
ইন্সটাগ্রামে ‘নো নুডিটি’ পলিসি থাকার পরও সেখানে কেন এত পর্ন
ইন্সটাগ্রাম বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপস গুলোর একটি। এর ব্যবহারকারী প্রায় এক বিলিয়ন। শিশু, যুবক, বৃদ্ধ- সবার কাছেই এটি বেশ আকর্ষণীয় এক প্ল্যাটফর্ম। বলা হয়, ইন্সটাগ্রাম একটি ফ্যামিলি-ফ্রেন্ডলি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। বাস্তবিকই ইন্সটাগ্রামে সামাজিক মূল্যবোধ, পর্নের ক্ষতিকর প্রভাব, নারী ও শিশু পাচারের সাথে পর্নের সম্পর্কসহ বহু সমস্যা নিয়ে অনেক আলোচনা করা হয়।
.
টিনেজারদের মাঝে ফেসবুকের পর ইন্সটাগ্রাম সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া। ইন্সটাগ্রামের ‘নো নুডিটি’ নামে পলিসির কারণে বিশেষ কিছু বিষয় বাদে বাকি সব পর্নোগ্রাফিক ছবির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত এবং সেগুলো সেখানে দেয়া যায় না বলে দাবি করা হয়।[১]
কিন্তু ইন্সটাগ্রামে পর্ন দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এধরনের কোনো শব্দ লিখে সার্চ দিলেই সেগুলো বেরিয়ে আসে। এসব শব্দের হ্যাশট্যাগ দিয়ে অসংখ্য অশালীন পর্ন ছবি পোস্ট করা হয় যেগুলো ইন্সটাগ্রাম ফিল্টার করে না।
তাহলে, ইন্সটাগ্রামে এত শক্ত ‘নো নুডিটি’ পলিসি থাকার পরেও এমন হয় কি করে?
.
সবখানে পর্নের সহজলভ্যতা
=====================
বর্তমানে অনেক ফ্রি পর্নসাইট থাকায় পর্ন পারফর্মাররা আগের মতো বেশি অর্থ আয় করতে পারছে না। ইন্সটাগ্রাম, স্নাপচ্যাট এর মতো জায়গায় তাদের প্রচারণা চালিয়ে বিভিন্ন প্রিমিয়াম সাবস্ক্রাইবার সংগ্রহ করে তারা অর্থ আয়ের চেষ্টা করে।
.
Protect Young Eyes নামক একটি সংস্থা ইন্টারনেটে ক্ষতিকর ও অনুপযুক্ত কন্টেন্ট থেকে শিশুদের দূরে রাখতে কাজ করে। তারা ইন্সটাগ্রামে পর্ন থাকার ব্যপারে পরীক্ষা চালায়। [২] ‘নো নুডিটি’ পলিসি থাকার পরও ইন্সটাগ্রামে তারা পর্ন সম্পর্কিত কিছু হ্যাশট্যাগ পায়, যেগুলোতে পর্নের লিংক ছিল। এ ব্যপারে ইন্সটাগ্রামকে তারা জানালেও এসব প্রতিরোধে ইন্সটাগ্রাম কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ইন্সটাগ্রাম কেন এসব হতে দেয় সেই প্রশ্নের উত্তর সরাসরি জানা যায়নি। তবে এর পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে, যেমনঃ ১) এসব দ্বারা তারাও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, ২) এসব কন্টেন্ট রোধ করার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা তাদের হাতে নেই।
আমরা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো কোনো কথা বলছি না। আমরা শুধু সচেতনতা বৃদ্ধি আর ইন্সটাগ্রাম ইউজারদের সতর্ক করতে চাচ্ছি।
.
মূল সমস্যায় নজর না দেয়া
====================
অনুপযুক্ত কন্টেন্টের উপস্থিতির ব্যাপারে ইন্সটাগ্রাম ভাসা ভাসা স্বীকারোক্তি দিলেও তারা দায় এড়িয়ে গিয়েছে এবং এসব রোধকল্পে কোনো ব্যবস্থাও তারা নেয়নি। তাদের ওয়েবসাইটে সেফটি এবং প্রাইভেসি টিপস, শিশুদের কিভাবে ইন্সটাগ্রাম চালানোর সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে হবে তা নিয়ে বাবা-মাদের জন্য বিশাল গাইডলাইন দেয়া আছে। তাদের “Parents Guide to Instagram,” অর্থাৎ, বাবা-মাদের জন্য দেয়া নির্দেশিকায় পর্নোগ্রাফি শব্দটি পর্যন্তও তারা ব্যবহার করেনি। আর অনুপযুক্ত কন্টেন্ট রিপোর্ট এর ক্ষেত্রে শুধু হয়রানি, সহিংসতা এবং নিপীড়নের কথা বলা আছে।
.
ইন্সটাগ্রাম যুবসমাজে বহুল প্রচলিত, তাই এতে পর্নের উপস্থিতি একটি উদ্বেগের বিষয়।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা মতে পর্ন যেকোনো বয়সের মানুষের জন্যই ক্ষতিকর, চাই সে যুবক হোক কিংবা বৃদ্ধ। কিন্তু শিশুদের জন্য পর্ন আরও বেশি ক্ষতিকর। এটা জানা কথা যে পর্ন আসক্তি একজন ব্যক্তির চিন্তা ভাবনা, রুচি, যৌন জীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। ফলে ব্যক্তির মাঝে উগ্রতা আর পশুত্ব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে [৩] , এমনকি তার মস্তিষ্কেরও বিকৃতি ঘটে। শুধু তাই নয়, পর্ন শিশু কিশোরদের মানসিক রোগীতে পরিণত করে, [৪] তারা স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে পারেনা। পর্নের অন্ধকার জগতের বিষাক্ত ছোবল থেকে তাদের রক্ষা করতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
.
আরও কিছু কথা
============
আমাদের লেখা পড়ে ভাববেন না যে আমরা ইন্সটাগ্রাম বিরোধী। আমরা মনে করি একে আমাদের জীবনে ভালো কাজে লাগাতে পারি।
কিন্তু পর্নের কারণে আমরা বিশেষ করে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। ছোট বয়সে পর্নের নীল অন্ধকারে হারিয়ে গেলে আমাদের সন্তানেরা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। তাদের মাঝে ভয়ঙ্কর সব যৌন রোগ, সমকামিতা, ব্যভিচার, উগ্র যৌনতা, হিংস্রতা ছড়িয়ে যাবে। পশুর মত জীবনে তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়বে! শারীরিক দুর্বলতা, মানসিক সমস্যা, পুরুষত্বহীনতা, সন্তান জন্মদানে অক্ষমতার মতো ভয়াবহ সমস্যাগুলো তাদের মাঝে প্রকাশ পাবে। পর্ন এতটা ক্ষতিকর হওয়ার পরও কি আমরা এর বিরোধিতা করবো না? ইন্সটাগ্রামে পর্ন বন্ধে আমাদের ভাবার এখনই সময়।
.
যদিও ইন্সটাগ্রাম এ বিষয়ে আপাতত তেমন কিছু করছে না, কিন্তু আমরা নিজেরা তো নিজেদের এবং পাশাপাশি অন্যদের এর ক্ষতি থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করতে পারি! শালীনতা, সুশিক্ষা, দায়িত্বশীলতা এবং জনসচেতনতা আমাদের আগামীর পৃথিবীকে সুন্দর ও ভালবাসাময় করে তুলবে। সত্যিকারের মানুষ হিসেবে আমাদের গড়ে তুলবে। আওয়াজ তোলার সময় এখনই!
.
অনুবাদ: #teamFAD
(রেফারেন্স কমেন্টে)