বিকৃত যৌনাচার ও এর প্রতিকার

বিকৃত যৌনাচার ও এর প্রতিকার


বর্তমান যুগে নগ্নতার ব্যাপক প্রসার আমরা দেখতে পাচ্ছি। যতই দিন যাচ্ছে, মানুষের মধ্য থেকে লজ্জা উঠে যাচ্ছে। আপনারা চিন্তা করুন, আমাদের দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন শিক্ষিকা পাঠ্যবইয়ে “ও-তে ওড়না” কেন লেখা হলো, এ নিয়ে টকশোতে আফসোস করছেন। অথচ তিনি নিজেও একজন নারী। এই যে নির্লজ্জ সমাজ গড়ার প্রয়াস, এর সাথে বিকৃত যৌনাচারের একটা সম্পর্ক আছে। কারণ, লজ্জা না থাকলেই বিকৃত যৌনাচার করা সম্ভব। এর অধিকার নিয়ে কথা বলা সম্ভব।

একটা মুসলিম প্রধান দেশের বুদ্ধিজীবীদের একটা অংশ এর অধিকার নিয়ে কথা বলছে। অনেকে কথা না বললেও, নীরবে এ দাবী সমর্থন করছে। তাদের কথা শুনে আপনারা অনেকেই হয়তো অবাক হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আপনারা যদি তাদের অতীত দেখেন, তারা কাদের সাথে চলে, কোথা থেকে পড়াশুনা করেছে—বিষয়গুলো ঘেঁটে দেখেন, তখন আর আপনারা অবাক হবেন না। বুঝতে পারবেন, তাদের মস্তিষ্ক বাংলাদেশ থেকে না, নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে পশ্চিম থেকে।

বিশিষ্ট আলেম ও গবেষক, মূসা আল হাফিজ হাফি. ট্রা*জেন্ডার মুভমেন্ট নিয়ে এক সেমিনারে [১] বলেছেন,
বিকৃত যৌনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলা দরকার ছিল আরও এক শতাব্দী আগে থেকে। কিন্তু আফসোস, আমরা তখন ঘুমিয়ে ছিলাম। এখনও যে পুরোপুরি জাগ্রত সেটা বলা যাবে না। এখন আমরা মধ্যরাত্রিতে আছি [২]।

বিকৃত যৌনাচারের ইতিহাস

মুসলিম হিসেবে আমরা সবাই জানি, মানব সভ্যতায় বিকৃত যৌনাচারের সূচনা হয়েছিল সেই লূত আ.-এর সময়কাল থেকে। তখনই ইতিহাসে প্রথম স*কামীদের উদ্ভব হয়েছিল। তাদের যে করুণ পরিণতি আল্লাহ গোটা মানবজাতিকে দেখিয়েছিলেন সেই ঘটনাও আমরা কুরআনে পড়ি। 

কিন্তু বর্তমানে বিকৃত যৌনাচার শুধু স*কামিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। প*গ্রাফি ও অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে এতে যুক্ত হয়েছে অনেক ডাল-পালা। এখনকার বিকৃত যৌনাচারগুলোর সাথে আড়াই হাজার বছর আগের, গ্রিক মিথোলোজি-এর কিছু মিল আছে। তখন সেগুলো স্থান পেয়েছিল গল্প-উপন্যাস-কাব্য আর শিল্পচর্চায়। মায়ের সাথে ছেলে, মেয়ের সাথে বাবার যৌনসম্পর্কের অশ্লীল সব গল্প ও কল্পকাহিনী তখনও ছিল।

আসুন, এবার আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই, গত শতাব্দীর ৩ মানব শয়তানের সাথে, যারা সারাবিশ্বে বিকৃত যৌনতা ছড়িয়ে দিয়েছে।

১) সিগমান্ড ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯)

গত শতাব্দীতে বিশিষ্ট ইহুদি নিউরোলজিস্ট সিগমান্ড ফ্রয়েড প্রথম মানুষের ব্যক্তিত্বকে যৌনতার ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করে। তার মতে শিশুকাল থেকেই ৫ ধাপে মানুষের মধ্যে যৌনতার বিকাশ ঘটে [৩]। তার যৌনতা সম্পর্কিত তত্ত্বগুলোতে গ্রিক মিথোলোজির ব্যাপক প্রভাব ছিল। সে পারিবারিক সম্পর্কগুলোকেও যৌনতার ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করেছিল। ছেলেরা মায়ের প্রতি এবং মেয়েরা বাবার প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করে ইত্যাদি।

ফ্রয়েডের যৌনতা নিয়ে দর্শনের অল্প কিছু কথা পড়েই আপনারা বুঝতে পারছেন, এই আইডিয়াগুলো কতোটা বিকৃত। কিছু পশ্চিমারা তার প্রতিটা তত্ত্বকে বাইবেলের মতো মানা শুরু করে। ধর্মের যে শূন্যতা পৃথিবীতে দেখা দিয়েছিল, সেখানেই এই জঘন্য তত্ত্বগুলো প্রবেশ করতে থাকে। এগুলো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেখা হয় গবেষণাগার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ফলে পুরো পৃথিবীতেই শিক্ষিত মানুষের মনস্তত্ত্বে পরিবর্তন আসতে থাকে।

২) আলফ্রেড কিনজি (১৮৯৪-১৯৫৬)

ফ্রয়েডের জীবনকালেই আরেক যৌনতার কাণ্ডারির উদ্ভব ঘটে। যার নাম, আলফ্রেড কিনজি। আমেরিকান এই সেক্সোলজিস্ট, ফ্রয়েডের তত্ত্বে নতুন মাত্রা যোগ করেন। মানুষের ব্যক্তিত্বকে ব্যাখ্যা করেন স*কামিতার ভিত্তিতে [৪]। ১৯৪৮ সাথে তার দুটো বই “Sexual Behavior in The Human Male” ও “Sexual Behavior in The Human Female” আবার পৃথিবীকে নতুনভাবে নাড়া দেয়। সে-ই প্রথম মাস্টারবেশন-কে বৈজ্ঞানিকভাবে উপকারী প্রমাণ করে। যা ছিল সম্পূর্ণ ধোঁকা। কিন্তু আফসোস, এখনও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সেক্সোলজিস্টরা এ তত্ত্ব মানেন। এর ওপর ভিত্তি করেই দাঁড়িয়ে আছে বর্তমান ট্রিলিয়ন ডলারের প*গ্রাফি ইন্ডাস্ট্রি।

৩) জন মানি (১৯২১-২০০৬)

সাইকোলজিস্ট জন মানি হচ্ছেন, “মনে মনে” তত্ত্বের জনক। শরীফ-শরীফার গল্প যারা পড়েছেন, তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। হ্যাঁ, তিনিই মানুষকে ছেলে হয়েও নিজেকে মেয়ে ভাবা এবং মেয়ে হয়েও নিজেকে ছেলে ভাবা শিখিয়েছেন। তার মতে, সব সমস্যার মূল, সহজাত যৌনতা বাধাগ্রস্ত হওয়া। অর্থাৎ যৌনতাকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। যার যা খুশী সে সেটা পরবে। নিজেকে যেভাবে খুশী সেভাবে প্রকাশ করবে। যৌন আনন্দের অনুভূতি যে চরিত্রে লাভ করবে, সেখানেই তার মুক্তি। মানে সে স*কামিতাকে আরও নরমালাইজ করার জন্য ট্র*জেন্ডারের কন্সেপ্ট নিয়ে এসে খেলা আরও জমিয়ে দিয়েছে। 

এর পর থেকে তো পশ্চিমারা আকাশে উড়ছে আর উড়ছে। এদিকে সমাজ, প্রজন্ম, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কার কি আসে যায়। তারা যা চেয়েছে, বিশ্বে সেটাই হচ্ছে। শিক্ষিত মানুষদের, বুদ্ধিজীবীদের তারা কন্ট্রোলে নিয়ে এসেছে। মিডিয়াও কন্ট্রোলে। তারা নিজেরাও ডুববে, আমাদেরও ডুবাবে। এটাই তাদের মিশন। দেখুন, শয়তানেরও কিন্তু একই মিশন। এজন্যই এ ৩ ব্যক্তির নাম দিয়েছি, গত শতাব্দীর ৩ মানব শয়তান।


বিকৃত যৌনাচারের ধরণ

হস্তমৈথুন ও স*কামিতা যে বিকৃত যৌনাচার মধ্যে অন্যতম, এটা বুঝতে খুব বেশি জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। অথচ কোথাও প্যারাফিলিক ডিসঅর্ডার (Paraphilic disorder) বা বিকৃত যৌনচাহিদার সমস্যার লিস্ট-এ এগুলো পাবেন না। কারণ, যারা প*গ্রাফি ইন্ডাস্ট্রি চালায়, একাডেমিক ওয়ার্ল্ড-এ তারাই নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর হস্তমৈথুনের ওপরই প*গ্রাফি ইন্ডাস্ট্রি টিকে আছে। স*কামিতার ওপরও অনেক ইন্ডাস্ট্রি টিকে আছে। সেই বিষয় নিয়ে অন্য কোনোদিন লিখব ইনশা আল্লাহ।

যা-ই হোক, বর্তমানে প*গ্রাফির কারণে হস্তমৈথুন ও স*কামিতা ছাড়াও, নানান ধরণের প্যারাফিলিক ডিসঅর্ডার বেড়ে যাচ্ছে। কিছু ডিসঅর্ডার হল [৫]-

ফেটিশিজম (Fetishism): কোনো নির্দিষ্ট বস্তু বা শরীরের অংশের প্রতি অস্বাভাবিক যৌন আকর্ষণ।

পেডোফিলিয়া (Pedophilia): শিশুদের প্রতি যৌন আকর্ষণ।

ভয়েরিজম (Voyeurism): অন্যদের ব্যক্তিগত বা যৌন কর্মকাণ্ড দেখার প্রতি যৌন আকর্ষণ।

এক্সিবিশনিজম (Exhibitionism): নিজের যৌনাঙ্গ বা শরীর অন্যের সামনে প্রকাশ করে যৌন তৃপ্তি লাভের চেষ্টা।

ফ্রোটিওরিস্টিক ডিসঅর্ডার (Frotteuristic Disorder): অন্যের অগোচরে তার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় স্পর্শ করে যৌন উত্তেজনা লাভ করা।

স্যাডিজম ও ম্যাসোসিজম (Sadism & Masochism): অন্যকে শারীরিক বা মানসিকভাবে কষ্ট দিয়ে বা নিজে কষ্ট পেয়ে যৌন আনন্দ পাওয়া।

ট্রান্সভেস্টিক ফেটিশিজম (Transvestic Fetishism): বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরে যৌন উত্তেজনা লাভ করা।


বিকৃত যৌনাচার থেকে মুক্তি

বিকৃত যৌনাচার থেকে মুক্তির জন্য আমার কিছু সাজেশন-

তাকওয়া: তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি বৃদ্ধি করা।

প*গ্রাফি না দেখা: সফটকোর ও হার্ডকোর সব ধরণের প*গ্রাফি থেকে বেঁচে থাকা।

সাইকোথেরাপি ও কাউন্সেলিং: এল**বিটি এজেন্ডা সাপোর্ট করেন না এমন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া।

কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT): চিন্তাধারা ও আচরণে পরিবর্তন আনা।

সঠিক যৌনশিক্ষা: বিয়ের আগে অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে যৌনতা সম্পর্কিত সঠিক বিষয়গুলো জেনে নেয়া।

ঔষধ: তীব্র মানসিক অসুস্থতা থাকলে ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা।

ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য, জাযাকাল্লাহ।


Md. Shadek Hossain Minhaz

Mentor, Author

Co-Founder & CEO, LustManager

.

রেফারেন্স: 

[১] পশ্চিমা দর্শনে যৌন বিকৃতি ও ট্টান্সজেন্ডার তত্ত্বের বুনিয়াদ -১: শায়খ মুসা আল হাফিজ

[২] পশ্চিমা দর্শনে যৌন বিকৃতি ও ট্টান্সজেন্ডার তত্ত্বের বুনিয়াদ: পর্ব-২: শায়খ মুসা আল হাফিজ

[৩] Freud's Stages of Human Development: 5 Psychosexual Stages (simplypsychology.org)

[৪] Kinsey scale - Wikipedia

[৫] 5 Specified Paraphilic Disorders
.

📢 নতুন অফার!

আমাদের অভিজ্ঞ মেন্টর মো: সাদেক হোসেন মিনহাজ "১ বছর পর্ন থেকে মুক্ত থাকার পরিকল্পনা" সম্পর্কে বিস্তারিত একটি লাইভ সেশনে আলোচনা করেছেন।

প্রায় ২ ঘন্টার লাইভ সেশন-এর ভিডিওটি দেখার পর আপনিও বিশ্বাস করবেন, আপনার দ্বারা ১ বছর টানা পর্ন থেকে মুক্তি সম্ভব।  

সেশনটিতে একটি এক্টিভিটি PDF ও শেয়ার করা হয়েছিল। যেটা প্রিন্ট করে আপনার জন্য ১ বছর পর্নমুক্ত থাকার প্ল্যান করতে পারবেন। ইনশা আল্লাহ।

📢 সেশন-এর ভিডিওটি + এক্টিভিটি PDF ফ্রি-তে পেতে চান?

তাহলে যুক্ত হন LustManager এর Comprehensive Care (Premium) সাবসক্রিপশন-এ।  

📅 অফারটি চলবে আগামী ২৫ আগষ্ট ২০২৫ পর্যন্ত