.jpg)
পর্ন আসক্তিকর! আমাদের এর ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলা উচিত
পর্নকে এখন আর কোন ভাবেই সমাজের একটি ট্যাবু বানিয়ে রাখার সময় নেই। এটাকে রাডারের নীচ থেকে বের করে আনতে হবে। ৯-১২ বছরের অনেক বাচ্চারা এখন নিয়মিত পর্নের দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ আমরা পর্নের ইফেক্টগুলো নিয়ে এখনো সামাজিক বা পারিবারিক ভাবে কথা বলছি না।
জনপ্রিয় ওয়েবসাইট নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন এবং টুইটারে প্রতি মাসে সম্মিলিতভাবে যে পরিমাণ মানুষ ভিজিট করে, পর্ন সাইটগুলোর ভিজিটর তার চেয়েও বেশী। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগা উচিত, যে এর কোন ক্ষতিকারক দিক আছে কিনা?
আপনারা জানলে হয়তো অবাক হবেন, যে শতকরা ৭০ জন যুবক এবং ৩০ জন মহিলা নিয়মিত পর্ন দেখে; বাচ্চারা খুব কম বয়সে (গড়ে ১১ বছর) পর্ন খুঁজে পাচ্ছে। এতো ভিউয়ার, উঠতি উত্তেজনা এবং প্রতিনিয়ত চাহিদা বৃদ্ধির সত্ত্বেও কেন মানুষ এর ক্ষতিকারক দিক নিয়ে কথা বলে না?
কানে তালা লাগিয়ে নীরব এ সমাজ
পর্নের ব্যাপারে সবাই নীরব কারণ এটা এমন একটা অভ্যাস যা অন্ধকার ও একাকীত্বের মধ্যে গড়ে উঠে। কিন্তু আমরা এই নীরবতাকে জিততে দিতে পারি না।
একটা সময় পর্ন ছিল বিরল এক জিনিস, যা পেতে বহুত ধাপ পার হতে হত। আর এখন স্মার্ট ফোন আছে এমন যে কেউই একটা ক্লিকে পর্ন দেখতে পারছে। পর্নকে এতোটাই স্বাভাবিক করে ফেলা হয়েছে যে, পর্নস্টারদের অভিনয়ের জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়। এমনকি এই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত খোলা হয়েছে। তাই এখন আর এ কথা বলার অবকাশ নেই যে, ৯৭ বিলিয়ন ডলারের এই ইন্ডাস্ট্রি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে তেমন প্রভাব খাটাতে পারেনি। কিন্তু ক্ষতি প্রতিনিয়ত হয়েই যাচ্ছে। সমাজ, পরিবার থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র, শপিং মল সর্বত্র এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে।
আমি ১২ বছর বয়স থেকে পর্ন আসক্ত। ১৬ বছর বয়স থেকে এ আসক্তি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি। আসলে পর্ন এতোটা প্রকট আকার ধারণ করেছে যে এটা নিয়ে কথা বলাটা অনেকটা মাছের পানি নিয়ে কথা বলার মত। এটা আপনার জীবনকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা বোঝা যেমন দায়, ঠিক তেমনই কঠিন এটাকে চার দেয়ালের মাঝে বন্ধী করে রাখাটা।
পর্ন আপনার যৌন চিন্তাধারাকে বিকৃত করতে সদা প্রস্তুত। যে একবার এর নেশায় পড়ে তার ছেলেদের/মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। আমার ক্ষেত্রেও তা ই হল। আমি মেয়েদের পণ্য হিসেবে দেখা শুরু করেছিলাম; যে মেয়েদের আমি প্রতিদিন দেখতাম তাদের মধ্যে খুব কম মেয়েই আমার সেক্সচুয়াল ফ্যান্টাসি থেকে রেহাই পেতো। কোথাও গেলে আমার চোখ ঘুরেফিরে তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের দিকে চলে যেত।
পর্ন আসলেই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলে। অন্যান্য আসক্তিকর জিনিসের মতো পর্নও আমাদের দেহ থেকে বের হয় না। আমি ১৫০ দিন পর্ন না দেখে কাটিয়েছি, কিন্তু আমি যা দেখতাম তা ভুলতে মনে হচ্ছে কয়েক বছর লেগে যাবে।
পর্নের ফ্যান্টাসিতে বাস করার কুফল
আমার জন্য পর্ন ছিল সব হতাশা ও একাকীত্বের কারণ। পর্ন জিনিসটা এভাবেই কাজ করে; আমাকে অদ্ভুত এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে ঘুরপাক খাওয়াত। আসলে পর্ন মানেই হচ্ছে সিলিকন ইমপ্ল্যান্ট, স্ফীত পেশী, লোমহীন অঙ্গ, অতিরিক্ত সন্তুষ্টি লাভের ভান করা কিংবা অস্বাভাবিক দেহগঠন। পর্নের এক একটা ইমেজ আমার শরীরে প্রভাব ফেলতে শুরু করল। পর্নস্টারদের নিখুঁত শরীর দেখতে দেখতে আমার নিজেকেই নিজের তুচ্ছ মনে হতে লাগল। ১২ বছর বয়স থেকেই আমি এসবের সাথে অভ্যস্ত হতে থাকি। একটা সময় সেক্স মানেই মনে হত, যেন দুজন লোমহীন মানুষ মেশিনের মতো প্রোগ্রাম করা কিছু কাজ করছে মাত্র।
আজকের এই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের পর্ন ইন্ডাস্ট্রি প্রতিনিয়তই বিস্তৃত হচ্ছে এবং নতুন ভিউয়ার বাড়াচ্ছে। একসময় চটি গল্পের বইগুলো ঘরের চিপাচুপায় লুকিয়ে রাখা হত। আর এখন মানুষ ব্রাউজারের হিস্ট্রি থেকে মুছে ফেলে, পোর্টেবল হার্ডড্রাইভে শত শত জিবির কালেকশন রাখে। বাধা দেওয়ার বা সচেতন করার যেন কেউ নেই। পত্রিকায় খবর পড়তে চান সেখানেও রেহাই নেই। কিছু অনলাইন নিউজ পেপারে আজকাল এমন ভিডিওর লিংক থাকে যা একটা ক্লিকেই আপনার রাতের ঘুম হারাম করে দিতে পারে।
পর্নে যে ভাষা ব্যবহার করা হয় তা প্রতিনিয়ত মেয়েদেরকে অবমাননা করা শেখাচ্ছে, নরমাল রেজুলেশন থেকে উন্নীত হয়েছে হাই রেজুলেশনে,- যা স্মৃতিতে থাকছে দীর্ঘ সময় জুড়ে, নষ্ট করছে ব্রেইনের ভারসাম্য এবং ভালো চিন্তা করার ক্ষমতা। যখন আমার বয়স ১৩, তখন সফটকোর পর্ন দেখেই সন্তুষ্ট থাকতাম। কিন্তু যখন সময় গড়িয়ে বয়স ১৫ হল, তখন সেই ভিডিওগুলো আমাকে আর উত্তেজনা দিতো না। আরও ৫ বছর পর এমন অবস্থা হল যে আমি নতুন এবং আরও এক্সট্রিম জিনিস খুঁজতাম।
কেউ কিন্তু একবারে অধিক আসক্তিকর ড্রাগ নেয় না। সে ধাপে ধাপে আগায়। পর্নের ক্ষেত্রেও একই রকম। কেউ প্রথমেই এক্সট্রিম কিছু দেখে না। তাকে আস্তে আস্তে এক্সট্রিম এবং জঘন্য ক্যাটেগরির দিকে কেমন পর্ন দ্বারা নিতে হবে তা পর্নের ডিরেক্টররা খুব ভালোমতোই জানে। এ জগতটা খুব পিচ্ছিল। আমি যদি এখন পর্যন্ত পর্ন দেখতে থাকতাম তাহলে এতদিনে হয়তো পিছলিয়ে এমন এক অতল গহ্বরে গিয়ে পড়তাম যেখান থেকে আমাকে কেউ বের করে আনতে পারত না।
কীভাবে ভাঙবেন এ নীরবতা?
বিভিন্ন শারীরিক ক্ষতি সহ পর্ন আসক্তিকর হতে পারে। অনেক তরুণরা আজ ইরেক্টাইল ডিসফাংশনে জর্জরিত। বিবাহিত যে পুরুষরা এ সমস্যায় পড়ছে তারা হারাচ্ছে স্ত্রী।
বাস্তবে একজন পুরুষ ও মহিলা, পর্ন পারফর্মারদের মত নন। তাদের দেহ, মন কোনকিছুই পুরোপুরি নিখুঁত না। পর্ন স্ত্রী-বিদ্বেষ এবং নারী পাচারের সাথে সম্পর্কিত। যদি আমরা আসলেই চাই যে পরিবারগুলোর মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠুক এবং একটি সমাজের মানুষেরা মানসিকভাবে সুস্থ থাকুক তাহলে পর্নগ্রাফির মত শোষণকে আমাদের বিদায় জানাতে হবে।
এইতো কিছুদিন আগে আমি কীভাবে পর্ন অ্যাডিকশন থেকে মুক্তি পেলাম তা নিয়ে একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলাম। আমি আশা করিনি যে এতো মানুষ আমাকে মেসেজ করবে। অনেকেই বলছিল যে তারাও পর্ন ছাড়ার চেষ্টা করছে। তাদের এই সত্যবাদিতা আসলেই সম্মান লাভের যোগ্য। অ্যাডিকশন থেকে বের হওয়ার প্রথম ধাপই হচ্ছে এমন কার কাছে নিজের অবস্থা খুলে বলা যে তাকে সাহায্য করতে পারবে। মুখে তালা মেরে বসে থাকলে অ্যাডিকশন থেকে বের হওয়া আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
(পর্ন অ্যাডিকশন থেকে মুক্তির যাত্রাটা কার কার জন্য অনেক দীর্ঘ হতে পারে। তাই আপনার এই যাত্রা যদি অসম্ভব বা কঠিন মনে হয়, তাহলে আমাদেরকে মেসেজ করুন। আমরা নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী আপনাকে সাহায্য করব।)
অনুবাদঃ Minhaz Mohammad