত লাগছিল। ভাইয়া বলেছিল এগুলো কোনো ব্যাপার না। আমিও সেদিন তার কথা বিশ্বাস করেছিলাম। 
.
কিন্তু ব্যাপারটা শুধু ভিডিও দেখানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। যখন আমার বয়স ১৪, আমার ভাই তার বান্ধবীকে নিয়ে আমার রুমে ঢুকে। আমাকে এমন এক ভিডিও দেখায় যেখানে দুইজন ছেলে এবং একজন মেয়ে নিজেদের মধ্যে কিছু করছে। আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু কৌতূহলী ছিলাম ঠিকই। সে বলল,- “চল আমরা এদের মতো করি!” ওর বান্ধবী এবং আমি রাজি ছিলাম না কিন্তু, সে জোরাজোরি করতে লাগল। বলল, খুব মজার হবে; ঠিক এই ভিডিওর মতোই ।
.
বুঝতে পারছিলাম কাজটা কতোটা জঘন্য হবে। তারপরও আমি এতে জড়িয়ে গেলাম। মেয়েটি এই ঘটনায় চরম মানসিক আঘাত পায়। ভোগের পণ্য মনে করতে থাকে নিজেকে। মনের মধ্যে অনুশোচনা আসে। কিছুদিন পর শুনেছিলাম আমার ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। 
.
সময় যেতে থাকে, কিন্তু আমি আটকা পড়ে গিয়েছিলাম ফাঁদে
========================
কৈশরের সময়টা দেখতে দেখতে কেটে গেল। বয়স বাড়তে থাকল। ভালো একটা চাকরি শুরু করেছিলাম। মনে করতাম আমার জীবনের সবকিছু ঠিকঠাকই আছে। কিন্তু পর্ন দেখার অভ্যাসটা আমি তখনো ছাড়তে পারিনি। প্রত্যেক রাতেই দেখতাম। 
.
বিয়ের পর, স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু ও যখনি প্রত্যাখ্যান করত, আমি গিয়ে পর্ন দেখা শুরু করতাম। একসময় অবস্থা এমন হয়েছিল যে, আমি পতিতার সাথে পর্যন্ত রাত কাটিয়েছিলাম।
.
পর্ন আমার জীবনের সাথে মিশে গিয়েছিল। আমি বিভিন্ন অসামাজিক ক্লাবের সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। নানা ধরণের অনৈতিক কাজ থেকে আনন্দ নেওয়া শুরু করলাম। নিজের বিবেককে কোনো প্রশ্নই করতাম না। করবই বা কেন? আমি মজা পেতাম। ভাবতাম এটা তো কারো ক্ষতি করছে না, তাহলে সমস্যা কোথায়? অথচ তখনো আমি বুঝিনি যে এই অভ্যাস যার সবচেয়ে বড় ক্ষতি করছে সে আমি নিজেই। 

যখন সব মজার অবসান ঘটল
======================
যদিও কিছুদিন সময়টা মজায় কাটছিল, তবে একটা সময় পর সবকিছুই ম্লান হওয়া শুরু করল। স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। কাজের সময় পর্ন দেখতাম বলে চাকরিটাও চলে গেল। একজন এস্কোর্ট এর সাথে থাকার কারণে গ্রেফতার হতে হয়েছিল। এতকিছুর পর নতুন চাকরি পাওয়াটা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছিল… মনে হচ্ছিল আমার জীবনটা একটা নষ্ট চক্রের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। 
.
আমি এখন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিচ্ছি। এ সাহায্য আমার খুবই প্রয়োজন। আমি সবসময় সেই দিনটির কথা চিন্তা করি যেদিন থেকে সবকিছুর শুরু। এটা কি আসলেই আমি। আমি কি আসলেই আমার জীবনটা এরকম চেয়েছিলাম, নাকি পর্ন আমার ১৩ বছরের সুন্দর মনটাকে বিকৃত করে দিয়েছিল?
.
আমি আমার জীবনের সত্যটা সবার সামনে তুলে ধরলাম যাতে সবাই পর্নের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পারে। পর্নের জন্য জীবনটা ধ্বংস করে দেওয়ার কোনো মানে হয় না।
.
এই গল্প থেকে আমরা কী শিখলাম?
=========================
এই বেদনাদায়ক গল্পটি থেকে আমরা বুঝতে পারলাম পর্ন ব্যক্তি জীবনে কত বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। অথচ পর্ন আসক্তিকে অনেকে তেমন কোনো গুরুত্বই দিতে চান না।
.
পর্ন দেখার অভ্যাসটা একটা ফাঁদের মতো। যারা নিয়মিত দেখে তারা খুব সহজে এই ফাঁদ থেকে বের হতে পারে না। ভয়াবহভাবে আসক্ত হয়ে যায়। এই আসক্তি মানুষকে সবার থেকে আলাদা করে দেয়। ফলে তারা বন্ধুদের সাথে ভালোভাবে মিশতে পারে না। নতুন কোন শখ তো ভালো লাগেই না, পুরোনো শখগুলো থেকেও আলাদা হয়ে যায়। জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। [১]
.
এমন হওয়ার কারণ হলো, পর্ন দর্শকেরা এর ওপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে যে, তাদের মনে হতে থাকে, বাস্তব জীবনের সেক্সের চেয়ে পর্ন দেখায় বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায়।[২] 

এই দুষ্ট চক্র ভাংগার জন্যে, বিশ্বাসযোগ্য কারো সাহায্য নেওয়া জরুরী। আসক্তির ঝোঁক কমে গেলে যদি আর্থিক সামর্থ থাকে, তাহলে বিয়ে করে ফেলুন।
.
এই আসক্তি থেকে মুক্ত হওয়ার আনন্দ সত্যিই অসাধারণ। যারা পর্ন থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছেন, তারা নিজেরাই বলেছেন যে, আগের চেয়ে তারা কতটা সুখী, আত্নবিশ্বাসী এবং মানসিকভাবে সুস্থ। তারা প্রিয়জনের সাথে সম্পর্কের বন্ধন মজবুত করতে পারে। কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করে। জীবনকে উপভোগ করতে পারে। কে না চায় এমন হতে!
.
আপনি নিশ্চয়ই চান নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসতে। তার সাথে সৎ থাকতে। আপনি নিজের সাথেই যদি সৎ থাকতে না পারেন তাহলে তার সাথে কীভাবে পারবেন বলুন। তাই বিয়ের আগে থেকেই পর্ন থেকে সরে আসার দৃঢ় সংকল্প করুন। যে জিনিসটা সম্পর্ক নষ্ট করে, সেটার পেছনে ঘন্টার পর ঘন্টা নষ্ট করার কোনোই মানে হয় না।
.
পর্নকে জীবন থেকে দূরে রাখলে নিজের মধ্যে অনেক পজিটিভ পরিবর্তন দেখতে পাবেন। শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কোনো খেলায় নিয়মিত অংশগ্রহন করুন, জীবনে নতুন ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন, নতুন কিছু শিখুন, পরিবারসহ সুন্দর কোনো জায়গায় বেড়াতে যান, বন্ধুদের সময় দিন, এবং উত্তম জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে নিজেকে প্রস্তুত করুন।
.
বাস্তবে স্ত্রীর ভালোবাসায় আপনি প্রশান্তি খুঁজে পাবেন, যেটা পর্ন আর নকল সেক্স কখনোই আপনাকে দিতে পারবে না। 
.
অনুবাদ ও সম্পাদনা: #teamFAD

রেফারেন্স:
[1] Volkow, N. D., Koob, G. F., & Mclellan, A. T. (2016). Neurobiological Advances From The Brain Disease Model Of Addiction. New England Journal Of Medicine, 374, 363-371. Doi:10.1056/Nejmra1511480; Park, B. Y., Et Al. (2016). Is Internet Pornography Causing Sexual Dysfunctions? A Review With Clinical Reports. Behavioral Sciences, 6, 17. Doi:10.3390/Bs6030017

[2] Volkow, N. D., Koob, G. F., & McLellan, A. T. (2016). Neurobiological Advances From The Brain Disease Model Of Addiction. New England Journal Of Medicine, 374: 363-371. Doi:10.1056/NEJMra1511480

Blog Image
মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নতুন প্রযুক্তি ও পর্নোগ্রাফির প্রভাব

পর্নোগ্রাফি আসক্তিতে ভোগা প্রতিটি মানুষই জানে, এটা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কতোটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যতই দিন যাচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে। ইন্টারনেট সহজলভ্য হচ্ছে। ফলে পর্নোগ্রাফি আসক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে আজ হুমকির সম্মুখীন।

এই আর্টিকেলে আমরা সেই প্রযুক্তিগুলো এবং আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পর্নোগ্রাফির প্রভাব সম্পর্কে জানব। পরিশেষে আমরা এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কেও অবগত হব।

পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা:

আমরা সকলেই জানি, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও অন্যান্য বহনযোগ্য ডিভাইসে ইন্টারনেট কানেকশন অনেক সহজলভ্য হয়ে গেছে। যার ফলে পর্নোগ্রাফি আসক্তির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

হাতে যখন এমন একটি ডিভাইস থাকে যা যেকোনো মুহূর্তে ব্যবহার করা যায়, তখন অশ্লীলতা থেকে নিজেকে দূরে রাখা আসলেই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ডিভাইসগুলো এতই ছোট যে আপনি কী দেখছেন তা কেউ কাছে না আসলে দেখতে পায় না। আবার কেউ কাছে আসতে নিলেও সহজেই লুকিয়ে ফেলা যায়। তাই এসব ডিভাইস ব্যবহার করা অবস্থায় পর্ন দেখার প্রবণতা বেশি থাকে।

গবেষণায় জানা যায়, পৃথিবীতে যত ধরণের ওয়েবসাইট আছে তার ১২ শতাংশ পর্নোগ্রাফিক। এর মধ্যে প্রায় সব ওয়েবসাইটই সেল্ফ রিপোর্টিং এইজ ভেরিফিকেশন প্রসেসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই এইজ ভেরিফিকেশনে কোনো লাভই হচ্ছে না। কারণ, ব্যক্তির বয়স ১০ হোক আর ৫০ হোক সে নিজেকে প্রাপ্তবয়স্ক দাবী করে অনায়াসেই ঢুকে পড়ে পর্নসাইটে। 

অন্যান্য নেশাকর দ্রব্যের ক্ষেত্রে যেমন আসক্ত ব্যক্তি বয়সে যত ছোট হয়, তার আসক্তি তত বেশি গভীর হয়, পর্নের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই ঘটে। অর্থাৎ, কারও বয়স কম হলে, তার জন্য পর্ন আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসাটা বেশ কঠিন।

পর্ন দেখার কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আসক্তি ব্যক্তির মধ্যে বিষণ্ণতা (depression), দুশ্চিন্তা (anxiety) দেখা দেয়। ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি হয়। স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্কে অক্ষমতা দেয়। এই সবকিছু মিলে তার জীবনতাই দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। মন ভালো না থাকায়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সে ব্যর্থ হতে থাকে।  

ওয়েবক্যাম

এটা অনেকটাই বাস্তবতার মত। আপনি অন্য একজনের সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত হবেন। সে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে আপনাকে উত্তেজিত করে তুলবে। আপনি বলতে পারেন যে এটা তো কোনো ক্ষতিকর বিষয় না। কারণ, এখানে সত্যিকার অর্থে কোনো শারীরিক সম্পর্ক হচ্ছে না। শুধু চোখের দেখাদেখি, এই তো।

এই ওয়েবক্যাম সেক্স বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু ফ্রি না। তারা বিভিন্ন একাউন্টগুলো থেকে আর্থিকভাবে ঠিকই লাভবান হয়। কামনার বশীভূত হয়ে অনেক যুবকেরাই তাদের পাতা ফাঁদে পা বাড়ায়। অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে ওয়েবক্যাম সেক্স করা যুবকদের অনেকেই বিষণ্ণতায় ভোগে। পর্নের মতো এখানেও তাদের সেক্সচুয়াল ওরিয়েন্টেশনে পরিবর্তন আসে। ফলে স্ক্রিনে মেয়ে দেখে সে যতোটা উত্তেজনা অনুভব করে নিজের স্ত্রীর ক্ষেত্রে তেমনটা করে না। এটা এমন এক সমস্যা যা ডিভোর্সের রূপ নিতে পারে। এ ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজে তাদের মনোযোগ হ্রাস পায়।

এ সবকিছুর পাশাপাশি আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সম্প্রতি কিছু নিউজ রিপোর্টে জানা যায়, ওয়েবক্যামে বেশকিছু সংখ্যক নারীদের পাচার করে এ ব্যবসায় নিযুক্ত করা হয়েছে। আপনি যদি ওয়েবক্যামের এ ফাঁদে পড়ে থাকেন তাহলে জেনে রাখুন, আপনি নিজের অজান্তেই একটা অবৈধ ও অমানবিক ইন্ডাস্ট্রিকে সমর্থন করছেন।

ভার্চুয়াল রিয়ালিটি 

একটা গ্লাস বা হেডসেট যা চোখে পরার পর আশেপাশের সবকিছু কাল্পনিক জগতের মতো দেখায়। এটাই ভার্চুয়াল রিয়ালিটি। এই জগতেও পর্নের অনুপ্রবেশ ঘটতে খুব একটা সময় লাগেনি। ওয়েবক্যামের মতো এখানেও রোল প্লেয়িং গেমস খেলা যায়। এই গেইমে একা একজন স্বাধীন খেলোয়ার হিসেবে খেলা যায়। আবার চাইলে অন্যদের সাথেও মিলিত হওয়া যায়।

কিছু গেইম খেলোয়ারদের যৌন মিলনের ব্যবস্থা করে দেয়। অনেক পর্ন আসক্তরা এই গেইমগুলোকেও পর্নের মতোই স্বাভাবিকভাবে নেয়। তাদের মনে একটা ধারণা জন্মে যায়, “এই সম্পর্কগুলো তো বাস্তব নয়”।

অন্যান্য ডিভাইসের মতো ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি ব্যবহারেও একই ধরণের ঝুঁকি থাকে। অর্থাৎ, এটাও বেশ আসক্তিকর। এতে আসক্তরা নিজেদের স্ত্রীর সাথে যৌন মিলনের সময় আরও বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে যা আমাদের মস্তিষ্কে খুব সহজেই প্রভাব বিস্তার করে। তাই উদ্বেগের বিষয় এই যে- এর মাধ্যমে পর্নোগ্রাফির ব্যবহার আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি ঘটাবেই।

চ্যাটরুম

নতুন প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে অনলাইনের বিভিন্ন সাপোর্ট কমিউনিটি বা গ্রুপগুলো পর্ন আসক্তদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ। কারণ, তারা প্রতিনিয়ত আসক্তদের প্ররোচনা দিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এ ধরণের গ্রুপে যুক্ত থাকা মানুষেরা আসক্ত অবস্থায়ও নিজেদের সুস্থ মনে করে।

এই কমিউনিটিগুলোর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হচ্ছে, তারা পর্ন দেখতে উৎসাহিত করে। আসক্তদের কাছে পর্নকে স্বাভাবিক করে তোলে। পর্ন আসক্তদের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকা অস্বাস্থ্যকর সব চিন্তাকে সমর্থন দেওয়াই যেন তাদের কাজ। এদের কারণে পর্ন আসক্তিতে ভোগা তরুণদের এ আসক্তি থেকে মুক্ত করা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইন্টারনেটের বিভিন্ন দিক আজ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে পর্নোগ্রাফি অন্যতম। বর্তমানে দ্রুতগতির ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি এবং একে ঘিরে তৈরি হওয়া বিভিন্ন গ্রুপগুলো আসক্তদের উত্তেজিত করার পাশাপাশি তাদের আজীবন আসক্ত থাকার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে।

মানসিক স্বাস্থ্য

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পর্নোগ্রাফির প্রভাব নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এর মধ্যে একটি গবেষণায় জানা যায়, যৌন উত্তেজক কিছু দেখার পর যারা পর্ন আসক্ত এবং যারা পর্ন আসক্ত না তাদের মধ্যে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

যখন কোনো পর্ন-আসক্ত ব্যক্তি যৌন উত্তেজক কিছু দেখে তখন তাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসৃত হয়। এই নিউরোট্রান্সমিটারটি মস্তিষ্কে ইউফোরিয়া উৎপাদনে ভূমিকা পালন করে। সাধারণত যৌন উত্তেজনায় যে পরিমাণ ডোপামিন নিঃসৃত হয়, পর্ন আসক্তদের মস্তিষ্কে তারচেয়েও বেশি ডোপামিন নিঃসৃত হয়।

এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে দেখা যায়, একজন পর্ন আসক্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়ার চেয়ে পর্ন দেখাটাকে বেশি প্রাধান্য দেয়। কারণ, তারা পর্নেই বেশি উত্তেজনা অনুভব করে। ফলে একসময় তাদের ওপর হতাশা ভর করে। অন্তরে  অপরাধবোধ জাগে। যৌন উত্তেজক কিছু দেখলেই তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে তারা আরও আসক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে।

যারা পর্নোগ্রাফি আসক্তির সাথে লড়াই করছেন এবং পর্নোগ্রাফি মুক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চান তাদের জন্য কিছু টিপস:

  • এমন ব্রাউজার ব্যবহার করুন যেখানে সার্চ রেজাল্টে পর্নোগ্রাফিক সাইট ফিল্টার করে। যেমন: স্পিন ব্রাউজার।
  • যেসব চ্যাটরুম বা স্প্যাম সাইট বারবার পর্নোগ্রাফিক জিনিস পপ-আপ করে সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
  • ব্রাউজার যেন অনাকাঙ্ক্ষিত পপ-আপ না দেখায় সেজন্য পপ-আপ ব্লকার ব্যবহার করুন।
  • যখন ইমেজ সার্চ করবেন তখন ‘সেইফ সার্চ’ অপশন চালু রাখুন।
  • ওয়েবক্যাম, ফোরাম এবং অন্যান্য মাধ্যমগুলো যেখানে পর্নোগ্রাফিক কিছু দেখার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো থেকে দূরে থাকুন।
Blog Image
পর্ন যৌন তৃপ্তি বাড়ায় না, বরং কমায়

পর্নের সাথে প্রকৃত যৌনতার কোনো সম্পর্ক নেই, দূর দূরান্ত থেকেও নেই। আপনার হয়ত এমনটা মনে নাও হতে পারে, কিন্তু এটাই সত্যি। বরং পর্ন একধরণের যৌন পণ্য যার ভোক্তা এতে আসক্তরা।

পর্ন স্বাভাবিক বা স্বাস্থ্যকর যৌনতাকে নিরুৎসাহিত করে


স্বাভাবিক যৌনতা হ্রাসে পর্নের ভূমিকা বারবার গবেষণায় উঠে এসেছে, পর্ন যৌন উত্তেজনা, আকর্ষণ ও যৌন ক্ষমতায় সমস্যা সৃষ্টিতে সরাসরি দায়ী।[1] পর্ন স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সেক্স এবং যৌন তৃপ্তি কমিয়ে দেয়।[2] গবেষকরা পর্নের সাথে সেক্স ড্রাইভের ঘাটতি, যৌন জটিলতা ও অকাল বীর্যপাতের গভীর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন।[3]

যারা বারবার পর্ন দেখে তাদের অনেকেই একপর্যায়ে পর্ন না দেখলে আর উত্তেজিত হতে পারেন না, এমনকি সহবাসের সময়ও না।[4] সাম্প্রতিক বেশ কিছু সিনিয়র হাইস্কুল ছাত্রদের মাঝে চালানো এক জরিপে পর্ন দেখার ফলে তাদের যৌন কামনা হ্রাস পেয়েছে দেখা গেছে।[5] এত অল্পবয়সী যুবকদের মাঝে সেক্স ড্রাইভের এমন অভাব কিছুটা হলেও অবিশ্বাস্য।
লক্ষ্য করুন পর্ন যদি সেক্স সম্পর্কিতই হয় তবে তো তাতে দর্শকদের এসব যৌন জটিলতা থেকে মুক্তির উপায় জানানো হত, কিন্তু পর্ন উল্টো এসব সমস্যাকে উত্তরোত্তর বাড়িয়েই চলেছে। এটা দর্শকদের যৌন তৃপ্তি বাড়ায় তো না-ই, বরং কমিয়ে দেয়।[6][7][8][9][10][11] বরং পর্ন যে বড় সমস্যা তৈরি করে তা হলো এর প্রতি আসক্তি যা পরিস্থিতিকে আরও দ্রুত অবনতির দিকে নিয়ে যায়। আর এ আসক্তিই পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসার হাতিয়ার, মানুষ যত পর্ন আসক্ত হবে, তাদের ব্যবসার প্রসার তত বেশি হবে।

চলুন ব্যাখ্যা করে বোঝানো যাক।

আসক্তির ব্যবসা আমরা “যৌন ব্যবসা”র কথা শুনেছি, তাই না? কিন্তু এখন শুধু যৌনতাই বিক্রি হচ্ছে না, বরং পর্ন দেখিয়ে দিচ্ছে ভোগবাদ, বস্তুবাদ, অমানবিকতাও বিক্রি হয় এখন। মূলত পর্ন দেখা একবার চালু হবার পর আসক্ত দর্শকরা তাদের টাকা ও ক্লিকের মাধ্যমে পর্ন ইন্ডাস্ট্রিকে লাভবান করতে থাকে। তারা বারবার পর্নের কাছে ফিরে আসতে থাকে। এথেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারে না, যখন আসতে চায় ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রির কথাই ধরা যাক, তারা বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, আশ্রয়স্থল, স্যুপ কিচেনে হাজার হাজার ফ্রি সিগারেট দান করেছে।[12] এর কারণ কি? কারণ হল তাদের প্রতি যারা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে তাদের নির্ভরশীলতাকে আরও বৃদ্ধি করা। অদ্ভুত, তাই না?

এটা নতুন কিছু নয়। কোন ইন্ডাস্ট্রি যদি তাদের প্রতি মানুষকে আসক্ত বা নির্ভরশীল করতে পারে, আর এ আসক্তিকে, নির্ভরশীলতাকে যদি বাড়াতে পারে তবে তারা সেটা করে, করবেই। পর্ন ইন্ডাস্ট্রি তাদের কনজ্যুমারদের এই ফাঁদে ফেলে তাদের আসক্তিকে আর নির্ভরশীলতাকে বাড়ানোর জন্য তাদের অবস্থাকে কাজে লাগায়। তখন দর্শকরা তাদের যৌন চাহিদাকে পূরণের জন্য পর্নের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এটা অর্থ আয়ের এক নোংরা প্রক্রিয়া যা আমাদের সমাজের মানুষগুলোকে গিলে খাচ্ছে। 

পর্ন ইন্ডাস্ট্রি একটা মধুর সম্পর্ককে ধ্বংস করে এবং একজন আসক্ত দর্শক থেকে বেশ মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। এসব কনজ্যুমারদের যৌন উদ্দিপনাকে কাজে লাগিয়ে তারা তাদের মার্কেট ধরে রাখে, তারা বিপুল অঙ্কের অর্থ লাভ করে। তাদের কাছে এটা নিছকই একটা ব্যবসা, যার মার্কেট এখন ৯৭ বিলিয়ন ডলারের উপরে।

মিথ্যাকে বর্জন করুন

আমরা আমাদের প্রথম কথাতেই অটল আছিঃ পর্ন কখনই যৌনতা সম্পর্কিত নয়, একদমই না। এটা খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে। পর্ন ইন্ডাস্ট্রি মানুষকে তাদের জালে আটকে ফেলে, আসক্ত করে তোলে যে আসক্তি ক্রমশ বাড়তে থেকে। আর এই পর্ন ইন্ডাস্ট্রি এমন কিছু জিনিসকে আমাদের সামনে নিয়ে আসছে যা আসলে মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যের সাথে যায় না। এভাবে তারা মানবতাকে এবং এই সমাজটাকে অমানবিক এক নষ্ট রূপ দিতে চাচ্ছে। আর এসব করে তারা নিজেদের পকেট ভারি করছে। পর্ন যৌনতা সম্পর্কিত নয়, এটা আনন্দ-বিনোদনের কিছু নয়, এটা শুধুই একটা ব্যবসা। আর প্রত্যেক দর্শক তাদের এই অন্ধকার চক্রান্তের ভুক্তভোগী, সেটা তারা বুঝুক আর নাই বুঝুক। তাই আমাদের যুদ্ধ করার আরেকটি কারণ হচ্ছে, মানুষকে এই দূষিত ইন্ডাস্ট্রির হাত থেকে রক্ষা করা, তাদেরকে বাস্তব ও ভালো সম্পর্কের বাধনে বাঁধা, প্রকৃত ও পবিত্র যৌন সম্পর্কের মাঝে রাখা।

রেফারেন্সঃ

[1] Carvalheira, A., Traeen, B., & Stulhofer, A. (2015). Masturbation And Pornography Use Among Coupled Heterosexual Men With Decreased Sexual Desire: How Many Roles Of Masturbations? Journal Of Sex And Marital Therapy, 41(6), 626-635. Doi:10.1080/0092623X.2014.958790; Voon, V., Et Al. (2014). Neural Correlates Of Sexual Cue Reactivity In Individuals With And Without Compulsive Sexual Behaviors, PLoS ONE, 9(7), E102419. Doi:10.1371/Journal.Pone.0102419; Sun, C., Bridges, A., Johnason, J., & Ezzell, M. (2014). Pornography And The Male Sexual Script: An Analysis Of Consumption And Sexual Relations. Archives Of Sexual Behavior, 45(4), 1-12. Doi:10.1007/S10508-014-0391-2; Poulsen, F. O., Busby, D. M., & Galovan, A. M. (2013). Pornography Use: Who Uses It And How It Is Associated With Couple Outcomes. Journal Of Sex Research 50(1), 72-83. Doi:10.1080/00224499.2011.648027; Stewart, D. N., & Szymanski, D. M. (2012). Young Adult Women’s Reports Of Their Male Romantic Partner’s Pornography Use As A Correlate Of Their Self-Esteem, Relationship Quality, And Sexual Satisfaction. Sex Roles, 67(5-6), 257-274. Doi:10.1007/S11199-012-0164-0; Maddox, A. M., Rhoades, G. K., & Markman, H. J. (2011). Viewing Sexually-Explicit Materials Alone Or Together: Associations With Relationship Quality. Archives Of Sexual Behavior, 40(2), 441-448. Doi:10.1007/S10508-009-9585-4; Morgan, E. M. (2011). Associations Between Young Adults’ Use Of Sexually Explicit Materials And Their Sexual Preferences, Behaviors, And Satisfaction. Journal Of Sex Research, 48,(6), 520-530. 8(6):520-30. Doi:10.1080/00224499.2010.543960; Janssen, E., & Bancroft, J. (2007). The Dual-Control Model: The Role Of Sexual Inhibition & Excitation In Sexual Arousal And Behavior. In Janssen, E. (Ed.), The Psychology Of Sex (Pp. 197-222). Bloomington, IN: Indiana University Press; Zillman, D., & Bryant, J. (2006). Pornography’s Impact On Sexual Satisfaction. Journal Of Applied Social Psychology, 18(5), 438-453. Doi:10.1111/J.1559-1816.1988.Tb00027.X
[2] Minarcik, J., Wetterneck, C. T., & Short, M. B. (2016). The Effects Of Sexually Explicit Material Use On Romantic Relationship Dynamics. Journal Of Behavioral Addictions, 5(4) 700-707. Doi: 10.1556/2006.5.2016.078; Doran, K., & Price, J. (2014). Pornography And Marriage. Journal Of Family And Economic Issues, 35(4), 489-498. Doi:10.1007/S10834-014-9391-6; Sun, C., Bridges, A., Johnason, J., & Ezzell, M. (2014). Pornography And The Male Sexual Script: An Analysis Of Consumption And Sexual Relations. Archives Of Sexual Behavior, 45(4), 1-12. Doi:10.1007/S10508-014-0391-2; Poulsen, F. O., Busby, D. M., & Galovan, A. M. (2013). Pornography Use: Who Uses It And How It Is Associated With Couple Outcomes. Journal Of Sex Research 50(1), 72-83. Doi:10.1080/00224499.2011.648027; Maddox, A. M., Rhoades, G. K., & Markman, H. J. (2011). Viewing Sexually-Explicit Materials Alone Or Together: Associations With Relationship Quality. Archives Of Sexual Behavior, 40(2), 441-448. Doi:10.1007/S10508-009-9585-4; Morgan, E. M. (2011). Associations Between Young Adults’ Use Of Sexually Explicit Materials And Their Sexual Preferences, Behaviors, And Satisfaction. Journal Of Sex Research, 48,(6), 520-530. 8(6):520-30. Doi:10.1080/00224499.2010.543960; Yucel, D., & Gassanov, M. A. (2010). Exploring Actor And Partner Correlates Of Sexual Satisfaction Among Married Couples. Social Science Research, 39725-738. Doi:10.1016/J.Ssresearch.2009.09.002
[3] Wery, A., & Billieux, J. (2016). Online Sexual Activities: An Exploratory Study Of Problematic And Non-Problematic Usage Patterns In A Sample Of Men. Computers In Human Behavior, 56, 257-266. Doi:10.1016/J.Chb.2015.11.046; Sutton, K. S., Stratton, N., Pytyck, J., Kolla, N. J., & Cantor, J. M. (2015). Patient Characteristics By Type Of Hypersexuality Referral: A Quantitative Chart Review Of 115 Consecutive Male Cases. Journal Of Sex And Marital Therapy, 41(6), 563-580. Doi:10.1080/0092623X.2014.935539; Carvalheira, A., Traeen, B., & Stulhofer, A. (2015). Masturbation And Pornography Use Among Coupled Heterosexual Men With Decreased Sexual Desire: How Many Roles Of Masturbations? Journal Of Sex And Marital Therapy, 41(6), 626-635. Doi:10.1080/0092623X.2014.958790; Voon, V., Et Al. (2014). Neural Correlates Of Sexual Cue Reactivity In Individuals With And Without Compulsive Sexual Behaviors, PLoS ONE, 9(7), E102419. Doi:10.1371/Journal.Pone.0102419; Janssen, E., & Bancroft, J. (2007). The Dual-Control Model: The Role Of Sexual Inhibition & Excitation In Sexual Arousal And Behavior. In Janssen, E. (Ed.), The Psychology Of Sex (Pp. 197-222). Bloomington, IN: Indiana University Press;
[4] Voon, V., Et Al. (2014). Neural Correlates Of Sexual Cue Reactivity In Individuals With And Without Compulsive Sexual Behaviors, PLoS ONE, 9(7), E102419. Doi:10.1371/Journal.Pone.0102419; Sun, C., Bridges, A., Johnason, J., & Ezzell, M. (2014). Pornography And The Male Sexual Script: An Analysis Of Consumption And Sexual Relations. Archives Of Sexual Behavior, 45(4), 1-12. Doi:10.1007/S10508-014-0391-2; Kalman, T. P., (2008). Clinical Encounters With Internet Pornography, Journal Of The American Academy Of Psychoanalysis And Dynamic Psychiatry, 36(4), 593-618. Doi:10.1521/Jaap.2008.36.4.593
[5] Damiano, P., Alessandro, B., & Carlo, F. (2015). Adolescents And Web Porn: A New Era Of Sexuality. International Journal Of Adolescent Medicine And Health, 28(2), 169-173. Doi:10.1515/Ijamh-2015-0003
[6] Stewart, D. N., & Szymanski, D. M. (2012). Young Adult Women’s Reports Of Their Male Romantic Partner’s Pornography Use As A Correlate Of Their Self-Esteem, Relationship Quality, And Sexual Satisfaction. Sex Roles, 67(5-6), 257-271.
[7] Leonhardt, N. D., & Willoughby, B. J. (2017). Pornography, Provocative Sexual Media, And Their Differing Associations With Multiple Aspects Of Sexual Satisfaction. Journal Of Social And Personal Relationships, 0265407517739162.
[8] Wright, P. J., Bridges, A. J., Sun, C., Ezzell, M. B., & Johnson, J. A. (2017). Personal Pornography Viewing And Sexual Satisfaction: A Quadratic Analysis. Journal Of Sex & Marital Therapy, 1-8.
[9] Wright, P. J., Steffen, N. J., & Sun, C. (2017). Is The Relationship Between Pornography Consumption Frequency And Lower Sexual Satisfaction Curvilinear? Results From England And Germany. The Journal Of Sex Research, 1-7.
[10] Streep, P. (2014, July 16). What Porn Does To Intimacy | Psychology Today. Retrieved From https://Www.Bing.Com/Cr…
[11] Scott, E. (2017, August 12). Watching Porn Is Leaving Women Unsatisfied By Real-Life Sex, Says New Study. Retrieved From http://Metro.Co.Uk/…/Watching-Porn-Is-Leaving-Women…/
[12] Initiative, T. (2017, August 21). Tobacco Is A Social Justice Issue: Mental Health. Retrieved From https://Truthinitiative.Org/…/Tobacco-Social-Justice…

Blog Image
পর্নের ক্ষতি…ছড়াচ্ছে খুব দ্রুত

কিছু কিছু মানুষ পর্নের ক্ষতি সম্পর্কে এখনও সংশয়-সন্দেহের মধ্যে দোদুল্যমান। তারা বলে পর্ন তো অনেক আগে থেকেই আমাদের মাঝে আছে। প্রাচীন গ্রিকদের মাটির আসবাবে বিভিন্ন যৌন চিত্রাঙ্কন দেখা যায়। প্রশ্ন হলো তৈজসপত্রে আঁকা সেসব ছবির সাথে বর্তমানের হাই রেজুরেশন পর্ন ভিডিওর তুলনা কতটা গ্রহণযোগ্য? এ যেন পেয়ারার সাথে স্ট্রবেরির তুলনা! প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে শুধু পর্নের কন্টেন্টই নয়, বরং পর্ন দেখার বয়স, সময়, পরিমাণ, পদ্ধতি¬¬¬¬¬- সবকিছুতেই পরিবর্তন এসেছে।

সালটা ১৯৫৩, হিউ হেফনার কেবলি প্লেবয় ম্যাগাজিনের প্রথম সংখ্যা বের করেছে। যৌনতা তখন সবে আমেরিকার সংস্কৃতিতে বিশেষ স্থান তৈরি করে নিতে শুরু করেছে। এরও পাঁচ বছর আগে ডা: আলফ্রেড কিনসে সেক্স নিয়ে খুব জনপ্রিয় একটি বই লিখেছিল। [১] বলা হয় তিনিই প্রথম বিজ্ঞানী ও লেখক যিনি সেক্স নিয়ে এত খোলাখুলিভাবে কথা বলেছিল। তার বইও প্রচুর বিক্রি হয়েছিল।[২]
আমেরিকান সংস্কৃতিতে যৌনতার এ প্রভাবকে টাকা কামানোর সুযোগ হিসেবে হেফনার কাজে লাগালো। তার ম্যাগাজিনের বিক্রি বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন চোখ ধাঁধানো সব ছবি বিজ্ঞাপনে ও পত্রিকায় দিতে শুরু করল। বিভিন্ন লেখকের লেখার পাশের পর্নোগ্রাফিক ছবিই ম্যাগাজিনের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠল। প্লেবয় ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে পর্ন নিছকই নির্দোষ বিনোদন হিসেবে মেনে সবাই উপভোগ করতে লাগল।
১৯৮০ সালের দিকে ভিসিআরে মানুষ ঘরে বসে মুভি দেখতে পারতো।[৩] যারা পর্ন দেখত তারা থিয়েটারে গিয়ে মুভি না দেখে ঘরে পর্ন মুভি এনে দেখা শুরু করল। অবশ্য ঘরে বসে সহজেই পাওয়ার সুযোগ তাদের ছিল না, বরং বাইরে থেকে কিনে এনে দেখতে হত। তাছাড়া পর্ন মুভি বেশ সহজলভ্যও ছিল তখন।
এরপর এলো ইন্টারনেট, পালটে দিল ইতিহাসের গতিপথ।[৪][৫]
ইন্টারনেটে প্রথম পর্ন আসা শুরু করে ১৯৯০ সাল থেকে।[৪] যাদের ইন্টারনেট কানেকশন আর ভিডিও দেখার প্রয়োজনীয় ডিভাইস ছিল তারা সহজে এসব ভিডিও দেখতে পেত। শুরু হলো অনলাইন পর্ন ইন্ডাস্ট্রির প্রসার- একেবারে ফুলে ফেপে উঠতে লাগল এর বিষাক্ত ছোবল। ১৯৯৮ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে পর্ন সাইটের বৃদ্ধির পরিমাণ ১৮০০%।[৬] ২০০৪ সাল থেকে পর্ন সাইটগুলোর ভিজিটর সংখ্যা গুগল, ইয়াহু আর এমএসএন সার্চ এর মিলিত মোট ভিজিটরের চেয়ে তিনগুণ বেশি হয়ে দাড়ায়।[৭] এটা এমন একটা রমরমা ব্যবসা হয়ে দাঁড়াল যা বিশ্ব আগে কখনও দেখেনি। ইন্টারনেটে থাকা তথ্যের ৩০% ই দখল করে নিল পর্ন।[৮] আর বিশ্বজুড়ে পর্ন ইন্ডাস্ট্রির আয় মাইক্রোসফট, গুগল, ইয়াহু, অ্যামাজন, ই-বে, অ্যাপল, নেটফ্লিক্স, আর্থলিংকের মিলিত আয়ের কয়েকগুণ হয়ে দাঁড়াল।[৯]
ইন্টারনেট পর্নের জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে তাল মিলিয়ে এর অন্ধকার জগত আরও অন্ধকার হতে অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে থাকল। আরও উগ্র আর কড়া ধাঁচের পর্ন তৈরি হতে থাকল। পর্ন সহজলভ্য হওয়ার পাশাপাশি পর্নোগ্রাফাররা তাদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে নিজেদের মাঝে পাল্লা দিতে লাগল, আর তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিও বাড়তে থাকল।[১০]
ডঃ নরম্যান ডয়জ একজন স্নায়ুবিজ্ঞানী, The Brain That Changes Itself বইয়ের লেখক। তিনি বলেন, ‘ত্রিশ বছর আগে হার্ডকোর পর্ন বলতে এমন পর্ন বোঝানো হতো যাতে যৌনমিলনের দৃশ্য একদম স্পষ্ট করে দেখানো হতো। তবে এখন হার্ডকোর পর্নে বিবর্তন হয়েছে। এখন হার্ডকোর পর্ন নৃশংস আর বিকৃত যৌনাচারে ভরে গেছে। এগুলোতে সহবাসকে কেবল নিজের লালসা পূরণ আর সঙ্গীর প্রতি আক্রোশ আর কষ্ট দেয়ার মাধ্যম হিসেবে দেখানো হয়। [১১]’ বর্তমানে পর্নে মানুষকে হীন আর অপমানিত করে এতটা নিচ নামানো হয় যা মিডিয়ায় আগে কখনও কেউ দেখেনি।[১২]
ডঃ নরম্যান ডয়জ আরও বলেন, ‘কয়েক দশক আগে যা ছিল হার্ডকোর এখন তা সফটকোর। আগের দিনের সফটকোর ক্যটাগরির ছবিগুলো এখনকার সময়ে টেলিভিশনে দর্শকদের যৌন সুরসুরি দেওয়ার জন্য নাচ-গান, মুভি-সিরিয়াল, পণ্যের বিজ্ঞাপনে দেখানো হচ্ছে’। [১৩]
পর্নের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর প্রভাব বৃদ্ধি পেতে লাগলো। টেলিভিশন নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে দর্শকদের ধরে রাখতে যৌন উদ্দীপক গ্রাফিক দৃশ্য চ্যানেলগুলোতে তারা দেখিয়ে যাচ্ছে।[১৪] ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে আমেরিকান টিভি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠানে যৌন দৃশ্যের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুন বেড়েছে। [১৬] আর এমনটা শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের অনুষ্ঠানেই সীমিত থাকেনি। ২০০৪-০৫ সালে চালানো একটি জরিপ হতে জানা যায় কিশোরদের জন্য নির্মিত ২০টি অনুষ্ঠানের শতকরা ৭০ ভাগেই যৌনতা দেখানো হয়।[১৬] এভাবেই পর্ন কোমলমতি কিশোরদের কৈশোরের একটি অংশ দখল করে নিল। বয়ঃসন্ধিকালে সেক্স সম্বন্ধে তাদের জানার প্রধান মাধ্যমে পরিণত হলো।[১৭]
আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন পর্নের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।[১৮] জনপ্রিয় অনেক গেইম এখন নগ্নতায় ভরপুর। [১৯] বরফের ওপর স্কী করার জন্য যেসব বোর্ড ব্যবহৃত হয় সেগুলোতে পর্ন পারফর্মারদের ছবি প্লাস্টার করা থাকে।[২০] এমনকি বাচ্চাদের খেলনাগুলোও আরও যৌন আবেদনময়ী হয়ে উঠছে। [২১]
প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে শুধু পর্নের কন্টেন্টই না, বরং পর্ন দেখার বয়স বা পরিমাণ দুটোই পরিবর্তিত হচ্ছে। পর্নে খুবই কমবয়সী ছেলে-মেয়েদের অভিনেতা হিসেবে দেখানো হচ্ছে এখন। এক জরিপ অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বছরের কমবয়সী প্রতি ৩ জন ছেলের ২ জনই পর্ন দেখে[২২], এদের অনেকেই নিজ নিজ ডিভাইসে দিনের অধিকাংশ সময়ই পর্ন দেখে।
এবার বলব পর্নের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটির কথা- মানব পাচার। আধুনিক দাস বাণিজ্যের পেছনে পর্ন ইন্ডাস্ট্রি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ন্যাশনাল হিউম্যান ট্র্যাফিকিং রিসোর্স সেন্টারের তথ্য মতে, পাচার হওয়া নারীদের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি দেহব্যবসায় ব্যবহৃত হয়, বিশ্বে যাদের সংখ্যা আনুমানিক ২১ মিলিয়ন।[২৩] একটি জরিপে ৬৩% অপ্রাপ্তবয়স্ক যৌন পাচারের ভুক্তভোগীরা জানায়, অনলাইনে তাদের বিজ্ঞাপন দেওয়া ও বেচাকেনা করা হয়।[২৪]
না, এটা তৃতীয় বিশ্বের কোনো সমস্যা নয়। যৌন পাচার, পর্ন সাইটে এদের প্রচারণা, পতিতাবৃত্তি, শিশু পাচার, পর্নে অংশগ্রহন করাতে বল প্রয়োগ, তাদের জোর করে ড্রাগ দেয়া- এসব যুক্তরাষ্ট্রেই বেশি হচ্ছে। মানব পাচারের সাথে দেহব্যবসার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এজন্য তাদের ওপর বলপ্রয়োগ, প্রতারণা বা প্ররোচনা- এমন কোনো উপায়ই বাদ নেই যা অবলম্বন করা হচ্ছে না।[২৫]
তদন্তে পাওয়া গিয়েছে পর্ন তৈরিতে যে মানব পাচার হয় তার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে- যেমন, অভাব-অনটন, মাদকাশক্তি, গৃহহীনতা ইত্যাদি।[২৬] জালে আটকিয়ে ফেলে একবার কোনোমতে তাদের পর্ন অভিনয়ে বাধ্য করা গেলে দেখা যায়, একসময় তারা নিজেরাও আর এথেকে বের হতে পারে না।[২৭]
বর্তমান সময়ে পর্নের এ মারাত্মক প্রভাব বিস্তারই প্রমাণ করে যে, “পর্ন স্বাভাবিক কিছু, এটি কোনো ক্ষতি করে না”- এমন ধারণা ডাহা মিথ্যা কথা। একদম শুরুর দিকের তুলনায় বর্তমানে পর্ন হাজারগুণ সহজলভ্য হয়েছে, অনেক বেশি প্রচার-প্রসার লাভ করেছে, আরও বেশি উগ্র ও তীব্র রূপ ধারণ করেছে। এখন যেসব পর্ন পাওয়া যায় সেগুলোর তুলনায় আগের যুগের ম্যাগাজিনগুলো কিছুই না।[২৮] আর অল্পবয়স্ক ছেলে-মেয়েরাও জানে, তাদের বাবা-মায়েরা অনেক কিছুই টের পায় না।
আশার কথা হল, পর্নোগ্রাফির এ অভূতপূর্ব প্রসার লাভের সাথে সাথে এমন কিছু সংস্থা ও মানুষ জেগে উঠেছে যারা এ বিষাক্ত থাবা রোধ করতে, এর জালে আটকদের মুক্ত করতে মাঠে নেমেছে। পর্নোগ্রাফি একটি নতুন সমস্যা, তবে এর সমাধানও মানবজাতির কাছে পূর্ব হতেই আছে। আর সেগুলো হলো জ্ঞান, সচেতনতা এবং ভালোবাসার মানুষটির সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকা।

অনুবাদ: #teamFAD

রেফারেন্স:
[১] Brown, T. M., & Fee, E. (2003). Alfred C. Kinsey: A Pioneer of Sex Research. American Journal of Public Health 93(6), 896-897. Retrieved from https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC1447862/
[২] Mestel, R. (2004, November 15). The Kinsey effect. Los Angeles Times. Retrieved from http://articles.latimes.com/2004/nov/15/health/he-kinsey15
[৩] Kalman, T.P. (2008). Clinical Encounters with Internet Pornography. Journal of the American Academy of Psychoanalysis and Dynamic Psychiatry, 36(4) 593-618. doi:10.1521/jaap.2008.36.4.593; McAline, D. (2001). Interview on American Porn. Frontline, PBS, August.
[৪] Layden, M. A. (2010). Pornography and Violence: A New look at the Research. In J. Stoner & D. Hughes (Eds.) The Social Costs of Pornography: A Collection of Papers (pp. 57–68). Princeton, NJ: Witherspoon Institute; Kalman, T.P. (2008). Clinical Encounters with Internet Pornography. Journal of the American Academy of Psychoanalysis and Dynamic Psychiatry, 36(4) 593-618. doi:10.1521/jaap.2008.36.4.593;
[৫] Paul, P. (2007). Pornified: How Pornography Is Transforming Our Lives, Our Relationships, and Our Families. New York: Henry Hold & Co., 3; McCarthy, B. W. (2002). The Wife’s Role in Facilitating Recovery from Male Compulsive Sexual Behavior. Sexual Addiction & Compulsivity 9, 4: 275–84. doi:10.1080/10720160216045; Schneider, J. P. (2000). Effects of Cybersex Addiction on the Family: Results of a Survey. Sexual Addiction & Compulsivity, 7(1-2), 31–58. Retrieved from http://www.jenniferschneider.com/articles/cybersex_family.html
[৬] Websense Research Shows Online Pornography Sites Continue Strong Growth. (2004). PRNewswire.com, April 4.
[৭] Porn More Popular than Search. (2004). InternetWeek.com, June 4.
[৮] Negash, S., Van Ness Sheppard, N., Lambert, N. M., & Fincham, F. D. (2016). Trading Later Rewards for Current Pleasure: Pornography Consumption and Delay Discounting. Journal of Sex Research, 53(6), 689-700. doi:10.1080/00224499.2015.1025123; Porn sites get more visitors each month than Netflix, Amazon, & Twitter combined. (2013, May 4). Huffington Post. Retrieved from http://www.huffingtonpost.com/2013/05/03/internet-porn-stats_n_3187682.html
[৯] DeKeseredy, W. (2015). Critical Criminological Understandings of Adult Pornography and Women Abuse: New Progressive Directions in Research and Theory. International Journal for Crime, Justice, and Social Democracy, 4(4) 4-21. doi:10.5204/ijcjsd.v4i4.184
[১০] Woods, J. (2012). Jamie Is 13 and Hasn’t Even Kissed a Girl. But He’s Now On the Sex Offender Register after Online Porn Warped His Mind. Daily Mail (U.K.), April 25.
[১১] Doidge, N. (2007). The Brain That Changes Itself. New York: Penguin Books.
[১২] DeKeseredy, W. (2015). Critical Criminological Understandings of Adult Pornography and Women Abuse: New Progressive Directions in Research and Theory. International Journal for Crime, Justice, and Social Democracy, 4(4) 4-21. doi:10.5204/ijcjsd.v4i4.184
[১৩] Doidge, N. (2007). The Brain That Changes Itself. New York: Penguin Books.
[১৪] Caro, M. (2004). The New Skin Trade. Chicago Tribune, September 19.
[১৫] Kunkel, D., Eyal, K., Finnerty, K., Biely, E., and Donnerstein, E. (2005). Sex on TV 4. Menlo Park, CA: The Henry J. Kaiser Family Foundation.
[১৬] Peter, J. and Valkenburg, P. M. (2007). Adolescents’ Exposure to a Sexualized Media Environment and Their Notions of Women as Sex Objects. Sex Roles 56,(5-6), doi:381–95.10.1007/s11199-006-9176-y
[১৭] Peter, J. & Valkenburg, P. M., (2016) Adolescents and Pornography: A Review of 20 Years of Research. Journal of Sex Research, 53(4-5), 509-531. doi:10.1080/00224499.2016.1143441; Rothman, E. F., Kaczmarsky, C., Burke, N., Jansen, E., & Baughman, A. (2015). “Without Porn…I Wouldn’t Know Half the Things I Know Now”: A Qualitative Study of Pornography Use Among a Sample of Urban, Low-Income, Black and Hispanic Youth. Journal of Sex Research, 52(7), 736-746. doi:10.1080/00224499.2014.960908; Paul, P. (2010). From Pornography to Porno to Porn: How Porn Became the Norm. In J. Stoner & D. Hughes (Eds.) The Social Costs of Pornography: A Collection of Papers (pp. 3–20). Princeton, N.J.: Witherspoon Institute; Carroll, J. S., Padilla-Walker, L. M., and Nelson, L. J. (2008). Generation XXX: Pornography Acceptance and Use Among Emerging Adults. Journal of Adolescent Research, 23(1), 6–30. doi:10.1177/0743558407306348
[১৮] Bridges, A. J. (2010). Pornography’s Effect on Interpersonal Relationships. In J. Stoner and D. Hughes (Eds.) The Social Costs of Pornography: A Collection of Papers (pp. 89-110). Princeton, NJ: Witherspoon Institute; Paul, P. (2010). From Pornography to Porno to Porn: How Porn Became the Norm. In J. Stoner and D. Hughes (Eds.) The Social Costs of Pornography: A Collection of Papers (pp. 3–20). Princeton, N.J.: Witherspoon Institute; Doidge, N. (2007). The Brain That Changes Itself. New York: Penguin Books, 102; Caro, M. (2004). The New Skin Trade. Chicago Tribune, September 19.
[১৯] Paul, P. (2010). From Pornography to Porno to Porn: How Porn Became the Norm. In J. Stoner and D. Hughes (Eds.) The Social Costs of Pornography: A Collection of Papers (pp. 3–20). Princeton, N.J.: Witherspoon Institute.
[২০] Paul, P. (2010). From Pornography to Porno to Porn: How Porn Became the Norm. In J. Stoner and D. Hughes (Eds.) The Social Costs of Pornography: A Collection of Papers (pp. 3–20). Princeton, N.J.: Witherspoon Institute.
[২১] Bridges, A. J. (2010). Pornography’s Effect on Interpersonal Relationships. In J. Stoner and D. Hughes (Eds.) The Social Costs of Pornography: A Collection of Papers (pp. 89-110). Princeton, NJ: Witherspoon Institute.
[২২] Rothman, E. F., Kaczmarsky, C., Burke, N., Jansen, E., & Baughman, A. (2015). “Without Porn…I Wouldn’t Know Half the Things I Know Now”: A Qualitative Study of Pornography Use Among a Sample of Urban, Low-Income, Black and Hispanic Youth. Journal of Sex Research, 52(7), 736-746. doi:10.1080/00224499.2014.960908
[২৩] University of New England, “Human Sex Trafficking: An Online Epidemic #Infographic” (2015). Retreived by http://www.visualistan.com/2015/02/human-sex-trafficking-online-epidemic.html
[২৪] Thorn, “A Report on the Use of Technology to Recruit, Groom, And Sell Domestic Minor Sex Trafficking Victim (2015). Retrieved from https://www.wearethorn.org/wp-content/uploads/2015/02/Survivor_Survey_r5.pdf
[২৫] Trafficking Victims Protection Act (TVPA) of 2000. Pub. L. No. 106-386, Section 103 (8) (A).
[২৬] Countryman-Roswurm, Karen (2017). Primed for Perpetration: Porn And The Perpetuation Of Sex Trafficking. Guest blog for FTND, retrieved from https://fightthenewdrug.org/fighting-sex-trafficking-absolutely-includes-fighting-pornography/
[২৭] Dr. Karen Countryman-Roswurm, LMSW, Ph.D. Interview || Truth About Porn [Video file]. (2016, December 28). Retrieved from https://vimeo.com/190317258
[২৮] Price, J., Patterson, R., Regnerus, M., & Walley, J. (2016). How Much More XXX is Generation X Consuming? Evidence of Changing Attitudes and Behaviors Related to Pornography Since 1973. Journal of Sex Research, 53(1), 12-20. doi:10.1080/00224499.2014.1003773

Blog Image
ইন্সটাগ্রামে ‘নো নুডিটি’ পলিসি থাকার পরও সেখানে কেন এত পর্ন

ইন্সটাগ্রাম বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপস গুলোর একটি। এর ব্যবহারকারী প্রায় এক বিলিয়ন। শিশু, যুবক, বৃদ্ধ- সবার কাছেই এটি বেশ আকর্ষণীয় এক প্ল্যাটফর্ম। বলা হয়, ইন্সটাগ্রাম একটি ফ্যামিলি-ফ্রেন্ডলি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। বাস্তবিকই ইন্সটাগ্রামে সামাজিক মূল্যবোধ, পর্নের ক্ষতিকর প্রভাব, নারী ও শিশু পাচারের সাথে পর্নের সম্পর্কসহ বহু সমস্যা নিয়ে অনেক আলোচনা করা হয়।
.
টিনেজারদের মাঝে ফেসবুকের পর ইন্সটাগ্রাম সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া। ইন্সটাগ্রামের ‘নো নুডিটি’ নামে পলিসির কারণে বিশেষ কিছু বিষয় বাদে বাকি সব পর্নোগ্রাফিক ছবির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত এবং সেগুলো সেখানে দেয়া যায় না বলে দাবি করা হয়।[১]
কিন্তু ইন্সটাগ্রামে পর্ন দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এধরনের কোনো শব্দ লিখে সার্চ দিলেই সেগুলো বেরিয়ে আসে। এসব শব্দের হ্যাশট্যাগ দিয়ে অসংখ্য অশালীন পর্ন ছবি পোস্ট করা হয় যেগুলো ইন্সটাগ্রাম ফিল্টার করে না।
তাহলে, ইন্সটাগ্রামে এত শক্ত ‘নো নুডিটি’ পলিসি থাকার পরেও এমন হয় কি করে?
.
সবখানে পর্নের সহজলভ্যতা
=====================
বর্তমানে অনেক ফ্রি পর্নসাইট থাকায় পর্ন পারফর্মাররা আগের মতো বেশি অর্থ আয় করতে পারছে না। ইন্সটাগ্রাম, স্নাপচ্যাট এর মতো জায়গায় তাদের প্রচারণা চালিয়ে বিভিন্ন প্রিমিয়াম সাবস্ক্রাইবার সংগ্রহ করে তারা অর্থ আয়ের চেষ্টা করে।
.
Protect Young Eyes নামক একটি সংস্থা ইন্টারনেটে ক্ষতিকর ও অনুপযুক্ত কন্টেন্ট থেকে শিশুদের দূরে রাখতে কাজ করে। তারা ইন্সটাগ্রামে পর্ন থাকার ব্যপারে পরীক্ষা চালায়। [২] ‘নো নুডিটি’ পলিসি থাকার পরও ইন্সটাগ্রামে তারা পর্ন সম্পর্কিত কিছু হ্যাশট্যাগ পায়, যেগুলোতে পর্নের লিংক ছিল। এ ব্যপারে ইন্সটাগ্রামকে তারা জানালেও এসব প্রতিরোধে ইন্সটাগ্রাম কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ইন্সটাগ্রাম কেন এসব হতে দেয় সেই প্রশ্নের উত্তর সরাসরি জানা যায়নি। তবে এর পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে, যেমনঃ ১) এসব দ্বারা তারাও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, ২) এসব কন্টেন্ট রোধ করার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা তাদের হাতে নেই।
আমরা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো কোনো কথা বলছি না। আমরা শুধু সচেতনতা বৃদ্ধি আর ইন্সটাগ্রাম ইউজারদের সতর্ক করতে চাচ্ছি।
.
মূল সমস্যায় নজর না দেয়া
====================
অনুপযুক্ত কন্টেন্টের উপস্থিতির ব্যাপারে ইন্সটাগ্রাম ভাসা ভাসা স্বীকারোক্তি দিলেও তারা দায় এড়িয়ে গিয়েছে এবং এসব রোধকল্পে কোনো ব্যবস্থাও তারা নেয়নি। তাদের ওয়েবসাইটে সেফটি এবং প্রাইভেসি টিপস, শিশুদের কিভাবে ইন্সটাগ্রাম চালানোর সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে হবে তা নিয়ে বাবা-মাদের জন্য বিশাল গাইডলাইন দেয়া আছে। তাদের “Parents Guide to Instagram,” অর্থাৎ, বাবা-মাদের জন্য দেয়া নির্দেশিকায় পর্নোগ্রাফি শব্দটি পর্যন্তও তারা ব্যবহার করেনি। আর অনুপযুক্ত কন্টেন্ট রিপোর্ট এর ক্ষেত্রে শুধু হয়রানি, সহিংসতা এবং নিপীড়নের কথা বলা আছে।
.
ইন্সটাগ্রাম যুবসমাজে বহুল প্রচলিত, তাই এতে পর্নের উপস্থিতি একটি উদ্বেগের বিষয়।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা মতে পর্ন যেকোনো বয়সের মানুষের জন্যই ক্ষতিকর, চাই সে যুবক হোক কিংবা বৃদ্ধ। কিন্তু শিশুদের জন্য পর্ন আরও বেশি ক্ষতিকর। এটা জানা কথা যে পর্ন আসক্তি একজন ব্যক্তির চিন্তা ভাবনা, রুচি, যৌন জীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। ফলে ব্যক্তির মাঝে উগ্রতা আর পশুত্ব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে [৩] , এমনকি তার মস্তিষ্কেরও বিকৃতি ঘটে। শুধু তাই নয়, পর্ন শিশু কিশোরদের মানসিক রোগীতে পরিণত করে, [৪] তারা স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে পারেনা। পর্নের অন্ধকার জগতের বিষাক্ত ছোবল থেকে তাদের রক্ষা করতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
.
আরও কিছু কথা
============
আমাদের লেখা পড়ে ভাববেন না যে আমরা ইন্সটাগ্রাম বিরোধী। আমরা মনে করি একে আমাদের জীবনে ভালো কাজে লাগাতে পারি।
কিন্তু পর্নের কারণে আমরা বিশেষ করে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। ছোট বয়সে পর্নের নীল অন্ধকারে হারিয়ে গেলে আমাদের সন্তানেরা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। তাদের মাঝে ভয়ঙ্কর সব যৌন রোগ, সমকামিতা, ব্যভিচার, উগ্র যৌনতা, হিংস্রতা ছড়িয়ে যাবে। পশুর মত জীবনে তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়বে! শারীরিক দুর্বলতা, মানসিক সমস্যা, পুরুষত্বহীনতা, সন্তান জন্মদানে অক্ষমতার মতো ভয়াবহ সমস্যাগুলো তাদের মাঝে প্রকাশ পাবে। পর্ন এতটা ক্ষতিকর হওয়ার পরও কি আমরা এর বিরোধিতা করবো না? ইন্সটাগ্রামে পর্ন বন্ধে আমাদের ভাবার এখনই সময়।
.
যদিও ইন্সটাগ্রাম এ বিষয়ে আপাতত তেমন কিছু করছে না, কিন্তু আমরা নিজেরা তো নিজেদের এবং পাশাপাশি অন্যদের এর ক্ষতি থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করতে পারি! শালীনতা, সুশিক্ষা, দায়িত্বশীলতা এবং জনসচেতনতা আমাদের আগামীর পৃথিবীকে সুন্দর ও ভালবাসাময় করে তুলবে। সত্যিকারের মানুষ হিসেবে আমাদের গড়ে তুলবে। আওয়াজ তোলার সময় এখনই!
.
অনুবাদ: #teamFAD

(রেফারেন্স কমেন্টে)

Blog Image
নেপালে পর্ন নিষিদ্ধ । ১০ বছরে ধর্ষনের হার বেড়েছে ৩০০%

সাম্প্রতিক সংবাদমতে, গত ৪ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখে নেপাল কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ২৪,০০০ পর্ন সাইট বন্ধ/ব্লক করে দিয়েছে।
.
সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, “ইন্টারনেটের মাধ্যমে পর্ন এবং অশ্লীল কন্টেন্ট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ ও সৌহার্দ্য নষ্টের সম্মুখীন এবং এতে যৌন সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
.
টেলিকম কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে, নেপালে শতকরা ৬০ জন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। জুনে ‘নেপালি টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, ২০১৬-২০১৭ সালে মোট ১,৬৬৭ টি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়। তুলনা করে দেখা গিয়েছে দশ বছরে মামলার সংখ্যা ৩০০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
.
শুধু গত দুমাসেই পুলিশ ধর্ষণ ও ধর্ষণ-চেষ্টা মিলিয়ে ৪৭৯ টি মামলা রেজিস্টার করেছে যা ২০০৮-২০০৯ সালে করা মোট মামলার চেয়ে বেশি। যদিও অনেক নারী পুলিশের কাছে সহিংসতার রিপোর্ট করছে, নারীবাদী সংস্থাগুলো বলছে অনেক ঘটনাই রিপোর্টের আড়ালে থেকে যায়।
.
প্রশ্ন উঠতে পারে পর্ন আর যৌন সহিংসতা কি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ।
.
পর্ন এবং যৌন হয়রানি
==================
সম্প্রতি ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির বরেণ্য অধ্যাপক যৌন সহিংসতা গবেষক ড. জন ডি. ফুবার্ট পর্নোগ্রাফি আর যৌন সহিংসতার সম্পর্ক নিয়ে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,

“কীভাবে যৌন সহিংসতা থামানো যায় এ নিয়ে আমি ২৫ বছর ধরে গবেষণা করছি। ১০ বছর আগে পর্যন্ত আমি এই অপরাধে প্রলুব্ধকারী একটি জিনিসকে ধরতে পারিনি, যদিও সেটা গোপন কিছু ছিল না। সে জিনিসটি যুবকদের কাছে ধর্ষণকে পছন্দনীয় করে তোলে। শুধু তাই নয়, সেটি যুবতী মেয়েদেরকেও বুঝাতে চায় যে তারা ধর্ষণকে স্বাভাবিক ভাবতে শিখুক, সেটা হচ্ছে বর্তমান সময়ের হাই-স্পিড ইন্টারনেটে পাওয়া পর্নোগ্রাফি। পর্নোগ্রাফি নারী-পুরুষের স্বাভাবিক শারীরিক সম্প যৌনতাকে বিকৃত ও অসভ্য রূপে ইয়াং জেনারেশনের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। যুবসমাজ এসব শিখে প্রভাবিত হচ্ছে।” [১]
.
ড. ফুবার্ট বলেন, বর্তমান সময়ের ইন্টারনেট পর্ন আগের দিনের প্লেবয় ম্যগাজিন পর্নের মতো নয়। বিভিন্ন গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্নগুলোর ৮৮% দৃশ্যে নারীর প্রতি মৌখিক বা শারীরিক আগ্রাসন দেখানো হয়। [২] এর চেয়েও খারাপ ব্যাপার হচ্ছে, ৯৫% ক্ষেত্রে যখন পুরুষটি নারীটির প্রতি হিংস্র হয়ে ওঠে অথবা তাকে অবমাননা করে সেক্ষেত্রে নারীকে দেখানো হয় তাতে বাধা দিচ্ছেই না বরং সে তা উপভোগ করছে। [৩]

ড. ফুবার্ট ব্যাখ্যা করেন এভাবে,

“ভেবে দেখুন একজন ১১ বছর বয়সী ছেলে বা মেয়ে এসব কীভাবে গ্রহন করতে পারে? পর্নোগ্রাফি ছেলেদের শেখায় মেয়েদের প্রহার করতে, আর মেয়েদের শেখায় তা পছন্দ করতে। বর্তমানের মূলধারার পর্নে যে হিংস্রতা দেখানো হয় তা অসভ্য নয় বা এসবের সাথে পরিচিত নয় এমন সাধারণ মানুষকে রীতিমত চমকে দেবে। অনেক পর্ন ভিডিওতে একাধিক ব্যক্তিকে একজন মহিলাকে উপভোগ করতে দেখা যায়। ওরাল সেক্স থেকে শুরু করে যা খুশি তা-ই করে তারা (যারা পর্ন দেখেছেন তারা ব্যাপারগুলো ভালোভাবেই জানেন। একটাবার চিন্তা করুন, কতোটা অসাস্থ্যকর কাজ করা হয় সেখানে)। এত জঘন্য বিষয়গুলো কখনোই দেখা উচিত নয়। অর্ধেকের বেশি ছেলে তাদের কৈশোরে পদার্পণ করার আগেই হার্ডকোর পর্ন দেখে ফেলে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, এতে তাদের মানসিকতা মারাত্মকভাবে কলুষিত হয়”। [৪]
.
কোনো কোনো গবেষণা বলতে চায়, “যত বেশি পর্ন দেখবে, তত কম সহিংসতা হবে।” কিন্তু পরবর্তী বিভিন্ন গবেষণায় এটি নিতান্তই ভুল তত্ত্ব হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৫ সালের একটি গবেষণা বলছে, ইন্ডিয়ায় ইন্টারনেট আর পর্ন এর কারণে শিশুদের প্রতি যৌন সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু মেয়েদের ধর্ষণ বেড়ে গিয়েছে।
.
পর্ন এবং যৌন হয়রানির মাঝে সম্পর্কটা এবার ধরতে পেরেছেন?
.
নিষিদ্ধ করাই কি সমাধান?
====================
পর্ন নিষিদ্ধ নেপালই প্রথম নয়। ২০১৬ এর সেপ্টেম্বরে রাশিয়া সরকার অনেকগুলো বড় বড় পর্ন সাইট বন্ধ করে দিয়েছিল। আর মানুষকে উৎসাহিত করছিল যেন তারা বাস্তব জীবনে প্রকৃত মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্ব দেয়। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ইন্ডিয়ায় পুরো দেশজুড়ে পর্ন নিষিদ্ধের আইন করা হয়েছিল এবং ৮৫০টিরও অধিক পর্ন সাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এটি তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রচার পেয়েছিল। একই সংবাদ যুক্তরাজ্যেও পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে ইন্টারনেট প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য পর্নসাইটে প্রবেশ নিষেধের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
.
আমরা পর্নের বিষাক্ত ছোবল থেকে মানুষকে রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি এবং এর ক্ষতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরপর তারা কী সিদ্ধান্ত নেন তা তাদের ব্যাপার।
সম্প্রতি নেপালে পর্ন নিষিদ্ধ করার আইনের সাথে আপনি একমত হন বা না হন, কিন্তু এটা পরিষ্কার যে, পর্ন আর যৌন সহিংসতার মাঝে গভীর যোগসূত্র বিদ্যমান।
.
(আমাদের দেশেও প্রতিনিয়ত ধর্ষণের হার বেড়ে চলেছে। এর পেছনে পর্ন যে একটি অন্যতম কারণ এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা চাই না আমাদের দেশটা নেপাল, ভারত কিংবা অ্যামেরিকায় পরিণত হোক। তাই সময় থাকতেই পর্নের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে কথা বলুন। নিজে বাঁচুন। একটি প্রজন্মকে বাঁচান।)
.
অনুবাদ: #teamFAD

রেফারেন্স:
[১] Foubert, John D. (2017) “The Public Health Harms Of Pornography: The Brain, Erectile Dysfunction, And Sexual Violence,” Dignity: A Journal On Sexual Exploitation And Violence: Vol. 2: Iss. 3, Article 6. DOI: 10.23860/Dignity.2017.02.03.06

[২] Bridges, A. J., Wosnitzer, R., Scharrer, E., Sun, C., & Liberman, R. (2010). Aggression And Sexual Behavior In Best-Selling Pornography Videos: A Content Analysis Update,” Violence Against Women, 16, 1065-1085. Doi: 10.1177/1077801210382866

[৩] Bridges, A. J., Wosnitzer, R., Scharrer, E., Sun, C., & Liberman, R. (2010). Aggression And Sexual Behavior In Best-Selling Pornography Videos: A Content Analysis Update,” Violence Against Women, 16, 1065-1085. Doi: 10.1177/1077801210382866

[৪] Foubert, John D. (2017) “The Public Health Harms Of Pornography: The Brain, Erectile Dysfunction, And Sexual Violence,” Dignity: A Journal On Sexual Exploitation And Violence: Vol. 2: Iss. 3, Article 6. DOI: 10.23860/Dignity.2017.02.03.06

Blog Image
একাকী মৃত্যু

বেশিদিন আগের কথা নয়। একটি রিপোর্টে জানানো হয় – এক ব্যক্তি পর্ন ম্যাগাজিনের বিশাল স্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা যায়।

শুনতে অদ্ভুত লাগার কথা। তবে আসল ঘটনা ঠিক এমন নয়। লোকটি জাপানের একটি এপার্টমেন্টে মারা যায়। মৃত্যুর এক মাস পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল পঞ্চাশ বছর। ঘটনাস্থলে তার সাথে ছিল একগাদা পর্নের কালেকশন। জাপানের একটি নিউজ ম্যাগাজিনের (Nikken Spa) তথ্যানুসারে লোকটি হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়।

যদিও কিছু রিপোর্টে ভুয়া খবর আসে, তবে প্রকৃত ঘটনা আসলেই মর্মান্তিক। পর্ন ম্যাগাজিনের মজুতদার ঐ ব্যক্তি একা সেগুলোর মাঝে মারা যায়। জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে সময় দেওয়ার মতো কেউ তার পাশে ছিল না। তার কথাও মনে পড়েনি কারও, শুধু বাড়িওয়ালা বাদে। বাসার ভাড়া দিতে দেরি হওয়ায় সে তাকে খুঁজছিল। খুবই বেদনাদায়ক, তাই না?

পর্নোগ্রাফি একজন মানুষকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। জাপানসহ পৃথিবীতে একাকী মৃত্যুবরণকারী লোকের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পেছনে কারণ কী? আর পর্নোগ্রাফিই বা এসবের সাথে কীভাবে জড়িত? আসুন, জানা যাক।

একাকীত্ব
বিগত কয়েক দশকে জাপানে বিভিন্ন সামাজিক কারণে একাকী মৃত্যুর ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। মানুষ পরিবারকে গুরুত্ব দিচ্ছেনা। এছাড়াও পর্নোগ্রাফির সাময়িক আনন্দ সম্পর্কগুলোকে আরও ভঙ্গুর করে দিচ্ছে। টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি পরিবহন কোম্পানির মালিকের দেয়া ইন্টারভিউ হতে জানা যায়, এরকম মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। তার কোম্পানি এমন অনেক লাশ পরিবহন করেছে। অনেকের লাশ তো মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ বা মাস খানেক পরেও পাওয়া যায়। তিনি বলেন, “একাকী মৃত্যুবরণকারী বেশির ভাগ লোকই ছন্নছাড়া জীবনযাপন করে। তারা খুব বেখেয়ালি আর দায়িত্বহীন থাকে। কোনো সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় না। তাই তারা সহজেই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।”

শুধু বৃদ্ধরা নয় জাপানে তরুণরাও একইভাবে নিঃসঙ্গতায় ভুগছে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত এক সরকারি জরিপ অনুযায়ী জাপানে ৪২ শতাংশ পুরুষ ও ৪৪.২ শতাংশ নারী অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক অবিবাহিত। এদের বয়স ১৮-৩৪। অন্য কিছু হিসাব অনুযায়ী ৮৫.৭ শতাংশ পুরুষ ও ৮৯.৩ শতাংশ নারী বিয়ের ব্যাপারে উদাসীন।

সিএনএন এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী বাস্তবতার ওপর ফ্যান্টাসিকে প্রাধান্য দেওয়ার মানসিকতা থেকে জাপানের মানুষদের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন হবার মতো অবস্থা বিরাজ করছে। জাপানে পর্নোগ্রাফির ব্যাপকতা অনেক বেশি। সেখানে অ্যানিমেটেড পর্ন খুবই সহজলভ্য। এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, জাপানের পর্ন ইন্ডাস্ট্রি তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন ধরণের পর্ন নিয়ে আসছে। এতে নিঃসঙ্গদের নিঃসঙ্গতা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।

পারিবারিক সম্পর্ক
একাকী আপনজনহীন মৃত্যুর ব্যাপারটা হঠাৎ স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্তদের মাঝে। কর্মজীবন শেষে তারা সবকিছুতেই কেমন যেন বিতৃষ্ণা অনুভব করে। একইসাথে তাদের আত্মসম্মানবোধও কমে যায়। তারা নির্জনে একটা নিঃসঙ্গ জীবন গড়ে তোলে। যেখানে প্রিয়জনের অভাব পূরণ করতে নিঃসঙ্গতার তাদের সঙ্গী হয় পর্নোগ্রাফি।

রিসার্চ বলে পর্নোগ্রাফি আর ভার্চুয়াল ফ্যান্টাসিতে বেশি মত্ত থাকার ফলে একজন ব্যক্তি বাস্তব জীবনের ভালোবাসা, এমনকি যৌনমিলনেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। তাই অনেক পর্ন আসক্তদের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তারা বাস্তবে যৌনমিলনে তেমন আনন্দ পায় না; বন্ধুত্ব, ভালোবাসা তাদের কাছে অর্থহীন মনে হয়। ফলে তারা নিঃসঙ্গতার জালে আটকে যায়।

বিশ্বব্যাপি এই সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জাপানের ঐ পর্ন সরবরাহকারী নিঃসঙ্গ লোকটির ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই ঘটেছে। টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয় – টোকিও শহরে একদল প্রতিবেশী ‘একাকী মৃত্যু’ হতে সচেতনতা বাড়াতে এলাকাবাসীর মাঝে প্রচারণা চালায়। তারা বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করছে। সেখানে নিউজলেটার বিতরণ করা হয় এবং যারা একা থাকেন তাদেরকে সামাজিক জীবনযাপন করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এই ধরণের প্রচারণায় পর্নোগ্রাফির ব্যাপারটাও তুলে ধরা উচিত।

পর্নকে ট্যাবু বানিয়ে রাখা
পর্ন ম্যাগাজিনের মদতদাতা লোকটির বাসা পরিষ্কার করেছিলেন এমন এক ব্যক্তির সাক্ষাতকার নিয়েছিল Nikkan Spa। সে বলেছিল, “আমরা তার বাসা থেকে পর্নের সাথে সম্পর্কিত সব জিনিস সরিয়ে ফেলি, যাতে তার আত্মীয়রা না জানতে পারে।” চিন্তা করুন, একাকীত্বের সাথে যখন পর্নের ইফেক্ট নিয়ে কথা বলাটাও ট্যাবু হয়ে দাঁড়ায় তখন একাকী মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়া আর কী আশা করা যেতে পারে।

আমরা সবাই একটি সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন চাই। চাই ভালোবাসা ও সুসম্পর্কের মাঝে বাঁচতে। পর্নোগ্রাফি নামক যে দানবের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করছি, তা আজ জাপানের বিচ্ছিন্ন সমাজ ব্যবস্থার জন্য দায়ী। এটি স্বাভাবিক সম্পর্কগুলোর ধারণাকে বিকৃত করে দেয়। বিচ্ছিন্নতা আর উগ্রতার সংস্কৃতি লালন করে। অথচ আমরা চাই না প্রিয়জনদের জায়গায় প্রযুক্তিকে স্থান দিতে। আর তাই পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়াটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমরা এমন একটি সমাজকে মেনে নিতে পারিনা যেখানে বৈষম্য, বিচ্ছিন্নতা ও উগ্রতা বিরাজ করে। কারণ, ভালোবাসা অনেক দামি কিছু। কেউই ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হতে চায় না।
.
অনুবাদ: #teamFAD

Blog Image
পর্ন স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর

আমরা সবাই অনেক ধরনের সতর্কবাণী লেবেল দেখেছি। একজন ধূমপায়ী যখন সিগারেটের প্যাকেট কিনে, সে তাতে তামাক ব্যবহারের গুরুতর স্বাস্থ ঝুঁকি উল্লেখ করা সতর্কবাণী দেখতে পায়।

সিগারেট কোম্পানিগুলোকে এই নিয়ম অনুসরণ করতে বাধ্য হয়। একজন ধূমপায়ী সিগারেটের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলো জেনেশুনেই সিগারেট কিনছেন—এমনটা নিশ্চিত করার জন্যই এ ব্যবস্থা। যদিও একটি সতর্ককারী লেবেল দ্বারা সিগারেট ক্রয়-বিক্রয় পুরোপুরি থামানো যায় না, তবে এটি ধূমপায়ীদের জন্য সিগারেট ছাড়ার একটি রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করতে পারে।
লক্ষ লক্ষ মানুষ অজ্ঞাতসারে নিজেদের স্বাস্থকে ঝুঁকির সম্মুখীন করছে। অথচ এ সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারনাই নেই। আপনি হয়ত জেনে অবাক হবেন যে, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের স্বাস্থের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি বস্তু নিয়ে আমাদের সতর্ক করা হচ্ছে না।

বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও, আমাদের এই প্রজন্মের তরুণদের স্বাস্থ ঝুঁকির একটি অন্যতম কারণ হলো পর্নোগ্রাফি।
বৈজ্ঞানিক নানা গবেষণার মাধ্যমে আমরা আজ জানতে পারছি যে, পর্নোগ্রাফি একটি আসক্তি। পর্ন আমাদের ব্রেইনের স্বাভাবিক গঠনকে ঠিক ড্রাগের মতোই পরিবর্তিত করে। ফলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদি পর্ন মুভির প্রযোজকেরা তাদের ভিডিওগুলোতে সতর্কবাণী লেবেল ব্যবহার করতে বাধ্য হত, তাহলে তা অনেকটা এরকম হতো—

একটু চিন্তা করে দেখুন… সারা পৃথিবীতে আজ লক্ষ-লক্ষ মানুষ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। এই আসক্তির কারণে অনেক পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসছে। অথচ বেশির ভাগ মানুষই এর ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত নন । আমাদের বর্তমান সমাজ যেখানে শারীরিক সুস্থতা নিয়ে অনেক সচেতনতা সৃষ্টি করছে, সেখানে পর্নোগ্রাফির বিষয়টাতে এমন অসচেতনতা সত্যিই দুঃখজনক।
প্রতিদিনই আমরা ক্যান্সার কিংবা অন্য কোনো অসুখের জন্য দায়ী নতুন নতুন সব কেমিক্যালের নাম শুনি। জানি নতুন কোনো ব্যায়াম সম্পর্কে, যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর; অথচ আমরা কোথাও পর্নোগ্রাফির ক্ষতি সম্পর্কে জানতে পারছি না। যে সংস্কৃতি আমাদেরকে সু-স্বাস্থ অর্জনের সকল পথ দেখায় বলে দাবি করে, সে সংস্কৃতিই আমাদেরকে পর্নোগ্রাফির মত অস্বাস্থকর জিনিস নিয়ে সাবধান করে না।

পর্নোগ্রাফি কীভাবে লক্ষ-লক্ষ মানুষকে শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে? যেখানে এখনো অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, ‘পর্নোগ্রাফি ব্যবহার করা স্বাভাবিক, এটা আমাদের যৌন চিন্তাধারা বিকৃত করে না। পর্ন দেখা একটি ব্যক্তিগত বিষয়। এর মধ্যে ক্ষতি বলতে কোনো শব্দ নেই।’ কিন্তু আমরা আপনাকে বলতে চাই, এ ধরনের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনা খুব জরুরী হয়ে পড়েছে।

পর্ন দ্বারা কেমন ক্ষতি সাধন হয়? আসুন, জেনে নিই।

শারীরিক:
মানব দেহের ওপর পর্নোগ্রাফির অসংখ্য ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে; এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—স্ত্রীর সাথে যৌন সম্পর্কে অক্ষমতা দেখা দেয়। অথচ তিরিশ বছর আগেও ৩৫ বছরের কম বয়সী পুরুষদের মাঝে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন (erectile dysfunction) এর কথা শোনাই যেত না; এই সমস্যা হত শুধুমাত্র বার্ধক্যের কারণে।[1] কিন্তু বর্তমান সময়ে পর্নোগ্রাফি সহজলভ্য হওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে যে, ১৬ বছরের অনেক যুবকেরাও আজ ইরেক্টাল ডিসফাংশনের শিকার।[2] ঘন ঘন পর্ন দেখার ফলে মস্তিষ্কের গঠন এমন হয়ে যায় যে, যৌন চাহিদা পর্নের ওপর নির্ভরশীল হতে থাকে।[3] ফলে একজন পর্ন আসক্ত ব্যক্তি অনেক সময় নিজের স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে উত্তেজনা অনুভব করে না ।[4] আসক্তি বাড়ার সাথে সাথে অন্য আসক্তিকর বস্তুর মতোই আগে দেখা পর্নগুলো তাকে উত্তেজিত করতে পারে না। কারণ তার ব্রেইনের ডোপামিন রিসেপ্টরগুলো (dopamine receptors) নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে থাকে। এমন অবস্থায় একজন পর্ন ইউজার আগের উত্তেজনা ফিরে পেতে আরও এক্সট্রিম পর্নের দিকে ঝুঁকতে থাকে।[5]

আসলে নীল পর্দায় যৌনতার স্বাদ উপভোগ করা পর্ন আসক্ত মানুষগুলো স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলতে থাকে। ভার্চুয়াল সেক্স বাস্তব জীবনে সেক্স এর ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এটা কীভাবে স্বাভাবিক হতে পারে একটু ভাবুন।

মানসিক:
বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও একাকিত্ব বর্তমান বিশ্বে আমাদের প্রধান মানসিক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু আপনি কি জানেন, পর্নোগ্রাফি এ সকল সমস্যার একটি অন্যতম কারণ?[6] পর্ন দর্শকরা স্বাভাবিকভাবেই চায় তাদের এই আসক্তি গোপন রাখতে। যার ফলে অনিবার্যভাবে তাদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তারা ভুগেন নিঃসঙ্গতায়। অন্যান্য অনেক মানসিক সমস্যার পথও খুলে যায় তাদের জন্য।[7] এ ছাড়াও রিসার্চ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পর্ন ব্যবহারকারীদের মধ্যে নিজের দেহ নিয়ে হীনম্মন্যতা এবং আত্মসম্মানবোধের অভাব দেখা যায়।[8]

সম্পর্ক:
মানুষ সামাজিক জীব। তাদেরকে যৌন চাহিদা দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু পর্নোগ্রাফির কৃত্রিম যৌনতার মাঝে সেই চাহিদা পূর্ণতা পায় না। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, পর্নোগ্রাফির যৌন বিনোদন শুধুই কৃত্রিম না; বরং তা দম্পত্য জীবনের যৌন সম্পর্ককে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। রিসার্চে এসেছে কেউ মাত্র একবার পর্নোগ্রাফি দেখলেও তার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা কমে যেতে পারে। এমনকি স্ত্রীকে আগের মত আর আকর্ষণীয় মনে হবে না।[9] রিসার্চের মাধ্যমে আমরা আরো জানতে পারি যে, আমেরিকায় শতকরা ৫৬টি ডিভোর্সের একটি অন্যতম কারণ পর্নোগ্রাফি আসক্তি।[10]
পর্নোগ্রাফি যৌন সম্পর্ককে ভালোবাসা ও সম্পর্কের বন্ধন থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করে, তা শুধুমাত্র বিকৃত যৌনাচারের সন্ধান দেয়; যা আমাদের বাস্তব জীবন থেকে ভিন্ন। জীববিজ্ঞানী গ্যারি উইলসন বলেন: “পর্নোগ্রাফি আমাদেরকে যৌন শিক্ষা দেয়; না বরং আমাদের যৌন জীবনকে পর্নোগ্রাফি দ্বারা প্রতিস্থাপন করে”।
এককথায়, পর্ন ভালোবাসার মৃত্যু ঘটায়। পর্নোগ্রাফি কোনভাবেই স্বাস্থকর না। এটি পুরুষদের যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে, মানসিকতা স্বাস্থকে বিপর্যস্ত করে এবং দাম্পত্য সম্পর্কে ভাঙ্গন ঘটায়। বর্তমান সময়ে পর্নোগ্রাফি আপামর জনসাধারণের জন্য গুরুতর স্বাস্থ ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। এখনই সময়, সকলের সামনে পর্নোগ্রাফির ধ্বংসাত্মক রূপ তুলে ধরার, একে মহামারী হিসেবে জানান দেবার।

আপনি কি করতে পারেন?
অনেকেই আছেন যারা পর্নোগ্রাফির ক্ষতি সম্পর্কে অবগত নন। এই লেখাটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করার মাধ্যমে পর্নোগ্রাফির বাস্তবতা তুলে ধরুন।
.
অনুবাদ: #teamFAD
.
রেফারেন্স:
1 Robinson, M. and Wilson, G. (2011). Porn-Induced Sexual Dysfunction: A Growing Problem. Psychology Today,
July 11; Doidge, N. (2007). The Brain That Changes Itself. New York: Penguin Books, 105.
2 Doidge, N. (2007). The Brain That Changes Itself. New York: Penguin Books, 105.
3 Hilton, D. L. (2013). Pornography Addiction—A Supranormal Stimulus Considered in the Context of
Neuroplasticity. Socioaffective Neuroscience & Psychology 3:20767; Angres, D. H. and Bettinardi-Angres, K.
(2008). The Disease of Addiction: Origins, Treatment, and Recovery. Disease-a-Month 54: 696–721. Doidge, N.
(2007). The Brain That Changes Itself. New York: Penguin Books, 108.
4 Cera, N., Delli Pizzi, S., Di Pierro, E. D., Gambi, F., Tartaro, A., et al. (2012). Macrostructural Alterations of
Subcortical Grey Matter in Psychogenic Erectile Dysfunction. PLoS ONE 7, 6: e39118.
5 Angres, D. H. and Bettinardi-Angres, K. (2008). The Disease of Addiction: Origins, Treatment, and Recovery.
Disease-a-Month 54: 696–721; Zillmann, D. (2000). Influence of Unrestrained Access to Erotica on Adolescents’
and Young Adults’ Dispositions Toward Sexuality. Journal of Adolescent Health 27, 2: 41–44.
6 Flisher, C. (2010). Getting Plugged In: An Overview of Internet Addiction. Journal of Paediatrics and Child Health
46: 557–9; Layden, M. A. (2010). Pornography and Violence: A New look at the Research. In J. Stoner and D.
Hughes (Eds.) The Social Costs of Pornography: A Collection of Papers (pp. 57–68). Princeton, NJ: Witherspoon
Institute; Paul, P. (2007). Pornified: How Pornography Is Transforming Our Lives, Our Relationships, and Our
Families. New York: Henry Hold and Co., 82; Kafka, M. P. (2000). The Paraphilia-Related Disorders:
Nonparaphilic Hypersexuality and Sexual Compulsivity/Addiction. In S. R. Leiblum and R. C. Rosen (Eds.)
Principles and Practice of Sex Therapy, 3rd Ed. (pp. 471–503). New York: Guilford Press.
7 Laird, R. D., Marrero, M. D., Melching, J. A., and Kuhn, E. S. (2013). Information Management Strategies in
Early Adolescence: Developmental Change in Use and Transactional Associations with Psychological Adjustment.
Developmental Psychology 49, 5: 928–937; Luoma, J. B., Nobles, R. H., Drake, C. E., Hayes, S. C., O’Hair, A.,
Fletcher, L., and Kohlenberg, B. S. (2013). Self-Stigma in Substance Abuse: Development of a New Measure.
Journal of Psychopathology and Behavioral Assessment 35: 223–234; Rotenberg, K. J., Bharathi, C., Davies, H.,
and Finch, T. (2013). Bulimic Symptoms and the Social Withdrawal Syndrome. Eating Behaviors 14: 281–284;
Frijns, T. and Finkenauer, C. (2009). Longitudinal Associations Between Keeping a Secret and Psychosocial
Adjustment in Adolescence. International Journal of Behavioral Development 33, 2: 145–154.
8 Flisher, C. (2010). Getting Plugged In: An Overview of Internet Addiction. Journal of Paediatrics and Child Health
46: 557–9; Layden, M. A. (2010). Pornography and Violence: A New look at the Research. In J. Stoner and D.
Hughes (Eds.) The Social Costs of Pornography: A Collection of Papers (pp. 57–68). Princeton, NJ: Witherspoon
Institute; Kafka, M. P. (2000). The Paraphilia-Related Disorders: Nonparaphilic Hypersexuality and Sexual
Compulsivity/Addiction. In S. R. Leiblum and R. C. Rosen (Eds.) Principles and Practice of Sex Therapy, 3rd Ed.
(pp. 471–503). New York: Guilford Press.
9 Bridges, Ana J. “Pornography’s Effects on Interpersonal Relationships.” The Social Costs of Pornography: A
Collection of Papers. Ed. Donna M. Hughes and James Reist. Stoner. Princeton, NJ: Witherspoon Institute, 2010.
104-105.
10 Manning J., Senate Testimony 2004, referencing: Dedmon, J., “Is the Internet bad for your marriage? Online
affairs, pornographic sites playing greater role in divorces,” 2002, press release from The Dilenschneider Group, Inc.

Blog Image
মানুষ না ডিভাইস?

আসক্তির সবচেয়ে মারাত্মক দিকগুলোর একটি হচ্ছে- এটি মানুষকে বস্তু দ্বারা প্রতিস্থাপন করে। আপনি যদি আসক্তি থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা না করেন তাহলে একসময় প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানোর চেয়ে কোন ডিভাইস নিয়ে পড়ে থাকাটাই আপনার কাছে বেশি আনন্দদায়ক মনে হবে।

এভাবে চলতে থাকলে আপনার সাথে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। বাস্তব জীবনে মানুষের সাথে না মিশে ডিভাইসে বেশি সময় ব্যয় করতে থাকলে আপনার পারিপার্শ্বিক অবস্থাও সবসময় পর্ণ দেখার অনুকূলে থাকবে, ফলে আপনি আসক্তির দিকে এতোটাই ঝুঁকে পড়বেন যে একসময় আপনার স্ত্রীর সাথে যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত হবার চেয়ে পর্ণ দেখে মাস্টারবেট করাটাই বেশি সন্তোষজনক মনে হবে।

মানুষকে বস্তু দ্বারা প্রতিস্থাপনের একটি উদাহরণ মাথায় আসল। আপনারা নিশ্চয়ই অ্যাপল এর ‘সিরি’ নামক সফটওয়্যারটির নাম শুনেছেন। এটি এমন একটি সিস্টেম সফটওয়্যার যার সাথে কথোপকথন করা যায়, যেমন: ‘আমি তোমাকে ভালবাসি সিরি’ বা ‘তুমি কি আমার সাথে কোথাও যাবে?’ এভাবে যা খুশি তা ই বলা যায়। সে ও আপনার প্রশ্ন অনুযায়ী উত্তর দিবে, আপনার কোন তথ্য দরকার হলে ইন্টারনেট থেকে এনে স্ক্রীনে দেখাবে, আপনি যাকে কল করতে চান তার নাম উচ্চারণ করা মাত্র তাকে কল দিবে, এমনকি আপনি বিষণ্ণ থাকলে আপনাকে বিনোদন দিবে, সব সাপোর্ট যদি ডিভাইস থেকেই পাওয়া যায় বাস্তবে মানুষের সাথে থাকা কি দরকার?

একইভাবে পর্ণ যদি আপনাকে যৌন সন্তুষ্টি দেয় তাহলে বাস্তবে স্ত্রীর কি কোন প্রয়োজন আছে? আপনার ব্রেইনের একটি অংশ এভাবেই চিন্তা করে। একবার পর্ণ দেখেই কিন্তু আপনি আসক্ত হয়নি। বার বার দেখার ফলেই ব্রেইন এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, আর তাই এখন আপনি না দেখতে চাইলেও সে আপনাকে রিমাইন্ডার দেয়, এ অবস্থাকেই আমরা বলি আসক্তি।

Blog Image
সাইকোলজিস্ট জর্ডান ফোস্টার এর কিছু কথা

তরুণদের মনের উপর পর্ণের ভয়ংকর প্রভাব নিয়ে সাইকোলজিস্ট জর্ডান ফোস্টার এর কিছু কথা:

“পর্ণোগ্রাফি আসক্তি এমন একটি সমস্যা যা কিনা তরুণ অস্ট্রেলিয়ানদের [এবং অন্যান্য দেশের তরুণদেরও ] মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। আধুনিক সমাজ আজ প্রযুক্তিতে পরিপূর্ণ এক বিশ্বে পদার্পণ করেছে, একই সাথে প্রযুক্তি উন্মোচন করেছে সেক্সচুয়াল কনটেন্ট এর বিশাল এক অন্ধকার জগত, যা মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ার চেয়ে অনেক সহজলভ্য।

সেক্স সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে অনেক বাচ্চার কাছেই পর্ণ প্রথম রেফারেন্স হিসেবে কাজ করছে। গবেষণায় দেখা যায়, গুগলে আপাতদৃষ্টিতে খারাপ না এমন কিছু সার্চ করলেও কিছু সেক্সচুয়াল ইমেজ মাঝে চলে আসে। অস্ট্রেলিয়ান বাচ্চারা গড়ে ১১ বছর বয়সে প্রথম পর্ণ খুঁজে পায়। বয়স ১৫ বছর হতে হতে শতকরা ১০০ জন ছেলের এক্সট্রিম পর্ণ পর্যন্ত দেখা হয়ে যায়। এমনকি অন্তরঙ্গ সম্পর্কগুলোর প্রতি আজ তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিচ্ছে পর্ণোগ্রাফি, স্বাভাবিক যৌন আচরণকে বিকৃতভাবে রূপান্তর করছে হিংস্রতা এবং অমানবিক যৌন আচরণ দ্বারা। পর্ণের অস্বাভাবিক দেহগঠনকে ঘিরে তৈরি হয় সব অবাস্তব চিন্তা যা কাছের মানুষগুলোকে ক্রমেই দূরে ঠেলে দেয়।”

Blog Image
পর্ন আসক্তিকর! আমাদের এর ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলা উচিত

পর্নকে এখন আর কোন ভাবেই সমাজের একটি ট্যাবু বানিয়ে রাখার সময় নেই। এটাকে রাডারের নীচ থেকে বের করে আনতে হবে। ৯-১২ বছরের অনেক বাচ্চারা এখন নিয়মিত পর্নের দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ আমরা পর্নের ইফেক্টগুলো নিয়ে এখনো সামাজিক বা পারিবারিক ভাবে কথা বলছি না।

জনপ্রিয় ওয়েবসাইট নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন এবং টুইটারে প্রতি মাসে সম্মিলিতভাবে যে পরিমাণ মানুষ ভিজিট করে, পর্ন সাইটগুলোর ভিজিটর তার চেয়েও বেশী। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগা উচিত, যে এর কোন ক্ষতিকারক দিক আছে কিনা?

আপনারা জানলে হয়তো অবাক হবেন, যে শতকরা ৭০ জন যুবক এবং ৩০ জন মহিলা নিয়মিত পর্ন দেখে; বাচ্চারা খুব কম বয়সে (গড়ে ১১ বছর) পর্ন খুঁজে পাচ্ছে। এতো ভিউয়ার, উঠতি উত্তেজনা এবং প্রতিনিয়ত চাহিদা বৃদ্ধির সত্ত্বেও কেন মানুষ এর ক্ষতিকারক দিক নিয়ে কথা বলে না?

কানে তালা লাগিয়ে নীরব এ সমাজ

পর্নের ব্যাপারে সবাই নীরব কারণ এটা এমন একটা অভ্যাস যা অন্ধকার ও একাকীত্বের মধ্যে গড়ে উঠে। কিন্তু আমরা এই নীরবতাকে জিততে দিতে পারি না।

একটা সময় পর্ন ছিল বিরল এক জিনিস, যা পেতে বহুত ধাপ পার হতে হত। আর এখন স্মার্ট ফোন আছে এমন যে কেউই একটা ক্লিকে পর্ন দেখতে পারছে। পর্নকে এতোটাই স্বাভাবিক করে ফেলা হয়েছে যে, পর্নস্টারদের অভিনয়ের জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়। এমনকি এই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত খোলা হয়েছে। তাই এখন আর এ কথা বলার অবকাশ নেই যে, ৯৭ বিলিয়ন ডলারের এই ইন্ডাস্ট্রি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে তেমন প্রভাব খাটাতে পারেনি। কিন্তু ক্ষতি প্রতিনিয়ত হয়েই যাচ্ছে। সমাজ, পরিবার থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র, শপিং মল সর্বত্র এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে।

আমি ১২ বছর বয়স থেকে পর্ন আসক্ত। ১৬ বছর বয়স থেকে এ আসক্তি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি। আসলে পর্ন এতোটা প্রকট আকার ধারণ করেছে যে এটা নিয়ে কথা বলাটা অনেকটা মাছের পানি নিয়ে কথা বলার মত। এটা আপনার জীবনকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা বোঝা যেমন দায়, ঠিক তেমনই কঠিন এটাকে চার দেয়ালের মাঝে বন্ধী করে রাখাটা।

পর্ন আপনার যৌন চিন্তাধারাকে বিকৃত করতে সদা প্রস্তুত। যে একবার এর নেশায় পড়ে তার ছেলেদের/মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। আমার ক্ষেত্রেও তা ই হল। আমি মেয়েদের পণ্য হিসেবে দেখা শুরু করেছিলাম; যে মেয়েদের আমি প্রতিদিন দেখতাম তাদের মধ্যে খুব কম মেয়েই আমার সেক্সচুয়াল ফ্যান্টাসি থেকে রেহাই পেতো। কোথাও গেলে আমার চোখ ঘুরেফিরে তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের দিকে চলে যেত।

পর্ন আসলেই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলে। অন্যান্য আসক্তিকর জিনিসের মতো পর্নও আমাদের দেহ থেকে বের হয় না। আমি ১৫০ দিন পর্ন না দেখে কাটিয়েছি, কিন্তু আমি যা দেখতাম তা ভুলতে মনে হচ্ছে কয়েক বছর লেগে যাবে।

পর্নের ফ্যান্টাসিতে বাস করার কুফল

আমার জন্য পর্ন ছিল সব হতাশা ও একাকীত্বের কারণ। পর্ন জিনিসটা এভাবেই কাজ করে; আমাকে অদ্ভুত এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে ঘুরপাক খাওয়াত। আসলে পর্ন মানেই হচ্ছে সিলিকন ইমপ্ল্যান্ট, স্ফীত পেশী, লোমহীন অঙ্গ, অতিরিক্ত সন্তুষ্টি লাভের ভান করা কিংবা অস্বাভাবিক দেহগঠন। পর্নের এক একটা ইমেজ আমার শরীরে প্রভাব ফেলতে শুরু করল। পর্নস্টারদের নিখুঁত শরীর দেখতে দেখতে আমার নিজেকেই নিজের তুচ্ছ মনে হতে লাগল। ১২ বছর বয়স থেকেই আমি এসবের সাথে অভ্যস্ত হতে থাকি। একটা সময় সেক্স মানেই মনে হত, যেন দুজন লোমহীন মানুষ মেশিনের মতো প্রোগ্রাম করা কিছু কাজ করছে মাত্র।

আজকের এই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের পর্ন ইন্ডাস্ট্রি প্রতিনিয়তই বিস্তৃত হচ্ছে এবং নতুন ভিউয়ার বাড়াচ্ছে। একসময় চটি গল্পের বইগুলো ঘরের চিপাচুপায় লুকিয়ে রাখা হত। আর এখন মানুষ ব্রাউজারের হিস্ট্রি থেকে মুছে ফেলে, পোর্টেবল হার্ডড্রাইভে শত শত জিবির কালেকশন রাখে। বাধা দেওয়ার বা সচেতন করার যেন কেউ নেই। পত্রিকায় খবর পড়তে চান সেখানেও রেহাই নেই। কিছু অনলাইন নিউজ পেপারে আজকাল এমন ভিডিওর লিংক থাকে যা একটা ক্লিকেই আপনার রাতের ঘুম হারাম করে দিতে পারে।

পর্নে যে ভাষা ব্যবহার করা হয় তা প্রতিনিয়ত মেয়েদেরকে অবমাননা করা শেখাচ্ছে, নরমাল রেজুলেশন থেকে উন্নীত হয়েছে হাই রেজুলেশনে,- যা স্মৃতিতে থাকছে দীর্ঘ সময় জুড়ে, নষ্ট করছে ব্রেইনের ভারসাম্য এবং ভালো চিন্তা করার ক্ষমতা। যখন আমার বয়স ১৩, তখন সফটকোর পর্ন দেখেই সন্তুষ্ট থাকতাম। কিন্তু যখন সময় গড়িয়ে বয়স ১৫ হল, তখন সেই ভিডিওগুলো আমাকে আর উত্তেজনা দিতো না। আরও ৫ বছর পর এমন অবস্থা হল যে আমি নতুন এবং আরও এক্সট্রিম জিনিস খুঁজতাম।

কেউ কিন্তু একবারে অধিক আসক্তিকর ড্রাগ নেয় না। সে ধাপে ধাপে আগায়। পর্নের ক্ষেত্রেও একই রকম। কেউ প্রথমেই এক্সট্রিম কিছু দেখে না। তাকে আস্তে আস্তে এক্সট্রিম এবং জঘন্য ক্যাটেগরির দিকে কেমন পর্ন দ্বারা নিতে হবে তা পর্নের ডিরেক্টররা খুব ভালোমতোই জানে। এ জগতটা খুব পিচ্ছিল। আমি যদি এখন পর্যন্ত পর্ন দেখতে থাকতাম তাহলে এতদিনে হয়তো পিছলিয়ে এমন এক অতল গহ্বরে গিয়ে পড়তাম যেখান থেকে আমাকে কেউ বের করে আনতে পারত না।

কীভাবে ভাঙবেন এ নীরবতা?

বিভিন্ন শারীরিক ক্ষতি সহ পর্ন আসক্তিকর হতে পারে। অনেক তরুণরা আজ ইরেক্টাইল ডিসফাংশনে জর্জরিত। বিবাহিত যে পুরুষরা এ সমস্যায় পড়ছে তারা হারাচ্ছে স্ত্রী।

বাস্তবে একজন পুরুষ ও মহিলা, পর্ন পারফর্মারদের মত নন। তাদের দেহ, মন কোনকিছুই পুরোপুরি নিখুঁত না। পর্ন স্ত্রী-বিদ্বেষ এবং নারী পাচারের সাথে সম্পর্কিত। যদি আমরা আসলেই চাই যে পরিবারগুলোর মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠুক এবং একটি সমাজের মানুষেরা মানসিকভাবে সুস্থ থাকুক তাহলে পর্নগ্রাফির মত শোষণকে আমাদের বিদায় জানাতে হবে।

এইতো কিছুদিন আগে আমি কীভাবে পর্ন অ্যাডিকশন থেকে মুক্তি পেলাম তা নিয়ে একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলাম। আমি আশা করিনি যে এতো মানুষ আমাকে মেসেজ করবে। অনেকেই বলছিল যে তারাও পর্ন ছাড়ার চেষ্টা করছে। তাদের এই সত্যবাদিতা আসলেই সম্মান লাভের যোগ্য। অ্যাডিকশন থেকে বের হওয়ার প্রথম ধাপই হচ্ছে এমন কার কাছে নিজের অবস্থা খুলে বলা যে তাকে সাহায্য করতে পারবে। মুখে তালা মেরে বসে থাকলে অ্যাডিকশন থেকে বের হওয়া আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে।

(পর্ন অ্যাডিকশন থেকে মুক্তির যাত্রাটা কার কার জন্য অনেক দীর্ঘ হতে পারে। তাই আপনার এই যাত্রা যদি অসম্ভব বা কঠিন মনে হয়, তাহলে আমাদেরকে মেসেজ করুন। আমরা নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী আপনাকে সাহায্য করব।)

অনুবাদঃ Minhaz Mohammad

Blog Image
ঝরে পড়ার গল্প ০২

ছোটবেলা থেকেই ফটোগ্রাফির প্রতি একটা আলাদা ঝোঁক ছিল মার্কের। ‘ও’লেভেল এ ভালো রেজাল্ট করায় বাবার কাছে ক্যামেরা চায় সে। মার্ক ছিল তার বাবামায়ের একমাত্র সন্তান। তাই বাবাও আর না করতে পারলেন না। তখন থেকেই তার ফটোগ্রাফি জীবন শুরু।

মার্কের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল জন। জন এর সাথে অনেক ফিমেল মডেলরা কাজ করতো। সে তাদের কারো কারো সাথে এতোই ঘনিষ্ঠ ছিল যে তারা তাকে অবলীলায় নগ্ন ফটোসেশন করতে দিতো। জন সেই ছবিগুলো মার্ককে দেখাতো। মার্ক প্রায়ই জনের কাছ থেকে সেই মডেলদের নগ্ন ছবি ধার নিতো। বাসায় গিয়ে ছবিগুলো নিয়ে হারিয়ে যেতো সেক্সচুয়াল ফ্যান্টাসিতে। কারণ তখন হাইস্পিড ইন্টারনেট ছিলনা। তাই এই ধার করা ছবিগুলোই ছিল মার্কের জন্য পর্ন। প্রায় প্রতি রাতেই মাস্টারবেট করতো সে।

একসময় মার্ক নিজেই মডেলদের নগ্ন ছবি তোলায় যোগ দেয়। আরও এক্সট্রিম হতে থাকে তার আসক্তি। এভাবেই কেটে যেতে থাকে কয়েকটি বছর। ২৫ বছর বয়সে সে এক তরুণীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। এক বছর পর তাদের ঘরে একটি ফুটফুটে মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে খুব সুন্দর যাচ্ছিল তার জীবন। কিন্তু সুখের সংসারের মাঝে কালসাপটা রয়েই যায়। সেই মডেলদের নগ্ন ছবির প্রতি আকর্ষণ।

প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ইন্টারনেট আসলো। নেটে ব্রাউজ করতে করতে একদিন সে আবিষ্কার করলো একটি পর্ন সাইট। যোগ হল তার অ্যাডিকশনে নতুন একটি মাত্রা। স্ত্রী, মেয়ের চোখের আড়াল হয়ে প্রায়ই সে পর্নের সাগরে ডুব দিতো। সময়ের সাথে সাথে তার মেয়ে বড় হয়।

একদিন তার আদরের মেয়েটি তাকে পর্ন দেখা অবস্থায় আবিষ্কার করল। বলে দিলো মাকে। মা, মেয়ে দুজনেই এতোটা কষ্ট পেয়েছিল, যে তারা সিদ্ধান্ত নিলো মার্কের সাথে আর এক দিনও থাকবে না। পরবর্তীতে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়।

একসময় মার্ক পর্ন আসক্তি থেকে পরিত্রাণ পায়। কিন্ত সেই সুখের সংসার সে আর ফিরে পায় না।

Blog Image
ঝরে পড়ার গল্প ০১

প্রতিদিনের মতো আজকের সকালটাও খুব বিদঘুটে লাগছে শান্তর কাছে। অলসতার ভরে হালকা করে চোখটা খুলে দেখে চারিপাশ ঝাপসা লাগছে। কয়টা বাজে কে জানে, হয়তো আজো কলেজটা মিস যাবে। এই ভাবতে ভাবতে হঠাৎ শান্তর মা এসে জানালার পর্দা সরিয়ে দিলো। সাথে সাথে একগাদা সূর্যের আলো এসে পড়লো শান্তর মুখে। এই, ওঠ-ওঠ-ওঠ। তোর কলেজ কয়টায়? কলেজে যাবি না?

আলোর মাঝে পিট পিট করে তাকাতে তাকাতে শান্ত বলল,- মা, প্লিজ যাওত। আজকে ভাল্লাগছেনা।

-কবে ভাল্লাগে তোর? এভাবে ক্লাস মিস করতে থাকলেতো ফাইনালে আবার আণ্ডা পাড়বি। এবার পরীক্ষায় খারাপ করলে আমি আর যাচ্ছি না তোর ক্লাস টিচারের সাথে দেখা করতে! এই বলে চিল্লাতে চিল্লাতে মা চলে গেল।

দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে, এক হ্রাস হতাশা নিয়ে বিছানা থেকে উঠল শান্ত। শরীরটা মেজ মেজ করছে। হেলে দুলে বাথরুমে গিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে করতে হঠাৎ মনে পড়লো, আজতো সাইক্রিয়াটিস্ট এর সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। কি বলবো তাকে? শেষবার অনেক প্রমিস করে মোবাইলটা পেয়েছিলাম। আজ কি হয় আল্লাহ ই জানে।

শান্তর বয়স ১৮। গত ৭ বছর ধরে সে পর্ন অ্যাডিক্টেড। তবে গত ৩ বছরে তার অ্যাডিকশন মারাত্মক আকার ধারণ করে। এই ৩ বছর ধরে প্রতিদিন সে অন্তত ৫ ঘণ্টা করে পর্ন দেখছে।

প্রথম দিকে খুব ভাল্লাগতো। মনে হতো কতো সহজেই এমন নগ্ন মেয়েদের দেখা যায়। কখনো বুঝিনি এ মজাই আমার জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। আজ আয়নার সামনে দাঁড়ালে আমার নিজের চেহারা দেখে নিজেই থমকে যাই। ৭০ বছরের বুড়োর মতো লাগে নিজেকে। কোন প্রডাক্টিভ কাজ করতে ভালো লাগেনা। প্রতি রাতেই আমি ঘুমানোর আগে পর্ন দেখা শুরু করি। একটার পর একটা পেইজ খুঁজতে থাকি, চাই আগের চেয়ে বেশী উত্তেজনাকর কিছু দেখতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যায়… মাঝেমাঝে আমি ঘুমানোর কথা ভুলে যাই…

বিনিদ্র প্রহর শেষে সেই একই হতাশার গ্লানি নিয়ে আমি ঘুম থেকে উঠি। আমার কারো সাথে মিশতে ভাল্লাগেনা। গত ৩ মাসে আমি কয়েকবার সুইসাইড এটেম্পট নিয়েছি। প্রতিবার শুধু মায়ের কথা চিন্তা করে ফিরে এসেছি।

সাইক্রিয়াটিস্ট বললেন,- আপনার সুইসাইড এটেম্পট নেয়ার ঘটনা কি বাসার কেউ জানে?

-না। শুধু রাহিদকেই বলেছি।

এমনটাই কথোপকথন হচ্ছিল সাইক্রিয়াটিস্ট এর সাথে প্রথম অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর দিন। রাহিদ, শান্তর বন্ধু। কলেজে শান্তর অদ্ভুত আচরণ এবং তার শারীরিক পরিবর্তন দেখে সে একদিন শান্তকে জিজ্ঞেস করে,

-কি হয়েছে তোর? আমাকে একটু খুলে বলবি? তুই এখন আর আগের মতো আর খেলতে আসিস না। কলেজেও ইরেগুলার। কেন? আমাকে বল। আমি কাউকে বলব না।

শান্ত, রাহিদকে সবকিছু খুলে বলল। সব শুনে রাহিদ, সাইক্রিয়াটিস্ট আব্দুর রহিম এর কথা জানালো, যিনি সম্পর্কে রাহিদের মামা হন। রাহিদ তাকে সব বলে একদিন শান্তকে তার চেম্বারে নিয়ে গিয়েছিল।

আজ অব্দুর রহিমের সাথে দ্বিতীয় অ্যাপয়েন্টমেন্ট। অবস্থার তেমন একটা উন্নতি করতে পারেনি সে। তাই শেষবারের প্রমিস অনুযায়ী তার মোবাইলটা সে সাবমিট করে দেয়। কারণ সে রাতে মোবাইলেই বেশী পর্ন দেখত। এভাবে রাহিদের মামার উপদেশ অনুযায়ী সে বাসার ইন্টারনেট থেকে শুরু করে পর্ন দেখার যায় এমন যতো ডিভাইস তার কাছে ছিল সব জমা দিয়ে দেয়।

৬ মাস পর…

সময়ের সাথে শান্ত পর্নোগ্রাফি অ্যাডিকশন থেকে মুক্তি পায়। “নিউরোপ্লাস্টিসিটি”(জানতে পড়ুন পর্নের ব্রেইন ইফেক্ট ০২) অনুযায়ী তার ব্রেইন ঠিক হয়ে গেলেও অন্যদিক দিয়ে বিশাল ক্ষতি হয়ে যায়। অতিরিক্ত মাস্টারবেট করার ফলে তার ইরেক্টাইল ডিসফাংশন হয়। এ সমস্যা ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। হয়তো সে আর কখনো বাবা হতে পারবে না।

গল্পটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখা হয়েছে। শুধু একটা বার চিন্তা করুন, শান্তর মতো এমন অনেক ছেলেরাই আজ ইরেক্টাইল ডিসফাংশন এর স্বীকার।

Blog Image
তিন ধরনের পর্ন ইউজার এবং তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারণ

সাধারণত কোন বয়ঃসীমার ছেলেমেয়েরা পর্ন দেখে তা আমরা জানি। এদের কেউ মাঝেমধ্যে দেখে, আর বাকীরা অ্যাডিক্টেড। পর্ন ইউজারদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে এবং আমরা এটাও জানি যে এর কোনটাই ভালো না। আসুন, এই ইউজারদের লেভেল সম্পর্কে জানা যাক।

আপনারা হয়তো শুনেছেন, যারা অ্যালকোহলিক তাদের সামাজিক পানকারী(social drinkers), বা অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপানকারী(binge drinker), এমনকি স্ট্রেইট আপ অ্যালকোহলিক বলে লেবেল দেওয়া হয়।
একজন মানুষ কতটা অ্যালকোহলিক এর মাত্রা বোঝার জন্য এই টাইটেলগুলো দেওয়া হয়। একইভাবে, যারা পর্ন দেখে তাদের জন্যও এমন টাইটেল বানানো আছে। যেমনঃ

  • i) রিক্রিয়েশনাল ভিউয়ার্স
  • ii) সেক্সচুয়ালি কম্পালসিভ ভিউয়ার্স এবং
  • iii) অ্যাট-রিস্ক ভিউয়ার্স

যেমনি মদ্যপানকারীদের লেভেলগুলো তাদের পানের মাত্রা এবং লেভেল অনুযায়ী ক্ষতিকর দিক নির্দেশ করে তেমনি কাজ করে পর্ন ইউজারদের লেভেলগুলো।

 

i) রিক্রিয়েশনাল ভিউয়ার্স

যারা অনেকদিন পরপর কোন বৃষ্টিস্নাত রাতে বা সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর অব্যাহতি পাওয়ার জন্য পর্ন দেখে তাদের বলা হয় রিক্রিয়েশনাল ভিউয়ার্স। এই ধরনের পর্ন ইউজাররা এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২-৩ ঘণ্টা পর্ন দেখে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা যৌন উত্তেজনা বা বিনোদন পাবার জন্য দেখে, এবং এটা তাদের সামাজিক জীবন বা রিলেশনশিপ এর বিকল্প কিছুনা।

যদিও ব্যাপারটা তেমন একটা ক্ষতিকারক মনে হচ্ছেনা, তবে এই গ্রুপের ভিউয়ার্সরা পুরোপুরি নিরাপদ না। এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে যে একজন পুরুষের সফটকোর পর্ন দেখার প্রবণতা তার স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ কমিয়ে ফেলে।
যদিও একজন রিক্রিয়েশনাল ভিউয়ার মাঝেমধ্যে পর্ন দেখেন, আসলে তার অবস্থা হল পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান করার মতো। যেকোনো মুহূর্তে পা পিছলে পর্নের সাগরে পরে যেতে পারেন। হয়ে যেতে পারেন পুরোপুরি অ্যাডিক্টেড।

 

ii) সেক্সচুয়ালি কম্পালসিভ ভিউয়ার্স

সেক্সচুয়ালি কম্পালসিভ ভিউয়ার্সরা তাদের যৌন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য পর্ন ইউজ করেন, যেমনঃ স্ত্রী না থাকা, ইরেকটাইল ডিসফাংশন ইত্যাদি।
সেক্সচুয়ালি কম্পালসিভ পর্ন ভিউয়ার্সরা তাদের জীবনের বিভিন্ন সমস্যা কিছু সময় ভুলে থাকার জন্য পর্নকে একটি সুবিধাজনক, ব্যক্তিগত এবং সস্তা উপায় হিসেবে বেছে নেয়।

যাইহোক, এই যৌন উত্তেজনা থেকে বেশীক্ষণের জন্য মুক্তি পাওয়া যায় না।
যখন একজন ভিউয়ার নিজের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য পর্ন দেখেন, তারা ক্রমেই নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে থাকে।

সবসময় একই কাহিনী হয়ে থাকে – বিভিন্ন সেক্সচুয়াল সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য পর্ন দেখার ফলে একজন ব্যক্তির সমস্যাগুলো বরং আরও বেড়ে যায়, যার ফলে তিনি প্রায়ই পর্ন দেখতে চান, আরও বেশি দেখতে চান, এবং আগের মজা পাবার জন্য আরও এক্সট্রিম পর্নের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

 

iii) অ্যাট-রিস্ক পর্ন ভিউয়ার্স

এই গ্রুপের ভিউয়ার্সরা সবচেয়ে ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে রয়েছে কারণ তারা সেক্সুয়াল সমস্যা ছাড়াও জীবনের অন্য যে কোন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য পর্ন দেখে। বিষণ্ণতা, কাজের চাপ, দুশ্চিন্তা, ভয় — সবকিছুর চিকিৎসা তারা নিজেরাই করে থাকে পর্ন ইউজের মাধ্যমে। সেক্সচুয়ালি কম্পালসিভ ইউজারদের মতো এরাও পর্ন দ্বারা সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে আরও বিশাল সমস্যার মুখে পতিত হয়। এ ধরণের মানুষেরা অন্তরঙ্গ কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজের অনুভূতি নিয়ে কঠিন সমস্যায় ভুগে, এবং একসময় শুধু কম্পিউটার স্ক্রিন ছাড়া অন্তরঙ্গ বলতে তাদের জীবনে কিছু থাকেনা।

 

সায়েন্স

কিভাবে পর্ন কারো জীবনে বিভিন্ন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং সমস্যার বিস্তার ঘটাতে থাকে?
এটি অন্যান্য অ্যাডিক্টিভ ড্রাগের মতোই আচরণ করে থাকে। যখন আপনি পর্ন দেখেন, যে পর্যন্ত আপনার দেখা ছবিগুলো আগের উত্তেজনা না দেয় সে পর্যন্ত আপনার শরীর এর সাথে অভ্যস্ত হওয়ার একটি পরিবেশ তৈরি করতে থাকে। তাই আপনি আরও বেশী সময় নষ্ট করে কাঙ্ক্ষিত ছবিগুলো খুঁজতে থাকেন যাতে আগের সেই সন্তুষ্টি ফিরে পাওয়া যায়।
যা আগে খুব কম সময় ব্যয় করে হয়ে যেতো তা পরিণত হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্লিক, সার্চ, বাছাই এবং দেখাদেখিতে। যত বেশী সময় আপনি পারফেক্ট ইমেজটা খুঁজে পেতে ব্যয় করেন, আপনার কাছের সম্পর্কগুলো, বিভিন্ন শখের কাজ এবং সামাজিক জীবনের প্রতি ততো বেশী অনীহা সৃষ্টি হতে থাকে। এটি আপনার জীবনে অশান্তি এবং হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, অসহ্য লাগে সব, এই বাজে অনুভূতিগুলো থেকে পরিত্রাণের জন্য আপনি আরও বেশী সময় পর্নে ব্যয় করেন। এভাবে ঘুরেফিরে বার বার আপনি অ্যাডিকশন সাইকেলে পড়ে যান। একজন রিসার্চার বলেনঃ
“…সন্তুষ্টি পাওয়া যায় এমন অনুভূতিগুলো নিমিষেই বিলীন হয়ে যায় এবং উদ্ভূত হতে চায় অন্য কোন পর্নোগ্রাফিক ইমেজ বা ভিডিও থেকে। সাইবার সেক্সচুয়াল ম্যাটেরিয়াল এর প্রতি অতিমাত্রার আসক্তি ধাবিত করে অত্যধিক ব্রাউজিং এর মাধ্যমে পারফেক্ট সেক্সচুয়াল ইমেজ, স্টোরি বা ইরোটিক ম্যাটেরিয়ালটির খোঁজে;যা সর্বোচ্চ উত্তেজনা, উদ্দীপনা এবং তীব্র কামপ্রবৃত্তি সৃষ্টির মাধ্যমে সম্পূর্ণ পরিতৃপ্তি দিয়ে থাকে।

যে মানুষগুলো রিক্রিয়েশনাল ইউজার ক্যাটেগরি থেকে সেক্সচুয়ালি কম্পালসিভ ইউজার বা অ্যাট-রিস্ক ইউজারে উন্নীত হয়েছেন তারা বলেছেন, অ্যাডিকশন সাইকেলে পড়ে তারা হতাশা, দুশ্চিন্তা, অতৃপ্তিতে ভোগেন, এমনকি নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এদের সবার ক্ষেত্রে এমনই হয়। রিসার্চারদের মতে সাধারণত অ্যাডিকশন সাইকেলে ঘুরপাক খাওয়া মানুষগুলো চারটি অ্যাডিকশন লেভেল অতিক্রম করে।

এই লেভেলগুলো হলঃ

  • ১) অত্যধিক বিমুগ্ধ অবস্থা
  • ২) কর্মে পরিণত করার অবস্থা
  • ৩) কম্পালসিভ সেক্সচুয়াল বিহেভিয়ার ষ্টেজ বা যৌন চিন্তাগুলোকে বাস্তব রূপ দিতে বাধ্য হওয়ার মতো অবস্থা
  • ৪) হতাশ/বেপরোয়া অবস্থা

ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষগুলোও এই একই স্টেজগুলো অতিক্রম করে।

অবশেষে বলা যায়- স্বাভাবিক জীবনযাপন এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে পর্ন একটি প্রতিবন্ধকতা। প্রথমদিকে একজন পর্ন ইউজার মনে করে সে খুব নিয়ন্ত্রণে আছে, কোন সমস্যাই নেই তার। তবে দিন অতিবাহিত হবার সাথে সাথেই দেখা বন্ধ করা কঠিন হয়ে যায়। পর্ন একটি মিথ্যা। মেকআপ, ক্যামেরার মুভমেন্ট এবং এডিটিং এর মাধ্যমে খুব সুন্দরভাবে পরিবেশন করা হয়, যা একজন নিয়মিত ব্যবহারকারীর কাছে স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। তবে পর্দার আড়ালের জগতটা অনেক বেশীই অমানবিক।

অনুবাদঃ Minhaz Mohammad

Blog Image
পর্ন বাংলাদেশকে কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে?

রাহাত ঢাকার এক সুখ্যাতি-সম্পন্ন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর একজন ছাত্র। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে হওয়ায় পরিবার থেকে নানানভাবে সে অ্যাডভান্টেজ পেয়ে থাকে। প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস গিফট পায়। কখনো চাচা অ্যামেরিকা থেকে ট্যাব, খালা বার্থডে তে স্মার্টফোন, আর বাবা-মার দেওয়া ল্যাপটপ-নেট তো আছেই। তাই বর্তমান সমাজের অবস্থা অনুযায়ী রিয়েল ওয়ার্ড এর চেয়ে রাহাত ভার্চুয়াল ওয়ার্ড এ বেশী অ্যাক্টিভ। অবসর সময়গুলোতে যখন গেম খেলতে ইচ্ছা করেনা তখন সে হারিয়ে যায় পর্নের দুনিয়ায়। একদিন- দুদিন, ধীরে ধীরে হয়ে যায় পর্ন অ্যাডিক্ট। এখন গেম এর চেয়ে বেশী সময় সে পর্নের পেছনে ব্যয় করে। তার বাবামার কোন আইডিয়া নেই যে সে প্রতিদিন কতটা পর্নের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে।

.

এমন অসংখ্য রাহাত আছে আমাদের দেশে। আপনি যদি ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়া কোন বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করেন তার কতগুলো ফ্রেন্ড নিজের ট্যাব বা স্মার্টফোন ইউজ করে। তারা বলবে দুই-একজন ছাড়া কেউ বাদ নেই। বাংলাদেশে এ সম্পর্কিত রিসার্চ তেমন একটা হয়নি। এর মধ্যে ২০১২ সালে কয়েকটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর কিছু ছাত্রছাত্রীর উপর চালানো একটি সার্ভেতে দেখা যায় শতকরা ৭৬ জন শিক্ষার্থীর নিজের ফোন আছে। বাকিরা বাবামার ফোন ব্যবহার করে। এদের মধ্যে-

  •  ৮২ শতাংশ সুযোগ পেলে মোবাইলে পর্ন দেখে।
  •  ক্লাসে বসে পর্ন দেখে ৬২ শতাংশ।
  •  ৭৮ শতাংশ গড়ে ৮ ঘণ্টা মোবাইলে ব্যয় করে।
  •  ৪৩ শতাংশ প্রেম করার উদ্দেশ্যে মোবাইল ব্যবহার করে।

সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে, বেসরকারি এক হিসাবে দেখা যায়, গান/রিংটোন/ফটোকপির দোকানগুলোর মাধ্যমে দেশে দৈনিক ২.৫ কোটি টাকার পর্ন বিক্রি হচ্ছে[১]।

এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে এক মাসে গুগলে ‘পর্ন’ ওয়ার্ড টা সার্চ করা হয়েছে ০.৮ মিলিয়ন বার এরও বেশী। বিশ্বব্যাপী এ সংখ্যা হচ্ছে ৬১১ মিলিয়ন বার। সেক্স টার্ম টা সার্চ করা হয়েছে ২.২ মিলিয়ন বার। বিশ্বব্যাপী এটা করা হয়েছে ৫০০ মিলিয়ন বার[২]। অন্যান্য পর্নোগ্রাফিক ওয়ার্ড এর অবস্থাও অনেকটা এমন।

৩০ জুলাই ২০১৩, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা(BSS) পর্নোগ্রাফির উপর একটি রিপোর্ট পাবলিশ করে। এতে প্রকাশিত হয়, ঢাকার সাইবার ক্যাফেগুলো থেকে প্রতি মাসে বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা যে পরিমাণ পর্ন ডাউনলোড করে তার মূল্য ৩ কোটি টাকার মতো[৩]।

প্রতি বছর এ সমস্যা বেড়েই চলেছে। যতই নেটের স্পিড বাড়ছে ততোই পর্ন অ্যাডিক্টদের সংখ্যা বাড়ছে। পুরো সমাজটাই হয়ে যাচ্ছে সেক্সচুয়ালাইজড।সম্প্রতি আমাদের দেশের এক উদীয়মান মেইনস্ট্রিম অ্যাকট্রেস কোন এক টকশোতে স্বীকার করেছেন তিনি পর্ন দেখেন। বলার ভঙ্গীটা এমন ছিল যেন ব্যাপারটা খুবই মজার এবং দুধ-ভাত। শো এর যে হোস্ট ছিলেন তিনিও কিছুক্ষণ মজা নিলেন। ঐ পার্টে পর্ন দেখাটাকে ইন্ডিরেক্টলি প্রমোট করা হয়েছে। তার এই স্বীকারোক্তি আজ অসংখ্য মেয়েদের পর্ন দেখায় প্ররোচিত করবে।

স্কুল-কলেজ পড়ুয়া বেশীরভাগ ছেলেমেয়েরা এখনকার ইয়াং স্টারদের ফ্যান। এই বাচ্চাগুলো দুই-একজন সাহাবীর নামও ঠিকমতো বলতে পারেনা। অথচ তাদের প্রিয় স্টারের কয়টা এক্স গার্লফ্রেন্ড ছিল, তাদের পছন্দ কি সব বলে দিতে পারবে। সোশাল মিডিয়ায় তোলপাড় করা এই ইয়াং স্টাররা প্রতিনিয়ত সেক্সচুয়ালিটি কে উস্কে দিচ্ছে। দেখাচ্ছে পর্ন দেখা কোন ব্যাপার না, এটা এখন মৌলিক চাহিদা। এরা ঠিকমতোই জানে যে পর্নের ইফেক্ট কি! কিন্তু তারা চায়না আপনাকে সচেতন করতে। তারা চায় আপনাকে এন্টারটেইন করতে। এতে আপনি যদি পর্ন দেখার প্ররোচনা পান, এটা আপনার ব্যাপার। They don’t care if your brain changes or distroyes, they just care about the money.

রেফারেন্সঃ

[১] An investigative tv report by Farabi Hafiz ( https://m.youtube.com/watch?v=jUxXQB8PW7s)
[২] http://bartabangla.com/english/internet-porn-affinity-increasing-into-bangladeshi-youth/
[৩] http://archive.dhakatribune.com/long-form/2013/oct/28/let%E2%80%99s-talk-about-porn

Blog Image
কেন উদ্দেশ্য ঠিক করা প্রয়োজন?

ব্যক্তিগত জীবনে আমরা সবাই এক রকম না। আমাদের ব্রেইন, শরীরের গঠন অনুযায়ী এক এক জনের শক্তি, সামর্থ্য এক এক রকম। অতত্রব, আমরা যখন জীবনে কোন পরিবর্তন আনতে চাই, আমাদের কেউ কেউ খুব সহজেই তা অর্জন করে ফেলে। অন্যদিকে অনেকে সারাদিন খেটেও কোন কুল কিনারা খুঁজে পায় না।

কিন্তু দিনশেষে আপনার ব্যর্থতার জন্য আপনিই দায়ী। যারা নিজের ব্যর্থতার দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চায় তারা কখনো জীবনে উন্নতি করতে পারে না।

কোন কাজে সফলতা অর্জনের জন্য প্রথমেই আপনার উদ্দেশ্য ঠিক করা উচিত। কারণ আপনার উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করেই আপনি সামনে এগিয়ে যাবেন। আমরা অনেককেই দেখি তারা একটা ঝোঁকে পড়ে কোন কাজ ধরে। অন্যেরা করে তাই সেও করে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু মানুষ সিক্স প্যাক বানানোর উদ্দেশ্যে জিমে ঢুকে, যাতে মেয়েদের সামনে ভাব নেওয়া যায়। এরা খুব দ্রুত ফলাফল দেখতে চায়। স্টেপ বাই স্টেপ উন্নতি এদের সয়না। তাই প্রোটিনবার খেয়ে কিছুদিন ভাব-টাব নিয়ে আবার জিম ছেড়ে দেয়। কার কার পরিণতিতে কয়েক মাস পর দেখা যায় বিশাল এক ভুঁড়ি। উদ্দেশ্যতে গলদ থাকায় ব্যর্থ হওয়া এমন অনেক উদাহরণ আমরা আশেপাশে দেখতে পাই।

পর্ন অ্যাডিকশন এর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এমন। আপনার উদ্দেশ্য যদি ঠিক না থাকলে ব্যর্থ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেন আপনি আসক্তির এই কারাগার থেকে মুক্তি চাচ্ছেন? এর পেছনে ভালো উদ্দেশ্যগুলো আপনাকে যাচাই করতে হবে। আপনি একজন প্যাক্টিসিং মুসলিম। দ্বীনে আসার আগে থেকে আপনি আসক্ত ছিলেন। এখন দ্বীনে আসার পরও আপনার এই পথ থেকে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে উদ্দেশ্য থাকা উচিত ঈমান রক্ষা। আপনি যদি এই আসক্তি থেকে বের না হতে পারেন এবং প্রতিনিয়ত এই গুনাহে লিপ্ত হন তাহলে এর শেষ পরিণতি কি হতে পারে? কি হবে যদি আপনি পর্ন দেখা অবস্থাতে মারা যান? এভাবে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে। একইভাবে কার কার ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য হতে পারে নিজ স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক রক্ষা, কার ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার রক্ষা ইত্যাদি।

আমাদের দেশে পর্ন অ্যাডিকশন ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। এই মহামারি এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ক্লাস ৪-৫ এর বাচ্চা থেকে শুরু করে ৪০ বছরের একজন বাবাও পর্ন দেখে। আমরা যদি শুধু সমস্যা নিয়ে কথা বলে যাই তাহলে সমাধান কীভাবে হবে? তাই এ সমস্যা নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি সমাধানের জন্যেও আমরা আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করছি। তাই পর্ন অ্যাডিকশন থেকে মুক্তির এই যাত্রা সহজ করার জন্য আপনাকে ৭টি পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আর এর প্রথম পদক্ষেপই হচ্ছে “আপনার উদ্দেশ্যের দিকে মনোযোগ দিন।”। কীভাবে পর্ন অ্যাডিকশন থেকে মুক্তির জন্য উদ্দেশ্য ঠিক করবেন? জানতে পড়ুন।

Blog Image
আজই শুরু করুন

দীর্ঘ একটি পথ পাড়ি দিতে হবে। যাত্রাটা শেষ হতে হয়তো অনেক দিন লেগে যাবে। কীভাবে শুরু করব? আবার যদি আগের জায়গায় ফিরে আসি তখন কি হবে? আদো কি আমি আমার গন্তব্যে পৌছতে পারব?

গন্তব্যে পৌঁছান তো দূরের কথা, যাত্রা শুরু করার আগেই আপনি নেতিবাচক সব প্রশ্ন দিয়ে নিজের ব্রেইন ভরাট করে নিয়েছেন। কনফিডেনন্সটা আসবে কোত্থেকে?

দীর্ঘ যাত্রা নিয়ে একটি উক্তি আছে,
“হাজার মাইলের একটি পথের যাত্রা একটি পদক্ষেপ দিয়েই শুরু হয়”

পর্ন অ্যাডিকশন থেকে মুক্তির যাত্রা কারো কারো ক্ষেত্রে অনেক দীর্ঘ হতে পারে। তাই বলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে, দিন যাওয়ার সাথে সাথে আপনার অ্যাডিকশনের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে।

আপনি হয়তো চিন্তা করছেন, ‘আমি কিসের জন্য অপেক্ষা করছি? কেন আমি এতদিন ধরে এই অ্যাডিকশন থেকে মুক্তির জন্য কোন পদক্ষেপ নেইনি? আর কতদিন আমি কোন কাজ না করে শুধু নিজের সমস্যা নিয়েই কথা বলে যাব?

আমরা জানি যে, এই যাত্রার শুরুটা সহজ না। কিন্তু এখন আপনার যে করেই হোক শুরু করতে হবে। একটা প্লেন(বিমান) উড়ার আগের মুহূর্তটা কল্পনা করুন। একটা যাত্রা শুরু করতে প্লেনটার কতো এনার্জি দরকার হয়, আরও দরকার হয় অনেক নিরাপত্তা, নিতে হয় উড়ার জন্য প্রস্তুতি। এটা মোটেও সহজ কাজ না। কারণ, সব প্রস্তুতি ঠিকমত না নিলে প্লেন আকাশে উড়ার সময় বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।

একহার্ট টলির একটা উক্তি আছে,
“এটা মোটেও আশ্চর্যজনক না যে, কিছু মানুষ তাদের সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয় শুধু জীবনকে উপভোগ করা শুরু করবে ভেবে”

আপনি কি চান, এই ভাবনার মধ্যেই আপনার সারাটা জীবন কেটে যাক? আপনি কি সেই দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান, যেদিন আপনার স্ত্রী, সন্তান, স্বাস্থ্য, চাকুরী, এই জীবনে যা কিছু দেওয়া হয়েছে সবকিছুই হারিয়ে যাবে। তাই এখনই যাত্রা আরম্ভ করাটা জরুরী। আমাদের ব্রেইন সবসময় ঐ কাজগুলোকেই সহজে গ্রহণ করে যা করতে তেমন চেষ্টা করা বা বাধা পার হওয়া লাগে না। তাই পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্তির যাত্রায় আপনার প্রস্তুতিই আপনাকে বলে দিবে যে আপনি কতোটা সফল হবেন। আর প্রস্তুতি যদি ঠিকভাবে নেওয়া হয় তাহলে বাকি পথটা অটোপাইলট মুডে চলবে।

Blog Image
পর্ন যেভাবে বিষণ্ণ, একাকী আর বিচ্ছিন্ন করে তোলে

আপনার মনে হয়ত প্রশ্ন আসে, পর্ন কি আসলেই এতটা ক্ষতিকর? বাস্তবতা হচ্ছে, পর্ন আসলেই অনেক ক্ষতিকর। পর্ন মানুষকে আসক্ত করে ফেলে। এর পরিণতি স্বরূপ মানসিক বিকৃতি, সম্পর্কচ্ছেদ, নারী অথবা পুরুষদের প্রতি বিদ্বেষসহ নানান ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
ইন্টারনেটের বদৌলতে পর্ন সবার জন্য সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। বর্তমানে শতকরা ৬৮ জন পুরুষ এবং শতকরা ১৮ জন নারী সপ্তাহে অন্তত একবার পর্ন দেখে। আর এই পরিমাণটা ক্রমেই বাড়ছে। পর্নের মহামারি এভাবে বৃদ্ধি পাবার কারণ শুধু এর সহজলভ্যতা নয়; বরং এর ক্ষতি সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাবও বটে।

আমরা জানি পর্ন আসক্তির ফলে একজন মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে। আরও গবেষণায় উঠে এসেছে যে, পর্ন আমাদের মন-মস্তিস্ক, শরীর এবং সম্পর্কগুলোর, এককথায় পুরো জীবনের ক্ষতিসাধন করে।
এভাবে পর্ন দেখতে থাকলে একজন মানুষের তিন ধরনের সমস্যা হতে পারে,

বিষণ্ণতা
পর্ন আসক্তি মানুষের মাঝে বিষণ্ণতা আনে। একপর্যায়ে সে পুরোপুরি বিষণ্নতায় ডুবে যায় এবং সেই বিষণ্ণতা দূর করে সাময়িক আনন্দের আশায় সে বারবার পর্ন দেখতে থাকে। এভাবে পর্ন দেখা থেকে বিষণ্ণতা, আর বিষণ্ণতা থেকে আবার পর্ন দেখা– চলতে থাকে। ব্যাপারটা এমন হয়ে দাড়ায় যেন ‘ডিম আগে না মুরগী আগে?’ পরিশেষে ঐ ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
অন্যান্য আসক্তির মতো পর্ন দেখার ফলে আমাদের ব্রেইনে ডোপামিন নিঃসৃত হয়, যা আনন্দের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। ডোপামিন নিঃসৃত হতে হতে একসময় তার প্রভাব কমে যায়। তখন একই ধাঁচের পর্ন আর আগের মতো ভালো লাগে না, ফলে আসক্ত ব্যক্তি আরও কড়া ধাঁচের পর্ন দেখতে শুরু করে।

কারও কারও জন্য পর্ন আনন্দদায়ক বিনোদন। তারা যখন ব্যক্তিগত জীবনে অশান্তিতে ভোগে, তখন সাময়িক আনন্দ আর শান্তির খোঁজে এর কাছে ধরা দেয়। ফলে সে বাস্তব জীবনে প্রকৃত আনন্দ, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, মধুর কিছু সম্পর্ক হারিয়ে ফেলে, সবার থেকে দূরে চলে যায়। তাই পর্ন কোনো সমাধান নয়; বরং এটি একটি সমস্যা। এটি সুখ দেয় না; বরং কেড়ে নেয়।

মানসিক উদ্বেগ
পর্ন আসক্তি আপনার সম্পর্কগুলোকে নষ্ট করে, আপনার শরীর, মন ও বুদ্ধিবৃত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পর্নোগ্রাফির কারণে অনেকে নিজেদের নিয়ে, সম্পর্কগুলো নিয়ে, নিজেদের জীবন নিয়ে সুখী হতে পারেনা। সবশেষে তারা কখনও প্রকৃত ভালোবাসা পায় না। তাদের পুরো জগতটাই হয়ে ওঠে বিষাদময়।

এধরনের যৌন আসক্তির ফলে মনে যে অপরাধবোধ আর লজ্জা তৈরি হয় তা ব্যক্তিজীবনকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে আত্মসম্মানবোধ কমে যায়, কোনো কাজ ঠিকমতো করতে পারে না, সবার সাথে ঠিকভাবে চলতেও পারে না। যদি কারো মাঝে আত্মসম্মানবোধ কম থাকে, পর্ন আসক্তি সেটাকে আরও কমিয়ে দিবে, তাকে একদম বিষণ্ণ করে তুলবে, আরও নৈতিক অধপতন ঘটাবে।

বিচ্ছিন্নতা
আমাদের সম্পর্কগুলোকে পর্ন খুব বাজে ভাবে প্রভাবিত করে। আমরা মানুষ, আমরা একা থাকতে পারিনা। আমাদের অবশ্যই সবার সাথে মিলেমিশে থাকা লাগে। সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ থাকা লাগে। সমাজে আমাদের সৌহার্দ্য বজায় রাখা প্রয়োজন। পর্নে দেখানো নোংরা যৌনতার এ সমাজে কোনো প্রয়োজন নেই। মানুষ পর্ন নিয়ে যত বেশি সময় কাটাবে, সামাজিক বন্ধন থেকে সে তত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
পর্ন আসক্তরা বাস্তব জীবনে যৌনমিলনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। পর্ন দেখে তারা যতটা আনন্দ পায়, সহবাস করে ততটা পায়না। তারা বিভিন্ন যৌন সমস্যাতেও ভুগে থাকে। পর্ন আসক্তি তাদেরকে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব থেকে অনেক দূরে নিয়ে যায়। তাদেরকে জনবিচ্ছিন্ন আর একঘরে করে ফেলে।

আসক্তি থেকে মুক্তি
যদি আপনি পর্ন আসক্তিতে ভুগে থাকেন, হতাশ হবেন না। কোনো ভালো বন্ধু, সাপোর্ট গ্রুপ, অথবা থেরাপিস্টের সাহায্য নিন। সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমে আপনাকে সমস্যাটা কী এবং কোথায়- তা শনাক্ত করতে হবে। আসক্তির কারণে কারও জীবন ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না।

পরিশেষে বলতে চাই, সবার মাঝে আমাদের এই আওয়াজ জাগিয়ে তুলতে হবে, ‘পর্নকে না বলুন’। পর্নের মিথ্যা আনন্দে মানুষ যেভাবে ডুবে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তা আর চলতে দেওয়া যায় না। পর্ন মোটেই ভালো কিছু নয়। পর্ন একটি আবর্জনা, একটি অভিশাপ যা আমাদের জীবনকে বিষাক্ত করে তোলে। পর্ন আমাদের কেবল অবাস্তব, অমানুষিক, অশ্লীল, অসভ্য আর অস্বাস্থ্যকর জীবনের দিকে আহবান করে। এই আহবানকে রুখে দেবার এখনই সময়।

অনুবাদ: #teamFAD

Blog Image
পর্ন যৌন তৃপ্তি বাড়ায় না, বরং কমায়

পর্নের সাথে প্রকৃত যৌনতার কোনো সম্পর্ক নেই, দূর দূরান্ত থেকেও নেই। আপনার হয়ত এমনটা মনে নাও হতে পারে, কিন্তু এটাই সত্যি। বরং পর্ন একধরণের যৌন পণ্য যার ভোক্তা এতে আসক্তরা।

পর্ন স্বাভাবিক বা স্বাস্থ্যকর যৌনতাকে নিরুৎসাহিত করে


স্বাভাবিক যৌনতা হ্রাসে পর্নের ভূমিকা বারবার গবেষণায় উঠে এসেছে, পর্ন যৌন উত্তেজনা, আকর্ষণ ও যৌন ক্ষমতায় সমস্যা সৃষ্টিতে সরাসরি দায়ী।[1] পর্ন স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সেক্স এবং যৌন তৃপ্তি কমিয়ে দেয়।[2] গবেষকরা পর্নের সাথে সেক্স ড্রাইভের ঘাটতি, যৌন জটিলতা ও অকাল বীর্যপাতের গভীর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন।[3]

যারা বারবার পর্ন দেখে তাদের অনেকেই একপর্যায়ে পর্ন না দেখলে আর উত্তেজিত হতে পারেন না, এমনকি সহবাসের সময়ও না।[4] সাম্প্রতিক বেশ কিছু সিনিয়র হাইস্কুল ছাত্রদের মাঝে চালানো এক জরিপে পর্ন দেখার ফলে তাদের যৌন কামনা হ্রাস পেয়েছে দেখা গেছে।[5] এত অল্পবয়সী যুবকদের মাঝে সেক্স ড্রাইভের এমন অভাব কিছুটা হলেও অবিশ্বাস্য।
লক্ষ্য করুন পর্ন যদি সেক্স সম্পর্কিতই হয় তবে তো তাতে দর্শকদের এসব যৌন জটিলতা থেকে মুক্তির উপায় জানানো হত, কিন্তু পর্ন উল্টো এসব সমস্যাকে উত্তরোত্তর বাড়িয়েই চলেছে। এটা দর্শকদের যৌন তৃপ্তি বাড়ায় তো না-ই, বরং কমিয়ে দেয়।[6][7][8][9][10][11] বরং পর্ন যে বড় সমস্যা তৈরি করে তা হলো এর প্রতি আসক্তি যা পরিস্থিতিকে আরও দ্রুত অবনতির দিকে নিয়ে যায়। আর এ আসক্তিই পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসার হাতিয়ার, মানুষ যত পর্ন আসক্ত হবে, তাদের ব্যবসার প্রসার তত বেশি হবে।

চলুন ব্যাখ্যা করে বোঝানো যাক।

আসক্তির ব্যবসা আমরা “যৌন ব্যবসা”র কথা শুনেছি, তাই না? কিন্তু এখন শুধু যৌনতাই বিক্রি হচ্ছে না, বরং পর্ন দেখিয়ে দিচ্ছে ভোগবাদ, বস্তুবাদ, অমানবিকতাও বিক্রি হয় এখন। মূলত পর্ন দেখা একবার চালু হবার পর আসক্ত দর্শকরা তাদের টাকা ও ক্লিকের মাধ্যমে পর্ন ইন্ডাস্ট্রিকে লাভবান করতে থাকে। তারা বারবার পর্নের কাছে ফিরে আসতে থাকে। এথেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারে না, যখন আসতে চায় ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রির কথাই ধরা যাক, তারা বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, আশ্রয়স্থল, স্যুপ কিচেনে হাজার হাজার ফ্রি সিগারেট দান করেছে।[12] এর কারণ কি? কারণ হল তাদের প্রতি যারা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে তাদের নির্ভরশীলতাকে আরও বৃদ্ধি করা। অদ্ভুত, তাই না?

এটা নতুন কিছু নয়। কোন ইন্ডাস্ট্রি যদি তাদের প্রতি মানুষকে আসক্ত বা নির্ভরশীল করতে পারে, আর এ আসক্তিকে, নির্ভরশীলতাকে যদি বাড়াতে পারে তবে তারা সেটা করে, করবেই। পর্ন ইন্ডাস্ট্রি তাদের কনজ্যুমারদের এই ফাঁদে ফেলে তাদের আসক্তিকে আর নির্ভরশীলতাকে বাড়ানোর জন্য তাদের অবস্থাকে কাজে লাগায়। তখন দর্শকরা তাদের যৌন চাহিদাকে পূরণের জন্য পর্নের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এটা অর্থ আয়ের এক নোংরা প্রক্রিয়া যা আমাদের সমাজের মানুষগুলোকে গিলে খাচ্ছে। 

পর্ন ইন্ডাস্ট্রি একটা মধুর সম্পর্ককে ধ্বংস করে এবং একজন আসক্ত দর্শক থেকে বেশ মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। এসব কনজ্যুমারদের যৌন উদ্দিপনাকে কাজে লাগিয়ে তারা তাদের মার্কেট ধরে রাখে, তারা বিপুল অঙ্কের অর্থ লাভ করে। তাদের কাছে এটা নিছকই একটা ব্যবসা, যার মার্কেট এখন ৯৭ বিলিয়ন ডলারের উপরে।

মিথ্যাকে বর্জন করুন

আমরা আমাদের প্রথম কথাতেই অটল আছিঃ পর্ন কখনই যৌনতা সম্পর্কিত নয়, একদমই না। এটা খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে। পর্ন ইন্ডাস্ট্রি মানুষকে তাদের জালে আটকে ফেলে, আসক্ত করে তোলে যে আসক্তি ক্রমশ বাড়তে থেকে। আর এই পর্ন ইন্ডাস্ট্রি এমন কিছু জিনিসকে আমাদের সামনে নিয়ে আসছে যা আসলে মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যের সাথে যায় না। এভাবে তারা মানবতাকে এবং এই সমাজটাকে অমানবিক এক নষ্ট রূপ দিতে চাচ্ছে। আর এসব করে তারা নিজেদের পকেট ভারি করছে। পর্ন যৌনতা সম্পর্কিত নয়, এটা আনন্দ-বিনোদনের কিছু নয়, এটা শুধুই একটা ব্যবসা। আর প্রত্যেক দর্শক তাদের এই অন্ধকার চক্রান্তের ভুক্তভোগী, সেটা তারা বুঝুক আর নাই বুঝুক। তাই আমাদের যুদ্ধ করার আরেকটি কারণ হচ্ছে, মানুষকে এই দূষিত ইন্ডাস্ট্রির হাত থেকে রক্ষা করা, তাদেরকে বাস্তব ও ভালো সম্পর্কের বাধনে বাঁধা, প্রকৃত ও পবিত্র যৌন সম্পর্কের মাঝে রাখা।

রেফারেন্সঃ

[1] Carvalheira, A., Traeen, B., & Stulhofer, A. (2015). Masturbation And Pornography Use Among Coupled Heterosexual Men With Decreased Sexual Desire: How Many Roles Of Masturbations? Journal Of Sex And Marital Therapy, 41(6), 626-635. Doi:10.1080/0092623X.2014.958790; Voon, V., Et Al. (2014). Neural Correlates Of Sexual Cue Reactivity In Individuals With And Without Compulsive Sexual Behaviors, PLoS ONE, 9(7), E102419. Doi:10.1371/Journal.Pone.0102419; Sun, C., Bridges, A., Johnason, J., & Ezzell, M. (2014). Pornography And The Male Sexual Script: An Analysis Of Consumption And Sexual Relations. Archives Of Sexual Behavior, 45(4), 1-12. Doi:10.1007/S10508-014-0391-2; Poulsen, F. O., Busby, D. M., & Galovan, A. M. (2013). Pornography Use: Who Uses It And How It Is Associated With Couple Outcomes. Journal Of Sex Research 50(1), 72-83. Doi:10.1080/00224499.2011.648027; Stewart, D. N., & Szymanski, D. M. (2012). Young Adult Women’s Reports Of Their Male Romantic Partner’s Pornography Use As A Correlate Of Their Self-Esteem, Relationship Quality, And Sexual Satisfaction. Sex Roles, 67(5-6), 257-274. Doi:10.1007/S11199-012-0164-0; Maddox, A. M., Rhoades, G. K., & Markman, H. J. (2011). Viewing Sexually-Explicit Materials Alone Or Together: Associations With Relationship Quality. Archives Of Sexual Behavior, 40(2), 441-448. Doi:10.1007/S10508-009-9585-4; Morgan, E. M. (2011). Associations Between Young Adults’ Use Of Sexually Explicit Materials And Their Sexual Preferences, Behaviors, And Satisfaction. Journal Of Sex Research, 48,(6), 520-530. 8(6):520-30. Doi:10.1080/00224499.2010.543960; Janssen, E., & Bancroft, J. (2007). The Dual-Control Model: The Role Of Sexual Inhibition & Excitation In Sexual Arousal And Behavior. In Janssen, E. (Ed.), The Psychology Of Sex (Pp. 197-222). Bloomington, IN: Indiana University Press; Zillman, D., & Bryant, J. (2006). Pornography’s Impact On Sexual Satisfaction. Journal Of Applied Social Psychology, 18(5), 438-453. Doi:10.1111/J.1559-1816.1988.Tb00027.X
[2] Minarcik, J., Wetterneck, C. T., & Short, M. B. (2016). The Effects Of Sexually Explicit Material Use On Romantic Relationship Dynamics. Journal Of Behavioral Addictions, 5(4) 700-707. Doi: 10.1556/2006.5.2016.078; Doran, K., & Price, J. (2014). Pornography And Marriage. Journal Of Family And Economic Issues, 35(4), 489-498. Doi:10.1007/S10834-014-9391-6; Sun, C., Bridges, A., Johnason, J., & Ezzell, M. (2014). Pornography And The Male Sexual Script: An Analysis Of Consumption And Sexual Relations. Archives Of Sexual Behavior, 45(4), 1-12. Doi:10.1007/S10508-014-0391-2; Poulsen, F. O., Busby, D. M., & Galovan, A. M. (2013). Pornography Use: Who Uses It And How It Is Associated With Couple Outcomes. Journal Of Sex Research 50(1), 72-83. Doi:10.1080/00224499.2011.648027; Maddox, A. M., Rhoades, G. K., & Markman, H. J. (2011). Viewing Sexually-Explicit Materials Alone Or Together: Associations With Relationship Quality. Archives Of Sexual Behavior, 40(2), 441-448. Doi:10.1007/S10508-009-9585-4; Morgan, E. M. (2011). Associations Between Young Adults’ Use Of Sexually Explicit Materials And Their Sexual Preferences, Behaviors, And Satisfaction. Journal Of Sex Research, 48,(6), 520-530. 8(6):520-30. Doi:10.1080/00224499.2010.543960; Yucel, D., & Gassanov, M. A. (2010). Exploring Actor And Partner Correlates Of Sexual Satisfaction Among Married Couples. Social Science Research, 39725-738. Doi:10.1016/J.Ssresearch.2009.09.002
[3] Wery, A., & Billieux, J. (2016). Online Sexual Activities: An Exploratory Study Of Problematic And Non-Problematic Usage Patterns In A Sample Of Men. Computers In Human Behavior, 56, 257-266. Doi:10.1016/J.Chb.2015.11.046; Sutton, K. S., Stratton, N., Pytyck, J., Kolla, N. J., & Cantor, J. M. (2015). Patient Characteristics By Type Of Hypersexuality Referral: A Quantitative Chart Review Of 115 Consecutive Male Cases. Journal Of Sex And Marital Therapy, 41(6), 563-580. Doi:10.1080/0092623X.2014.935539; Carvalheira, A., Traeen, B., & Stulhofer, A. (2015). Masturbation And Pornography Use Among Coupled Heterosexual Men With Decreased Sexual Desire: How Many Roles Of Masturbations? Journal Of Sex And Marital Therapy, 41(6), 626-635. Doi:10.1080/0092623X.2014.958790; Voon, V., Et Al. (2014). Neural Correlates Of Sexual Cue Reactivity In Individuals With And Without Compulsive Sexual Behaviors, PLoS ONE, 9(7), E102419. Doi:10.1371/Journal.Pone.0102419; Janssen, E., & Bancroft, J. (2007). The Dual-Control Model: The Role Of Sexual Inhibition & Excitation In Sexual Arousal And Behavior. In Janssen, E. (Ed.), The Psychology Of Sex (Pp. 197-222). Bloomington, IN: Indiana University Press;
[4] Voon, V., Et Al. (2014). Neural Correlates Of Sexual Cue Reactivity In Individuals With And Without Compulsive Sexual Behaviors, PLoS ONE, 9(7), E102419. Doi:10.1371/Journal.Pone.0102419; Sun, C., Bridges, A., Johnason, J., & Ezzell, M. (2014). Pornography And The Male Sexual Script: An Analysis Of Consumption And Sexual Relations. Archives Of Sexual Behavior, 45(4), 1-12. Doi:10.1007/S10508-014-0391-2; Kalman, T. P., (2008). Clinical Encounters With Internet Pornography, Journal Of The American Academy Of Psychoanalysis And Dynamic Psychiatry, 36(4), 593-618. Doi:10.1521/Jaap.2008.36.4.593
[5] Damiano, P., Alessandro, B., & Carlo, F. (2015). Adolescents And Web Porn: A New Era Of Sexuality. International Journal Of Adolescent Medicine And Health, 28(2), 169-173. Doi:10.1515/Ijamh-2015-0003
[6] Stewart, D. N., & Szymanski, D. M. (2012). Young Adult Women’s Reports Of Their Male Romantic Partner’s Pornography Use As A Correlate Of Their Self-Esteem, Relationship Quality, And Sexual Satisfaction. Sex Roles, 67(5-6), 257-271.
[7] Leonhardt, N. D., & Willoughby, B. J. (2017). Pornography, Provocative Sexual Media, And Their Differing Associations With Multiple Aspects Of Sexual Satisfaction. Journal Of Social And Personal Relationships, 0265407517739162.
[8] Wright, P. J., Bridges, A. J., Sun, C., Ezzell, M. B., & Johnson, J. A. (2017). Personal Pornography Viewing And Sexual Satisfaction: A Quadratic Analysis. Journal Of Sex & Marital Therapy, 1-8.
[9] Wright, P. J., Steffen, N. J., & Sun, C. (2017). Is The Relationship Between Pornography Consumption Frequency And Lower Sexual Satisfaction Curvilinear? Results From England And Germany. The Journal Of Sex Research, 1-7.
[10] Streep, P. (2014, July 16). What Porn Does To Intimacy | Psychology Today. Retrieved From https://Www.Bing.Com/Cr…
[11] Scott, E. (2017, August 12). Watching Porn Is Leaving Women Unsatisfied By Real-Life Sex, Says New Study. Retrieved From http://Metro.Co.Uk/…/Watching-Porn-Is-Leaving-Women…/
[12] Initiative, T. (2017, August 21). Tobacco Is A Social Justice Issue: Mental Health. Retrieved From https://Truthinitiative.Org/…/Tobacco-Social-Justice…

Blog Image
যে ৫০টি কারণে পর্ন ছাড়বেন

পর্ন বর্তমান সময়ের এক মহামারি সমস্যা। বেখেয়ালে এতে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত লাখো তরুণ। তবে আশার কথা হলো, পর্নের বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক গবেষণা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা। তবুও অনেকেই পর্ন আসক্তি থেকে মুক্তির যাত্রা শুরু করার প্রেরণা পায় না। তাদের জন্যই এ আর্টিকেল। এখানে আমরা পর্ন ছাড়ার ৫০টি কারণ নিয়ে আলোচনা করব। আসুন, শুরু করা যাক।

১) শারীরিক মিলন সম্পর্কে পর্ন কোনো আকর্ষণীয় উপায় জানায় না

পর্নের সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার হচ্ছে এটা মানুষকে সেক্সচুয়াল ফ্যান্টাসিতে ভোগায়। এসব পর্নে যা দেখানো হয় সেগুলো বাস্তবতার সম্পূর্ণ বিপরীত। বেশি পর্ন দেখার ফলে বাস্তব মিলন তখন মানুষের কাছে পর্নের মতো আকর্ষণীয় মনে হয় না। দেখা দেয় অপ্রাপ্তির বিষণ্ণতা, মনোমালিন্য ও সম্পর্কে টানাপোড়ন। পর্নে যা দেখানো হয় সবটুকুই অতিরঞ্জিত অভিনয় যার সাথে বাস্তবতার সামান্যতম সম্পর্ক নেই। 

২) এটা একটা নেশার মতো

বাইরে থেকে দেখলে কোকেন আর পর্ন এক জিনিস নয়। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল বলে, মাদকসেবনের ফলে মস্তিস্কে যে হরমোন নিঃসৃত হয়ে আনন্দের অনুভূতি দেয়, পর্ন দেখলেও ঐ একই হরমোন একইভাবে কাজ করে। মাদকসেবনের ফলে ডোপামিন, অক্সিটোসিন প্রভৃতি হরমোন নিঃসরিত হয়ে মস্তিস্কে একটি পথ (pathway) তৈরি করে, যে পথে নিয়মিত হরমোন নিঃসরণের প্রয়োজন দেখা দেয়, যা ব্যক্তিকে মাদকাসক্ত করে তোলে। তাই পর্নও একটি মাদক। এটা চোখের মাধ্যমে প্রবেশ করে। অন্যান্য ড্রাগ আসক্তির মতো এ আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়াও একসময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে আসক্তি থেকে মুক্তির এই যাত্রায় আপনি সঙ্গী হিসেবে আমাদের পাশে পাবেন, আর এ মুক্তির স্বাদ অত্যন্ত প্রশান্তিদায়ক। 

৩) এ অভ্যাস ও আসক্তি ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে

পর্ন আসক্তি বেশ ভয়ানক। নিজেকে টিকিয়ে রাখতে এ আসক্তি ক্রমেই ডালপালা ছড়াতে থাকে। ব্যক্তি আনন্দ পাবার জন্য আরও বেশি পর্ন দেখতে থাকে। প্রতিবার পর্ন দেখার সময় আগের বারের চেয়ে বেশি আনন্দ পেতে হার্ডকোর পর্ন দেখার প্রয়োজন পড়ে। ফলে দিন দিন তার চেতনা ও বোধশক্তি আরও ভোঁতা হতে থাকে। তাই আসক্তি আপনাকে শেষ করে ফেলার আগেই মুক্তির পথে ঘুরে দাঁড়ান। নিজেকে বাঁচান।

৪) জীবন ও মনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন

একপর্যায়ে পর্ন দর্শকরা এমনসব দৃশ্য দেখে আনন্দ পায় যা আগে তাদের কাছে জঘন্য লাগতো। কড়া ধাঁচের পর্নগুলো দেখতে দেখতে সে মারাত্মক ক্ষতিকর কাজগুলোকে দর্শক খুবই স্বাভাবিক ভাবতে শুরু করে। পর্ন মানুষের আদর্শকে ধ্বংস করে, বিবেককে নষ্ট করে আর সম্পর্কগুলোতে তিক্ততা বয়ে আনে। আপনার এ বদভ্যাসকে দূর করুন। নাহলে জীবনে আরও কষ্টদায়ক অবস্থায় পড়তে আপনি বাধ্য।

৫) বাস্তব জীবনে ফিরে আসুন

পর্নে মানুষকে যৌন পন্য হিসেবে দেখানো হয়। এর মাঝে বাস্তব অথবা রোমান্টিক কিছুই নেই। বরং এটা বাস্তবতা থেকে মানুষকে দূরে নিয়ে যায়। ফলে বাস্তব জীবনে তারা সুখী হতে পারে না। আপনার জীবন তখনই পূর্ণতায় পৌঁছবে যখন আপনি পর্ন ছেড়ে বাস্তব জীবনে ফিরে আসবেন।

৬) নিজের দেহের কদর করুন

পর্নে মেকাপ, সার্জারি, এডিটিং, অভিনয়- এসব ব্যবহার করে মানবদেহ ও যৌনতা নিয়ে অনেক ভুল ও অবাস্তব ধারণা মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। দর্শক নিজের অজান্তেই যা দেখছে তার সাথে নিজেকে তুলনা করতে থাকে। নিজের শরীর ও জীবন নিয়ে হতাশা, হীনমন্যতায় ভোগে। পর্ন আসক্তি থেকে মুক্তি আপনার সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেবে, আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। 

৭) প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করুন

পর্নের প্রভাবে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে অবমূল্যায়ন করা হয়। কারণ, সেখানে তাদের এমন যৌন বস্তু হিসেবে দেখানো হয় যা অমানুষিক ও বাস্তবতাবিরোধী। ফলে প্রকৃত সুন্দরকে আর সুন্দর মনে হয় না। পর্ন এমন এক মিথ্যা কাল্পনিক জগতে মানুষকে নিয়ে যায় ফলে তার রুচি-কামনা-বাসনা কুৎসিত রূপ লাভ করে। সে এমন কিছু চায় যা তার স্ত্রীর মাঝে থাকে না। থাকার কথাও নয়। পর্ন ছেড়ে দেবার পর লোকে বলে যে তারা তাদের স্ত্রীর সৌন্দর্য উপলদ্ধি করতে পারেন। তাদেরকে আর ভোগের বস্তু হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করেন। প্রকৃতভাবে ভালবাসতে পারেন, সৌন্দর্যের মূল্য বোঝেন।

৮) যৌন অক্ষমতা প্রতিরোধ করুন

পর্ন যৌন অক্ষমতা ও যৌন অতৃপ্তির মূল কারণ। পর্ন দর্শকদের জরিপ নিয়ে জানা গিয়েছে, পর্ন দেখতে দেখতে একসময় ব্যক্তি তার স্বাভাবিক যৌনতাকেই ধ্বংস করে ফেলে । জানা গেছে, নিয়মিত পর্ন দেখার ফলে মস্তিষ্কে এমন পরিবর্তন আসে যার ফলে বাস্তবে সহবাস করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। পর্ন আসক্তি একজন পুরুষের উত্তেজিত হবার ক্ষমতাকেই নষ্ট করে দেয়। কিন্তু এটা তারা টের পায় অনেক দেরিতে। এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো পর্ন ও মাস্টারবেশনের মতো বাজে অভ্যাস থেকে মুক্ত হওয়া। স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসা।

৯) যৌন পাচার বন্ধ করুন

মানুষ যত পর্ন দেখবে পর্ন ইন্ডাস্ট্রি তাদের চাহিদা পূরণের জন্য তত বেশি মানব পাচার চালিয়ে যাবে। যৌন পাচারের শিকার অগণিত নারীকে পর্নে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এমনকি সরকারিভাবে বৈধতাপ্রাপ্ত আমেরিকান এডাল্ট ইন্ডাস্ট্রিতেও পর্ন তারকারা হরহামেশাই জুলুম ও জোরপূর্বক মাদকদ্রব্য গ্রহণের শিকার হয়। ক্যামেরার পেছনে থাকা অন্ধকার তিক্ত সত্যকে জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। পর্নকে ‘না’ বলে আপনি এসব শোষণ-নিপীড়ন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারবেন। জালিমদের কালো হাত থেকে কাউকে হয়ত বাঁচাতে পারবেন।

১০) পর্ন নারী নির্যাতনে উৎসাহিত করে

অনেক পারফর্মার বলেছে, পর্নে উগ্র ও অনিরাপদ যৌনকর্ম দেখানোর জন্য তাদেরকে ধর্ষণ করা হয়। প্রতিনিয়ত নির্যাতন চলে। জোরপূর্বক মাদকও দেওয়া হয়। পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ক্যামেরার পেছনের অন্ধকার জগত খুবই ভয়াবহ। পর্ন এসব নিপীড়নকে স্বাভাবিক প্রমাণ করতে চায়, কিন্তু সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ এটা মেনে নিতে পারেন না। পর্ন দেখা মানে হচ্ছে এমন একটা গোষ্ঠীকে সাহায্য করা যারা তাদের অভিনেত্রী ও দর্শক সবাইকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

১১) পর্ন আপনার আচরণকে উগ্র করে তোলে আপনার অজান্তে

সব পর্ন একরকম না হলেও বেশিরভাগ পর্নেই নারীদের মৌখিক ও শারীরিকভাবে অপমান করা হয়, গালাগালি করা হয়। আর দর্শক এর দ্বারা অবশ্যই প্রভাবিত হয়। লাঞ্ছিত না করা হলেও পর্নগুলোতে পুরুষকে দেখানো হয় শক্তিশালী রুপে, শিকারি হিসেবে- আর নারীকে দেখানো হয় দুর্বল, ভোগের বস্তু, শিকার হিসেবে। কাউকে লাঞ্ছিত বা আক্রমণ করা হলে সেও পাল্টা আক্রমণ করবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু ৯৫% পর্নে নারীরা আক্রমণের বিরোধিতা করা তো দূরে থাক, উল্টো ভুক্তভোগী নারীকে এক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় অথবা এসব উপভোগ করে দেখানো হয়। ফলে দর্শকদের মনে এ বিশ্বাস জন্মে যে, জবরদস্তি বা আক্রমণাত্মক আচরণ মেয়েরা পছন্দ করে, ছেলেরা চাইলেই মেয়েদের ওপর ঝাপিয়ে পড়তে পারে। ফলস্বরুপ এসব দর্শকরা নিজেদের স্ত্রীদের কষ্ট দিয়ে থাকে। আর এভাবে এদের সম্পর্কগুলোও বিষাদময় হয়ে উঠে। সমাজে বাড়তে থাকে ধর্ষণ ও খুনের পরিমাণ।

১২) সৃজনশীলতা বাড়াতে পর্ন ত্যাগ করুন

সৃজনশীল হবার জন্য আপনাকে জীবনের গভীরে ঢুকতে হবে। জীবনের প্রতিটি দিককে দেখে তার মর্ম উপলদ্ধি করতে হবে। কিন্তু পর্ন এমন সব সস্তা আর নোংরা ঘেরা কল্পনার জগতে আপনাকে বন্দি করে ফেলে যা আপনার ভিতরের আবেগ ও প্রেরণাকে নষ্ট করে দেয়। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনি আরও সুক্ষ্ম চিন্তার অধিকারী ও দূরদর্শী হতে পারবেন। ঠাণ্ডা মাথার মানুষে পরিণত হবেন।

১৩) আরও সৎ জীবনে অভ্যস্ত হোন

সব পর্ন আসক্তরা তাদের আসক্তির ব্যাপারে মিথ্যা বলে না। তবে তারা সত্য বলতে লজ্জা পায়। সত্যকে লুকিয়ে রাখা আবশ্যক মনে করে। তারা স্বীকার করুক বা না করুক এটা ভালোভাবেই তারা জানে তাদের সঙ্গী পর্ন আসক্তিকে খারাপ চোখে দেখে। দীর্ঘদিন ধরে একটা মিথ্যার সাথে জীবন কাটানোর ফলে এটাকে তারা একসময় স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেয়। আপনি যত বেশি মিথ্যার আশ্রয় নিবেন, সত্য স্বীকার করা তত বেশি কঠিন হয়ে যাবে। আপনার সমস্যার কথা খুলে বলুন, আশা করা যায় আপনি আগের থেকে অনেক হালকা অনুভব করবেন। 

১৪) সময় বাঁচান, কাজে লাগান

আপনি হয়ত খেয়াল করেছেন যে পর্ন আপনার অজস্র সময় নষ্ট করেছে। পর্ন দর্শক প্রতিদিন কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা সময় এসব ক্ষতিকর দৃশ্য দেখে নষ্ট করে। যারা ঘন ঘন পর্ন দেখে তারা জানে সময়ের সাথে সাথে তারা আরও কড়া ধাঁচের পর্ন আরও বেশি সময় ধরে দেখছে। ভেবে দেখুন, যদি আপনি দিনে মাত্র ১০ মিনিট সময় পর্ন দেখেন, তাহলে বছরে ৬০ ঘণ্টা সময় আপনি পর্ন দেখে নষ্ট করলেন। এই লম্বা সময়টা আপনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা ভালো কাজে লাগাতে পারতেন। সময় অনেক মূল্যবান। সময়কে কাজে লাগান। ভালো কাজ করুন। সময়কে এমন স্মৃতি দিয়ে ভরিয়ে তুলুন যেগুলো দীর্ঘস্থায়ী, এমন দৃশ্য দিয়ে নয় যেগুলো এক ক্লিকেই হারিয়ে যায়। 

১৫) মনের মানুষকে খুঁজে বের করুন

পর্নে যেভাবে মিলন দেখানো হয় তা ডাহা মিথ্যা। পর্ন দর্শক এ মিথ্যা আনন্দের জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে ওঠে আর সত্যিকারের সুখকে পেছনে ফেলে দেয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পুরুষদের বিয়ের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। কারণ, তারা ভাবছে পর্ন তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করছে। মিথ্যার এ ফাঁদ থেকে নিজেকে বাঁচান, আর আপনার মনের মানুষটিকে খুঁজে বের করুন। (বিয়ে করুন।) ভালোবাসা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

১৬) একজন উত্তম জীবনসঙ্গী হয়ে উঠুন

পর্ন শুধু আপনাকে নয়, আপনার জীবন সঙ্গীকেও প্রভাবিত করে। পর্ন আসক্তরা যেমন অনেক সমস্যায় ভোগে একইসাথে তাদের সঙ্গীও একা একা অনেক কষ্টকর অনুভূতির মধ্য দিয়ে যায়। যখন একজন স্ত্রী জানতে পারে তার স্বামী পর্ন আসক্ত; নিজের প্রয়োজন পূরণে সে তার স্ত্রীর কাছে না গিয়ে পর্নের দ্বারস্থ হয়, তখন ঐ নারী নিজেকে প্রতারিত ও অবহেলিত মনে করে। আপনি যদি আপনার ও আপনার স্ত্রীর মাঝে পর্নকে জায়গা না দেন তবে আপনাদের মাঝে মানসিক ও শারীরিক উভয়দিক থেকেই খুব মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠবে।

১৭) উত্তম বাবা-মা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলুন

পর্নের ক্ষতি শুধু স্বামী-স্ত্রীর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে না। পর্ন পরিবারের সদস্যদের বিচ্ছিন্ন করে, এমনকি পরিবার ভেঙ্গে যায়। তাছাড়া বর্তমানে শিশু-কিশোররা খুব অল্প বয়সে হার্ডকোর পর্ন দেখছে। এসব থেকে তারা যৌন শিক্ষা লাভ করছে, যা তাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। তারাও ভবিষ্যতে তাদের দাম্পত্য জীবনে এজন্য ভুগবে। আপনার সন্তানদের সাথে স্নেহ-ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলুন, তাদের খেয়াল রাখুন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পর্নমুক্ত জীবন উপহার দিন।

১৮) একজন উত্তম বন্ধুতে পরিণত হোন

আপনার পর্ন আসক্তি আপনাকে বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। সামাজিকতা থেকে অনেক দূরে চলে যাবেন আপনি। একাকিত্বসহ আরও নানান সমস্যা আপনাকে ঘিরে ধরবে। পর্নকে জীবন থেকে দূরে নিক্ষেপ করেই কেবল আপনি এর দাসত্ব এবং এ সম্পর্কিত সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাবেন।

১৯) মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখুন

পর্ন আসক্তি আপনার অনেক মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে। এছাড়া আপনাকে জীবনের আনন্দগুলো উপভোগ করতে দেয় না- যেমন- গল্পগুজব করা, কর্মঠ হওয়া ইত্যাদি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ঘন ঘন পর্ন দেখার ফলে উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতার মতো বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দেয় পর্ন ছেড়ে দেওয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ, এজন্য আপনাকে অবশ্যই কষ্ট করতে হবে। পরিশেষে আপনি একটি বড় বিজয় লাভ করবেন।

২০) নিজেকে আবার নিজের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনুন

নিয়মিত পর্ন দেখে এমন প্রতি পাঁচজনের একজন অনুভব করে, তারা তাদের কামনা-বাসনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এতে করে বাস্তব জীবনে তারা তাদের স্ত্রীদের দ্বারা উত্তেজিত হতে পারে না। ফলে মন ভুলে রাখতে তারা আরও বেশি পর্ন দেখে। তাদের জীবনে আরও জটিলতা বাড়তে থাকে। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনি কামনা-বাসনার গোলামী থেকে মুক্তি লাভ করবেন। আপনার যৌন চাহিদার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে, আর আপনার স্ত্রীর আরও কাছে যেতে পারবেন।

২১) কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসুন

পর্নের দৃশ্য ধারণের পূর্বে রিহার্সাল করা হয়। এরপর ধারণ করা দৃশ্যগুলো অনেক অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়। বিশেষ করে পারফর্মারদের দেহকে অত্যধিক সুন্দর হিসেবে দেখানো হয়। আর এসব দেখার ফলে দর্শক ও তার সঙ্গীর দৈহিক চাহিদা প্রভাবিত হয়। তাদের যৌন জীবন পশুর মত হয়ে ওঠে। পর্ন ছেড়ে দেওয়ার পরে আপনার ও আপনার স্ত্রীর মাঝে আরও মধুর সম্পর্ক তৈরি হবে, আপনাদের সত্যিকার অর্থে যেটা প্রয়োজন আপনারা সেটা চাইবেন, পর্নে যেটা দেখানো হবে সেসব নয়। আপনাদের মেলামেশাকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে তুলুন, পর্নের মতো অবাস্তব- জন্তু-জানোয়ার সদৃশ আচরণকে অনুসরণ নয়, পরিত্যাগ করুন।

২২) যৌনশক্তি বৃদ্ধি করুন

পর্ন দেখার সময় অনেকেই হস্তমৈথুন করে থাকে। কেউ এতে এতই আসক্ত হয়ে পড়ে যে দিনে কয়েকবার তারা হস্তমৈথুন করে। যে এরূপ করে সে তার দাম্পত্য জীবনে বিছানায় মেলামাশায় আনন্দ পায় না, অন্যভাবে বললে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়। আপনি নিশ্চিতভাবেই হস্তমৈথুন করার ফলে অনেক দুর্বলতা অনুভব করবেন, আপনার যৌন আকাঙ্ক্ষায়ও ঘাটতি দেখা দেবে। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনার এই শক্তি আপনি ধরে রাখতে পারবেন।

২৩) সামগ্রিক দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি করুন

পর্ন আপনার সময় ও স্বাভাবিক যৌনতাকে নষ্ট করে এটা তো স্পষ্টভাবেই বুঝা যায়। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন তা আপনাকে শারীরিকভাবে কতটা দুর্বল করে? দৈনন্দিন জীবনে যেরকম শারীরিক ও মানসিক শক্তির প্রয়োজন, পর্ন আপনার থেকে তা পুরোপুরি শুষে নিবে। এভাবে পর্ন আপনার কর্মক্ষমতা, আর জীবনীশক্তি একদম শেষ করে দিবে। পর্ন ছাড়ুন, আর আপনার নিজের ও অন্যদের উপকার হয় এমন কাজে নিয়োজিত হোন।

২৪) ফোকাস পুনর্জন করুন

কেউ কেউ দৈনন্দিন জীবনের দায়দায়িত্বে নিমজ্জিত হবার পর তা থেকে নিষ্কৃতি পাবার মাধ্যম হিসেবে পর্ন দেখে। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনি আরও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবেন এবং নিয়মমাফিক জীবনযাপন করতে পারবেন। এই বিপথ হতে বের হতে পারলে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কাজে ঠিকভাবে ফোকাস করতে পারবেন।

২৫) আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন

পর্ন থেকে মুক্তি পাবার জন্য আত্মবিশ্বাস একটি বড় হাতিয়ার। পর্ন আসক্তদের অনেকেই মূলত ভঙ্গুর হৃদয়ের হয়ে থাকে। তারা ভালোবাসা এবং আনন্দকে ঠিকমত উপলদ্ধি করতে পারেনা। পর্ন ছাড়তে পারার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসের অভাব সহ মনের আরও কিছু নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেক মানুষ পর্ন ছাড়তে পারে না। আর ক্রমাগত পর্ন দেখার ফলে মনের ওপর আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে যা এসব নেতিবাচক দিককে আরও বাড়িয়ে তোলে। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনার জীবনে যে সুখের অনুভূতি হবে তা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনার আত্মবিশ্বাস আরও বৃদ্ধি করবে।

২৬) আপনার সংসারকে রক্ষা করুন

বর্তমান বিশ্বে বিবাহ-বিচ্ছেদের একটি প্রধান কারণ হলো পর্ন আসক্তি। আপনি হয়ত বিয়ে করেছেন অথবা করবেন। এটা নিশ্চিত যে পর্ন আপনার বৈবাহিক জীবনকে বিষিয়ে তুলবে। পর্নের উপস্থিতিতে একটি সোনার সংসার, একটি মধুর সম্পর্ক ভেঙ্গে যেতে পারে। এরকম গুরুতর সমস্যার একটিই সমাধান- পর্ন চিরতরে ছেড়ে দেওয়া।

২৭) অর্থ বাঁচান

পর্ন বৈশ্বিকভাবে ৯৭ বিলিয়ন ডলার অর্থমূল্যের একটি ইন্ডাস্ট্রি যার ১২ বিলিয়ন ডলার আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আপনি পর্নের জন্য কত টাকা খরচ করেছেন? যদি খরচ নাও করে থাকেন, তাহলে এভাবে চিন্তা করুন- আপনি যে সময়গুলো পর্ন দেখে নষ্ট করেছেন সেগুলো দুইভাবে কাজে লাগাতে পারতেন। যেমন, ১) অর্থ উপার্জনে অথবা ২) কর্মক্ষেত্রে আরও ভালো করে সেখানে এতদিনে আরও বেশি উপার্জন করে। কথায় বলে, ‘Time is money’, সময়ই অর্থ। পর্ন দেখে সেই মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে আপনি নিজেকে কতটা নিষ্কর্মা হিসেবে গড়ে তুলছেন সেকথা ভেবে দেখেছেন?

২৮) স্বাভাবিক যৌনতা ধরে রাখুন

পর্ন যৌনমিলনের মধুরতা, পরস্পরের অন্তরঙ্গতাকে ধ্বংস করে দেয়। এটা ভালবাসতে শিখায় না বরং শুধু নিজের লালসা পূরণ করতে শিখায়। যখন আপনি পর্নে দেখানো সেসব দৃশ্য দিয়ে মন-মগজকে ভরে ফেলেন, তখন তা আপনার থেকে স্বাভাবিকভাবে যৌন উত্তেজনা পাবার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়, আপনার যৌনতাকেই বিকৃত করে তোলে। পর্ন ছাড়ার ফলে আপনার মস্তিষ্ক আবার স্বাভাবিকভাবে কাজ করবে এবং আপনার যৌন জীবনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

২৯) আগ্রহগুলোকে রক্ষা করুন

যে জিনিসগুলো আপনাকে আগে আনন্দ দিত পর্ন দেখতে শুরু করার পর সেগুলো আর আগের মতো ভালো লাগবে না। পর্ন আপনার ব্রেইনকে যতটা নাড়া দেয় বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া বা খেলাধুলা করা- এই কাজগুলো ততটা নাড়া দেয় না। পর্ন আপনার মাঝে যে চরম উত্তেজনা তৈরি করবে, তার ফলে আপানার অন্যকিছু আর ভালো লাগবে না। কিন্তু চিন্তার কোনো কারণ নেই। যত দ্রুত আপনি পর্ন ছাড়তে পারবেন তত দ্রুত আপনি আপনার ভালোলাগার কাজগুলোতে মনোনিবেশ করতে সক্ষম হবেন।

৩০) যৌন আসক্তি প্রতিরোধ করুন

আসক্তি সে যা কিছুরই হোক কখনোই ভালো কিছু নয়। পর্ন আপনার মাঝে প্রচণ্ড যৌনক্ষুধা জাগিয়ে তুলবে যা আপনাকে কখনও তৃপ্তি দিবে না। এই প্রক্রিয়ায় পর্ন দর্শক এক ঘোরের মাঝে আটকে যায় যা তাকে মানবসমাজে স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপন করতে দেয় না। বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের ব্যাপারে সে খুবই বিকৃত চিন্তাভাবনা লালন করতে থাকে। এমনকি সে এতটাই নিচে নেমে যেতে পারে যে সে পতিতালয়ে গমন করতে পারে। জীবনে সামনে এগিয়ে যেতে এবং পদস্খলন হতে নিজেকে বাঁচাতে পর্নকে আপনার জীবন থেকে অবশ্যই দূর করতে হবে।

৩১) স্ক্রিনের সাথে আবদ্ধ হবেন না

অক্সিটোসিনকে বলা হয় ভালোবাসার হরমোন। কারণ, এই হরমোন দুজন মানুষের মাঝে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। যৌন মিলনের সময়ও এই হরমোন নিঃসৃত হয়। আবার পর্ন দেখার সময়ও এই হরমোন নিঃসৃত হয় যা আপনার মাঝে পর্নের প্রতি টান তৈরি করে। পর্ন থেকে দূরে থাকুন। প্রকৃত ভালোবাসাকে কাছে টানুন, গ্রহন করুন। নকলকে বর্জন করুন।

৩২) উদ্বেগ প্রতিরোধ করুন

আগেই বলা হয়েছে, পর্ন দেখার কারণে মানসিক উদ্বেগ-দুশ্চিন্তার মতো সমস্যা হতে পারে। যখন আসক্তরা পর্নের কথা চিন্তা না করে থাকতে পারে না তখন তা গুরুতর উদ্বেগের সৃষ্টি করে। বলার অপেক্ষা রাখেনা এই উদ্বেগ বেডরুমেও প্রভাব বিস্তার করে। ফলে যৌন অক্ষমতার (erectile dysfunction) মতো সমস্যা দেখা দেয়। মানসিক উদ্বেগ খুবই পীড়াদায়ক। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততায় এমনিতেই কত মানসিক চাপে ভুগতে হয়। কি দরকার এর সাথে আরও কিছু যোগ করার?

৩৩) বিষণ্ণতা প্রতিরোধ করুন

আমরা জানি পর্ন দেখার ফলে বিষণ্ণতা বোধ হয়, আর মনের অবস্থা ক্রমেই আরও খারাপ হতে থাকে। অতি ক্ষণস্থায়ী একটি বিনোদন কারও আকাশে কালো অন্ধকার ডেকে আনে। পর্ন আপনার জীবনে শুধুই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জীবনকে স্বাধীন আর আনন্দময় করে তোলার উপায় হল পর্ন ছেড়ে দেয়া।

৩৪) স্বাধীন জীবন লাভ করুন

খারাপ কাজের কিন্তু মনের ওপর একটা খারাপ প্রভাব পড়ে। পর্ন দেখার ফলে আপনার মনে লজ্জার অনুভূতি হয়, নিজের কাছে খারাপ লাগে। পর্নের দৃশ্যগুলো খুবই নোংরা লাগার পরও আসক্ত দর্শক তা দেখা ছাড়তে পারে না। এই কষ্টকর অনুভূতি আরও পর্ন দেখতে প্ররোচিত করে। এভাবে একজন ব্যাক্তিকে পর্ন তার দাসত্ব করায় আর তাকে গ্রাস করতে থাকে। আপনি অবশ্যই নিজেকে মুক্ত, স্বাধীন অনুভব করবেন যখন দাসত্বের এই শিকল আপনি ভাঙতে পারবেন। 

৩৫) কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করুন

এরচেয়ে বড় প্রেরণাদানকারী কথা আর কি হতে পারে বলুন। আপনি কি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে চান না? জীবনে সফলতা চান না? বড় কিছু করার স্বপ্ন কি আপনি দেখেন না? রেড্ডিট কমিউনিটি ‘নো ফ্যাপ’ নামে একটি জরিপ চালিয়ে জানতে পারে যারা পর্ন ছাড়তে পেরেছিলেন তাদের শতকরা ৬৭ জনের শারীরিক শক্তি এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিলো। আর কিসের জন্য অপেক্ষা করছেন? আজই এই পরীক্ষায় অবতরণ করুন।

৩৬) কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করুন

পর্ন যেমন মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে তেমনি একইসাথে তা দর্শককে বিষণ্ণতা এবং দুশ্চিন্তায় নিপতিত করে। এরকম কষ্টকর পরিস্থিতিতে পড়ে তারা তাদের কাজকর্ম মোটেই ঠিকমত করতে পারে না। এমন ঘটনাও ঘটেছে যেখানে কাজের সময় পর্ন দেখতে গিয়ে ধরা পড়ার পর তাদের চাকরি হারানোর অবস্থা হয়েছে। পর্নের মতো সর্বনাশা বস্তুকে কখনই আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে ধ্বংস করতে দিবেন না।

৩৭) যৌনরোগ(STD) প্রতিরোধ করুন

বারংবার গবেষণায় জানতে পারা গেছে, বেশি পর্ন দেখা অনেকে যিনা-ব্যাভিচারে জড়িয়ে পড়ে। এক বা একাধিক মানুষের সাথে তারা যৌনসংগম করে। অনেক ভয়ানক ও ক্ষতিকর যৌন কর্মে লিপ্ত হয় যা তাদের মারাত্মক সব যৌনরোগে আক্রান্ত করে।

৩৮) শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান

পর্ন ছাড়ার মাধ্যমে আপনি একটি শোষণমূলক ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন। নিজেকে এবং পুরো সমাজকে বদলানোর দায়িত্ব কাধে তুলে নিচ্ছেন। ব্যাপারটা সত্যিই অসাধারণ। তাই বদলে যান, বদলে দিন।

৩৯) পৃথিবীকে আরও উত্তম করে তুলুন

পর্ন সাইটগুলোর লিংকে একেকটি ক্লিক এই ইন্ড্রাস্টির লোভী গোষ্ঠীকে প্রতিনিয়ত লাভবান করছে। এসব সাইটে যাওয়ার ফলে পর্নের চাহিদাকে ক্রমেই বাড়িছে। ফলে পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি সমাজে আরও বিস্তার লাভ করছে। এই অন্ধকারকে ছড়াতে দেওয়া যায় না। একে রুখতে হবে। কারণ, এই ইন্ডাস্ট্রি মানুষের জীবন নষ্ট করে এবং যৌন শোষণ-নিপীড়নকে সমর্থন করে। তাদের ক্ষতি আপনাকে সেভাবে স্পর্শ না করলেও আপনার আশেপাশের অনেককেই তা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিশেষ করে এই ইন্ডাস্ট্রির অসংখ্য জিম্মি যাদেরকে এসব কাজে বাধ্য করা হয় তাদের জীবনগুলো তছনছ হয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ নিন। পৃথিবীকে রক্ষা করুন।

৪০) একাকীত্ব কাটিয়ে তুলুন

পর্ন একজন ব্যক্তির একাকী সময়ে তাকে খানিকটা সঙ্গ দিয়ে তার একাকীত্বকে আরও শোচনীয় অবস্থায় নিয়ে যায়। পর্ন একজন দর্শককে নগদ পরিতৃপ্তি, অসীম উত্তেজনা এবং খুব সহজে যৌন প্রয়োজন পূরণের লোভ দেখায়। কিন্তু পরিশেষে তাকে প্রতারিত করে। তিনটির কোনটিই তাকে দেয় না। বরং, তার থেকে কেড়ে নেয়। তাকে নিঃস্ব করে ছাড়ে। 

৪১) সহিংসতা স্বাভাবিক হওয়াকে বাধা দিন

সহিংসতা কখনোই স্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু ১০-১১ বছরের কোমলমতি শিশুরাও এখন হার্ডকোর পর্নের নিকৃষ্ট দৃশ্য দেখে এসব কাজ স্বাভাবিক ভাবছে। ভেবে দেখুন তো এটা আমাদের মূল্যবোধকে কোথায় নামিয়ে দিচ্ছে। পর্ন আমাদের সম্পর্কগুলো ভঙ্গুর করে তুলছে। সকল ধরণের পর্ন ছাড়তে পারলে সহিংস ও আক্রমণাত্মক আচরণকে ভালোবাসা হিসেবে স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া বন্ধ হবে। আমাদের সমাজ এর ক্ষতির হাতথেকে রক্ষা পাবে।

৪২) মানুষকে সম্মান দিতে শিখুন

কখনও কি এমন হয়েছে যে কেউ ঘুম থেকে উঠে বলল, “আজকে আমি বের হয়ে সবার সাথে সব সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলব। নিজেকে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলব। আর সবাইকে অবহেলা করব, কষ্ট দিব?” এরকম কেউ করে না। কিন্তু কিছু জরিপে উঠে এসেছে পর্ন দেখার ফলে ঠিক এরকমটাই হতে পারে। পর্ন ছাড়ুন, আপনার প্রিয়জনদের পাশে থাকুন। এভাবে আপনি নিজেকে এবং অন্যদের সম্মান রক্ষা করবেন।

৪৩) বস্তুবাদের প্রসারকে বাধা দিন

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ কেন্ট-এর একটি জরিপে দেখা গেছে মেয়েদেরকে ভোগের বস্তু হিসেবে দেখা আর তাদের প্রতি আক্রমণাত্মক বা সহিংস হয়ে ওঠা পরস্পর সরাসরি সম্পর্কিত। আমরা পর্নের বিরুদ্ধে এজন্যই লড়াই করি। আমরা বিশ্বাস করি, মানুষ শুধু একটা দেহ নয়, যা চাইলেই যেভাবে খুশি ব্যবহার করা যায়, আবার চাইলেই ফেলে দেয়া যায়। পর্ন ক্ষতিকর তা গবেষণায় প্রমাণিত। কিছু মানুষ পর্নকে যতই স্বাভাবিক এবং ভালো প্রমাণ করতে চেষ্টা করুক না কেন, তাদেরকে ভুল প্রমাণ করার জন্য অনেক প্রমাণ আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন।

৪৪) মিথ্যা যৌনতাকে ছুড়ে ফেলুন

এমন জায়গা থেকে যৌনতা শিখতে যাবেন না যেখানে যৌন তৃপ্তির মিথ্যা অভিনয় দেখিয়ে টাকা কামানো হয়। আর কিছু নাহয় নাই বললাম।

৪৫) যুবসমাজকে ও শিশু-কিশোরদের রক্ষা করুন

পর্নে শেখায়, বেশি বয়সী কমবয়সীর ওপর এবং শক্তিবান দুর্বলের ওপর ক্ষমতাবান। পর্নকে দূর করতে পারলে শিশুকিশোরদের যৌন নির্যাতনের হাত থেকে অনেকটা রক্ষা করা যাবে। এটা নিশ্চয়ই অনেক বড় ব্যাপার। পর্ন ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে শিশু পর্ন, কিশোর পর্ন এর চাহিদাও কমিয়ে যাচ্ছে। এটা পর্নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভূমিকা রাখবে।

৪৬) বাস্তব মানবদেহ নিখুঁত নয়, তবে অতুলনীয় সুন্দর

পর্নে ফটোশপ বা এ জাতীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করে তাতে অভিনয় করা মানুষদের দেহগুলোকে চোখ ধাঁধানো, আকর্ষণীয় এবং নিখুঁত রূপে দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হয় না। একজন স্বাভাবিক মানুষের দেহ এমনিই সুন্দর, অতুলনীয়। পর্ন মুক্ত একটি পৃথিবী হলো এমন যেখানে কৃত্রিম সৌন্দর্য নেই, যেখানে মানুষকে কদর করা হয়, সম্মান করা হয়, তুলনা নয়। আমরা এমনই একটি পৃথিবীতে থাকেতে চাই। আপনিও কি তাই চান না?

৪৭) অসুস্থ সম্পর্ককে না বলুন

স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গতা অনেক বেশি কিছু দেয়। স্বামী-স্ত্রী মেলেমেশা করে যে আনন্দ পায় সেটা কখনই পর্ন দেখে পাওয়া সম্ভব নয়। বরং পর্ন একজন মানুষকে অপর একজনের প্রতি আক্রমণাত্মক, উগ্র করে তোলে। এই উগ্রতা শুধু বিছানায় নয়- মনে ও সমগ্র জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। সহবাস পরস্পরের অধিকার পূরণের জন্য করা হয়, শুধু নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য নয়। পর্ন ভালোবাসা শেখায় না, শুধু উগ্রতা আর অসভ্যতা শেখায়।

৪৮) সম্পর্ক থেকে বাস্তবতা বিবর্জিত চাহিদা ত্যাগ করুন

একটা সম্পর্ক গড়ে তোলা পরিশ্রমের কাজ। সম্পর্কগুলো কখনোই নিখুঁত হয় না। একইভাবে শারীরিক সম্পর্কও প্রত্যেকবার নিখুঁত ও সহজ হবে না। ভালোবাসা একটা মিশ্র অনুভূতি- আর এখানেই এর সৌন্দর্য- এটা বাস্তব ব্যাপার, কোনো রূপালী পর্দার মিথ্যা অভিনয় নয়। পর্নের সাথে বাস্তব সম্পর্কগুলোর পার্থক্যটা এখানেই। পর্ন এর অভিনেতার পারফর্ম্যান্সের বিচারে মাপা হয়, এখানে মানসিক যোগাযোগের কোনো ধার ধারা হয় না। বাস্তব ভালোবাসার সোন্দর্যই হলো- এর বাস্তবতা- বাস্তব মানসিক-শারীরিক-পারিবারিক অনুভূতির এক মিশ্র আনন্দ।

৪৯) সত্য ভালোবাসায় বিশ্বাস করুন

পর্ন যখন একজন মানুষের মন-মস্তিষ্ককে গ্রাস করে ফেলে, তখন সে পর্নে যা দেখে সেটাই তার কাছে সবকিছু মনে হয়। সে তখন ভালোবাসা বলতে কিছুতে বিশ্বাস করে না। তাদের কাছে যৌনতাই সবকিছু মনে হয়। সে মন থেকে কাউকে ভালবাসতে পারে না। পর্নের এসব মিথ্যাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেবার জন্য আপনাকে আজই পর্ন ছাড়তে হবে।

৫০) সত্য ভালোবাসাকে বেছে নিন

যেসব কারণে আপনার পর্ন ছাড়া উচিত এটি সেগুলোর মাঝে খুব গুরুত্বপূর্ণ। পর্ন আপনার ও আপনার জীবনসঙ্গীর মাঝে এসে দাড়িয়েছে। আপনাদের পরস্পরে প্রতি টান, ভালোবাসাকে এটা প্রভাবিত করে। পর্ন আপনাদের বিছানার অন্তরঙ্গতা একদম বিকৃত করে তুলবে। আমাদের কাছে এরকম অনেকের অভিজ্ঞতা এসেছে যেখানে পর্নের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে টানাপড়ন হয়েছে এবং তাদের মাঝ থেকে একসময় সুখ, আনন্দ- এই জিনিসগুলো হারিয়ে গিয়েছে। এভাবে অনেক সম্পর্ক ভেঙ্গেও যাচ্ছে। আমরা সবাই ভালোবাসা চাই। আমাদের জীবনে ভালোবাসা প্রয়োজন। ভালোবাসা জীবনকে খুবই উপভোগ্য করে তোলে, আনন্দময় করে তোলে। অন্তত আপনার সংসারটি রক্ষা করার জন্য পর্ন ছাড়ুন। পর্ন ভালোবাসার মৃত্যু ঘটায়। সেটা নিশ্চয় হতে দেওয়া যায় না। তাই আপনার জীবনে ভালোবাসাকে স্থান দিন, পর্নকে নয়। 

অনুবাদ: #teamFAD

Blog Image
ধর্মবিশ্বাসের ওপর পর্নোগ্রাফির প্রভাব

সম্প্রতি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ এর একটি গবেষণায় অ্যামেরিকার তরুণদের ধর্মবিশ্বাসের ওপর পর্নোগ্রাফির নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে[১]। এ গবেষণায় দেখা যায়,
.
১) সৃষ্টিকর্তার সাথে তাদের দুরত্ব বাড়ছে
২) তারা আগের চেয়ে কম প্রার্থনা করে
৩) ধর্মীয় উপাসনালয়ে তাদের উপস্থিতি কমছে
৪) তারা ধর্মকে জীবনের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে
৫) ধর্মবিশ্বাস নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিচ্ছে

পর্নোগ্রাফি আসক্তি যে ঈমানের জন্য ক্ষতিকর এটা বোঝার জন্য কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই। কিন্তু অনেকের জন্য এ তথ্য উপকারে আসবে বলে উল্লেখ করলাম।

এ ছাড়াও চ্যাটের যে স্ক্রিনশট দিলাম সেখানে এক ভাই তার বন্ধুর কথা বলছে। আমাকে মাস দুয়েক আগে কল করে প্রথম তার আসক্তির কথা জানিয়েছিল। জানতে চাচ্ছিল তাকে কী উপদেশ দেবে?

ছেলেটা খুব ভালো। প্রাক্টিসিং মুসলিম। সে এই আসক্তি থেকে নানাভাবে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুতেই লাভ হয়নি। পর্ন আসক্তি থেকে তার ওপর ডিপ্রেশন ভর করেছে। আর এখন আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে সংশয় হচ্ছে।

ছেলেটা বলেছে, “আল্লাহ্‌ তার ভালো চান না, তাই তাকে সাহায্য করছেন না”। একজন মুসলিম হিসেবে আমরা কখনই এমন কথায় বিশ্বাস করতে পারি না। আল্লাহ্‌ কোনো মুসলিমেরই খারাপ চান না। এই ছেলের মধ্যেও এ ধরণের উদ্ভট চিন্তা আগে কখনও আসেনি। কিন্তু পর্নোগ্রাফি আসক্তির কারণে তার ধর্মবিশ্বাসে পরিবর্তন আসছে। আল্লাহ্‌ তাকে হেফাজত করুক।



এ অবস্থায় সমাধান কী?

১) নিজে নিজে আসক্তি থেকে বের হতে না পারলে আমাদের অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া কিন্তু কোনো আনইসলামিক কাজ না; বরং আমাদের রসূল ﷺ রোগ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেছেন।

২) চিকিৎসা নেওয়ার মাধ্যমে মানসিকভাবে সুস্থ হওয়ার পাশাপাশি ঈমানকেও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। ইনশা আল্লাহ্‌। এক্ষেত্রে অবশ্যই এমন কোনো চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে যে সঠিক ধর্মবিশ্বাসের ওপর আছে। বিভ্রান্ত বিশ্বাসের কারও কাছে গেলে সে ঈমানের আরও বারোটা বাজিয়ে দেবে।

৩) সবসময় আল্লাহর ওপর আস্থা রাখতে হবে। তিনি আসক্তি থেকে মুক্ত করবেন— এ বিশ্বাস আনতে হবে।

৪) নিয়মিত কুরআন পড়তে হবে (অর্থসহ) এবং কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।

৫) নামাযে মনোযোগী হতে হবে। নামায যদি বুঝে, পরিপূর্ণ মনোযোগের সাথে আদায় করা যায় তাহলে, অশ্লীলতা থেকে অবশ্যই দূরে থাকা সম্ভব হবে, ইনশা আল্লাহ্‌।

রেফারেন্স

[১] https://bit.ly/39wZfa5