
তিন ধরনের পর্ন ইউজার এবং তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারণ
সাধারণত কোন বয়ঃসীমার ছেলেমেয়েরা পর্ন দেখে তা আমরা জানি। এদের কেউ মাঝেমধ্যে দেখে, আর বাকীরা অ্যাডিক্টেড। পর্ন ইউজারদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে এবং আমরা এটাও জানি যে এর কোনটাই ভালো না। আসুন, এই ইউজারদের লেভেল সম্পর্কে জানা যাক।
আপনারা হয়তো শুনেছেন, যারা অ্যালকোহলিক তাদের সামাজিক পানকারী(social drinkers), বা অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপানকারী(binge drinker), এমনকি স্ট্রেইট আপ অ্যালকোহলিক বলে লেবেল দেওয়া হয়।
একজন মানুষ কতটা অ্যালকোহলিক এর মাত্রা বোঝার জন্য এই টাইটেলগুলো দেওয়া হয়। একইভাবে, যারা পর্ন দেখে তাদের জন্যও এমন টাইটেল বানানো আছে। যেমনঃ
- i) রিক্রিয়েশনাল ভিউয়ার্স
- ii) সেক্সচুয়ালি কম্পালসিভ ভিউয়ার্স এবং
- iii) অ্যাট-রিস্ক ভিউয়ার্স
যেমনি মদ্যপানকারীদের লেভেলগুলো তাদের পানের মাত্রা এবং লেভেল অনুযায়ী ক্ষতিকর দিক নির্দেশ করে তেমনি কাজ করে পর্ন ইউজারদের লেভেলগুলো।
i) রিক্রিয়েশনাল ভিউয়ার্স
যারা অনেকদিন পরপর কোন বৃষ্টিস্নাত রাতে বা সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর অব্যাহতি পাওয়ার জন্য পর্ন দেখে তাদের বলা হয় রিক্রিয়েশনাল ভিউয়ার্স। এই ধরনের পর্ন ইউজাররা এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২-৩ ঘণ্টা পর্ন দেখে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা যৌন উত্তেজনা বা বিনোদন পাবার জন্য দেখে, এবং এটা তাদের সামাজিক জীবন বা রিলেশনশিপ এর বিকল্প কিছুনা।
যদিও ব্যাপারটা তেমন একটা ক্ষতিকারক মনে হচ্ছেনা, তবে এই গ্রুপের ভিউয়ার্সরা পুরোপুরি নিরাপদ না। এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে যে একজন পুরুষের সফটকোর পর্ন দেখার প্রবণতা তার স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ কমিয়ে ফেলে।
যদিও একজন রিক্রিয়েশনাল ভিউয়ার মাঝেমধ্যে পর্ন দেখেন, আসলে তার অবস্থা হল পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান করার মতো। যেকোনো মুহূর্তে পা পিছলে পর্নের সাগরে পরে যেতে পারেন। হয়ে যেতে পারেন পুরোপুরি অ্যাডিক্টেড।
ii) সেক্সচুয়ালি কম্পালসিভ ভিউয়ার্স
সেক্সচুয়ালি কম্পালসিভ ভিউয়ার্সরা তাদের যৌন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য পর্ন ইউজ করেন, যেমনঃ স্ত্রী না থাকা, ইরেকটাইল ডিসফাংশন ইত্যাদি।
সেক্সচুয়ালি কম্পালসিভ পর্ন ভিউয়ার্সরা তাদের জীবনের বিভিন্ন সমস্যা কিছু সময় ভুলে থাকার জন্য পর্নকে একটি সুবিধাজনক, ব্যক্তিগত এবং সস্তা উপায় হিসেবে বেছে নেয়।
যাইহোক, এই যৌন উত্তেজনা থেকে বেশীক্ষণের জন্য মুক্তি পাওয়া যায় না।
যখন একজন ভিউয়ার নিজের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য পর্ন দেখেন, তারা ক্রমেই নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে থাকে।
সবসময় একই কাহিনী হয়ে থাকে – বিভিন্ন সেক্সচুয়াল সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য পর্ন দেখার ফলে একজন ব্যক্তির সমস্যাগুলো বরং আরও বেড়ে যায়, যার ফলে তিনি প্রায়ই পর্ন দেখতে চান, আরও বেশি দেখতে চান, এবং আগের মজা পাবার জন্য আরও এক্সট্রিম পর্নের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
iii) অ্যাট-রিস্ক পর্ন ভিউয়ার্স
এই গ্রুপের ভিউয়ার্সরা সবচেয়ে ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে রয়েছে কারণ তারা সেক্সুয়াল সমস্যা ছাড়াও জীবনের অন্য যে কোন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য পর্ন দেখে। বিষণ্ণতা, কাজের চাপ, দুশ্চিন্তা, ভয় — সবকিছুর চিকিৎসা তারা নিজেরাই করে থাকে পর্ন ইউজের মাধ্যমে। সেক্সচুয়ালি কম্পালসিভ ইউজারদের মতো এরাও পর্ন দ্বারা সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে আরও বিশাল সমস্যার মুখে পতিত হয়। এ ধরণের মানুষেরা অন্তরঙ্গ কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজের অনুভূতি নিয়ে কঠিন সমস্যায় ভুগে, এবং একসময় শুধু কম্পিউটার স্ক্রিন ছাড়া অন্তরঙ্গ বলতে তাদের জীবনে কিছু থাকেনা।
সায়েন্স
কিভাবে পর্ন কারো জীবনে বিভিন্ন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং সমস্যার বিস্তার ঘটাতে থাকে?
এটি অন্যান্য অ্যাডিক্টিভ ড্রাগের মতোই আচরণ করে থাকে। যখন আপনি পর্ন দেখেন, যে পর্যন্ত আপনার দেখা ছবিগুলো আগের উত্তেজনা না দেয় সে পর্যন্ত আপনার শরীর এর সাথে অভ্যস্ত হওয়ার একটি পরিবেশ তৈরি করতে থাকে। তাই আপনি আরও বেশী সময় নষ্ট করে কাঙ্ক্ষিত ছবিগুলো খুঁজতে থাকেন যাতে আগের সেই সন্তুষ্টি ফিরে পাওয়া যায়।
যা আগে খুব কম সময় ব্যয় করে হয়ে যেতো তা পরিণত হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্লিক, সার্চ, বাছাই এবং দেখাদেখিতে। যত বেশী সময় আপনি পারফেক্ট ইমেজটা খুঁজে পেতে ব্যয় করেন, আপনার কাছের সম্পর্কগুলো, বিভিন্ন শখের কাজ এবং সামাজিক জীবনের প্রতি ততো বেশী অনীহা সৃষ্টি হতে থাকে। এটি আপনার জীবনে অশান্তি এবং হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, অসহ্য লাগে সব, এই বাজে অনুভূতিগুলো থেকে পরিত্রাণের জন্য আপনি আরও বেশী সময় পর্নে ব্যয় করেন। এভাবে ঘুরেফিরে বার বার আপনি অ্যাডিকশন সাইকেলে পড়ে যান। একজন রিসার্চার বলেনঃ
“…সন্তুষ্টি পাওয়া যায় এমন অনুভূতিগুলো নিমিষেই বিলীন হয়ে যায় এবং উদ্ভূত হতে চায় অন্য কোন পর্নোগ্রাফিক ইমেজ বা ভিডিও থেকে। সাইবার সেক্সচুয়াল ম্যাটেরিয়াল এর প্রতি অতিমাত্রার আসক্তি ধাবিত করে অত্যধিক ব্রাউজিং এর মাধ্যমে পারফেক্ট সেক্সচুয়াল ইমেজ, স্টোরি বা ইরোটিক ম্যাটেরিয়ালটির খোঁজে;যা সর্বোচ্চ উত্তেজনা, উদ্দীপনা এবং তীব্র কামপ্রবৃত্তি সৃষ্টির মাধ্যমে সম্পূর্ণ পরিতৃপ্তি দিয়ে থাকে।
যে মানুষগুলো রিক্রিয়েশনাল ইউজার ক্যাটেগরি থেকে সেক্সচুয়ালি কম্পালসিভ ইউজার বা অ্যাট-রিস্ক ইউজারে উন্নীত হয়েছেন তারা বলেছেন, অ্যাডিকশন সাইকেলে পড়ে তারা হতাশা, দুশ্চিন্তা, অতৃপ্তিতে ভোগেন, এমনকি নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এদের সবার ক্ষেত্রে এমনই হয়। রিসার্চারদের মতে সাধারণত অ্যাডিকশন সাইকেলে ঘুরপাক খাওয়া মানুষগুলো চারটি অ্যাডিকশন লেভেল অতিক্রম করে।
এই লেভেলগুলো হলঃ
- ১) অত্যধিক বিমুগ্ধ অবস্থা
- ২) কর্মে পরিণত করার অবস্থা
- ৩) কম্পালসিভ সেক্সচুয়াল বিহেভিয়ার ষ্টেজ বা যৌন চিন্তাগুলোকে বাস্তব রূপ দিতে বাধ্য হওয়ার মতো অবস্থা
- ৪) হতাশ/বেপরোয়া অবস্থা
ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষগুলোও এই একই স্টেজগুলো অতিক্রম করে।
অবশেষে বলা যায়- স্বাভাবিক জীবনযাপন এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে পর্ন একটি প্রতিবন্ধকতা। প্রথমদিকে একজন পর্ন ইউজার মনে করে সে খুব নিয়ন্ত্রণে আছে, কোন সমস্যাই নেই তার। তবে দিন অতিবাহিত হবার সাথে সাথেই দেখা বন্ধ করা কঠিন হয়ে যায়। পর্ন একটি মিথ্যা। মেকআপ, ক্যামেরার মুভমেন্ট এবং এডিটিং এর মাধ্যমে খুব সুন্দরভাবে পরিবেশন করা হয়, যা একজন নিয়মিত ব্যবহারকারীর কাছে স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। তবে পর্দার আড়ালের জগতটা অনেক বেশীই অমানবিক।
অনুবাদঃ Minhaz Mohammad