
ঝরে পড়ার গল্প ০১
প্রতিদিনের মতো আজকের সকালটাও খুব বিদঘুটে লাগছে শান্তর কাছে। অলসতার ভরে হালকা করে চোখটা খুলে দেখে চারিপাশ ঝাপসা লাগছে। কয়টা বাজে কে জানে, হয়তো আজো কলেজটা মিস যাবে। এই ভাবতে ভাবতে হঠাৎ শান্তর মা এসে জানালার পর্দা সরিয়ে দিলো। সাথে সাথে একগাদা সূর্যের আলো এসে পড়লো শান্তর মুখে। এই, ওঠ-ওঠ-ওঠ। তোর কলেজ কয়টায়? কলেজে যাবি না?
আলোর মাঝে পিট পিট করে তাকাতে তাকাতে শান্ত বলল,- মা, প্লিজ যাওত। আজকে ভাল্লাগছেনা।
-কবে ভাল্লাগে তোর? এভাবে ক্লাস মিস করতে থাকলেতো ফাইনালে আবার আণ্ডা পাড়বি। এবার পরীক্ষায় খারাপ করলে আমি আর যাচ্ছি না তোর ক্লাস টিচারের সাথে দেখা করতে! এই বলে চিল্লাতে চিল্লাতে মা চলে গেল।
দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে, এক হ্রাস হতাশা নিয়ে বিছানা থেকে উঠল শান্ত। শরীরটা মেজ মেজ করছে। হেলে দুলে বাথরুমে গিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে করতে হঠাৎ মনে পড়লো, আজতো সাইক্রিয়াটিস্ট এর সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। কি বলবো তাকে? শেষবার অনেক প্রমিস করে মোবাইলটা পেয়েছিলাম। আজ কি হয় আল্লাহ ই জানে।
শান্তর বয়স ১৮। গত ৭ বছর ধরে সে পর্ন অ্যাডিক্টেড। তবে গত ৩ বছরে তার অ্যাডিকশন মারাত্মক আকার ধারণ করে। এই ৩ বছর ধরে প্রতিদিন সে অন্তত ৫ ঘণ্টা করে পর্ন দেখছে।
প্রথম দিকে খুব ভাল্লাগতো। মনে হতো কতো সহজেই এমন নগ্ন মেয়েদের দেখা যায়। কখনো বুঝিনি এ মজাই আমার জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। আজ আয়নার সামনে দাঁড়ালে আমার নিজের চেহারা দেখে নিজেই থমকে যাই। ৭০ বছরের বুড়োর মতো লাগে নিজেকে। কোন প্রডাক্টিভ কাজ করতে ভালো লাগেনা। প্রতি রাতেই আমি ঘুমানোর আগে পর্ন দেখা শুরু করি। একটার পর একটা পেইজ খুঁজতে থাকি, চাই আগের চেয়ে বেশী উত্তেজনাকর কিছু দেখতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যায়… মাঝেমাঝে আমি ঘুমানোর কথা ভুলে যাই…
বিনিদ্র প্রহর শেষে সেই একই হতাশার গ্লানি নিয়ে আমি ঘুম থেকে উঠি। আমার কারো সাথে মিশতে ভাল্লাগেনা। গত ৩ মাসে আমি কয়েকবার সুইসাইড এটেম্পট নিয়েছি। প্রতিবার শুধু মায়ের কথা চিন্তা করে ফিরে এসেছি।
সাইক্রিয়াটিস্ট বললেন,- আপনার সুইসাইড এটেম্পট নেয়ার ঘটনা কি বাসার কেউ জানে?
-না। শুধু রাহিদকেই বলেছি।
এমনটাই কথোপকথন হচ্ছিল সাইক্রিয়াটিস্ট এর সাথে প্রথম অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর দিন। রাহিদ, শান্তর বন্ধু। কলেজে শান্তর অদ্ভুত আচরণ এবং তার শারীরিক পরিবর্তন দেখে সে একদিন শান্তকে জিজ্ঞেস করে,
-কি হয়েছে তোর? আমাকে একটু খুলে বলবি? তুই এখন আর আগের মতো আর খেলতে আসিস না। কলেজেও ইরেগুলার। কেন? আমাকে বল। আমি কাউকে বলব না।
শান্ত, রাহিদকে সবকিছু খুলে বলল। সব শুনে রাহিদ, সাইক্রিয়াটিস্ট আব্দুর রহিম এর কথা জানালো, যিনি সম্পর্কে রাহিদের মামা হন। রাহিদ তাকে সব বলে একদিন শান্তকে তার চেম্বারে নিয়ে গিয়েছিল।
আজ অব্দুর রহিমের সাথে দ্বিতীয় অ্যাপয়েন্টমেন্ট। অবস্থার তেমন একটা উন্নতি করতে পারেনি সে। তাই শেষবারের প্রমিস অনুযায়ী তার মোবাইলটা সে সাবমিট করে দেয়। কারণ সে রাতে মোবাইলেই বেশী পর্ন দেখত। এভাবে রাহিদের মামার উপদেশ অনুযায়ী সে বাসার ইন্টারনেট থেকে শুরু করে পর্ন দেখার যায় এমন যতো ডিভাইস তার কাছে ছিল সব জমা দিয়ে দেয়।
৬ মাস পর…
সময়ের সাথে শান্ত পর্নোগ্রাফি অ্যাডিকশন থেকে মুক্তি পায়। “নিউরোপ্লাস্টিসিটি”(জানতে পড়ুন পর্নের ব্রেইন ইফেক্ট ০২) অনুযায়ী তার ব্রেইন ঠিক হয়ে গেলেও অন্যদিক দিয়ে বিশাল ক্ষতি হয়ে যায়। অতিরিক্ত মাস্টারবেট করার ফলে তার ইরেক্টাইল ডিসফাংশন হয়। এ সমস্যা ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। হয়তো সে আর কখনো বাবা হতে পারবে না।
গল্পটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখা হয়েছে। শুধু একটা বার চিন্তা করুন, শান্তর মতো এমন অনেক ছেলেরাই আজ ইরেক্টাইল ডিসফাংশন এর স্বীকার।